বাংলাদেশ রাজশাহী

বাদাম বিক্রেতা থেকে এলজিইডি’র ঠিকাদার মাফিয়া মান্নান

127882 lg 696x571 1
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,রাজশাহী : আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের কল্যাণে পাওয়া দুই কোটি টাকা মূল্যের পাজেরো গাড়িতে চলাফেরা করেন ঠিকাদার আব্দুল মান্নান। ছেলে সুমন আলী চড়েন নিশান ব্র্যান্ডের গাড়িতে। রাজধানীতে দুই মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা–যাওয়ার জন্য রয়েছে ৭০ লাখ টাকা দামের একটি গাড়ি। সব মিলিয়ে অন্তত শতকোটি টাকার সম্পদ তাঁর।

অভিযোগ রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডিতে সিন্ডিকেট আর দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল সম্পদ গড়েছেন আব্দুল মান্নান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২ আসনের সাবেক এমপি জিয়াউর রহমানের ওপর ভর করে এলজিইডির ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এলজিইডিতে তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।

আব্দুল মান্নানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নে। বসবাস করেন রাজশাহী মহানগরীর উপশহরে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল মান্নান একসময় বাদাম বিক্রি করতেন। এটিই ছিল তাঁর আয়ের উৎস। বাঙ্গাবাড়ীর বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব সেন্টু বলেন, হাটবাজারে, মেলায়, তাফসির মাহফিল ও ইসলামি জলসার জনসমাগমে স্থানে বাদাম বিক্রি করতেন আব্দুল মান্নান। তিনি নিজেও তাঁর কাছ থেকে বাদাম কিনে খেয়েছেন বলে জানান সেন্টু। এ ছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেও আব্দুল মান্নানের এককালের এই পেশা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল মান্নান এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে অথবা প্রভাব খাটিয়ে গত দুই দশকে নামে–বেনামে হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়েছেন। কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। আবার কখনো কাজ শেষের আগেই বিল তুলে নিয়েছেন। লাখ টাকার কাজ করে নিয়ম–বহির্ভূতভাবে কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাদাম বিক্রির পেশা ছেড়ে গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলামের মালিকানাধীন সেচপাম্পের দেখাশোনা করতেন আব্দুল মান্নান। পরে ওই বিএনপি নেতার লাইসেন্সে ঠিকাদারি শুরু করেন। বিএনপির সাবেক এমপি সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গেও সখ্য ছিল। বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠ এই আব্দুল মান্নান ২০০৮ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এমপিকে উপহার হিসেবে দেন একটি মাইক্রোবাস। এমপি জিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় ঠিকাদারির মাফিয়া হয়ে ওঠেন মান্নান। সব বড় কাজের ঠিকাদারি তিনিই পেতেন। ধীরে ধীরে এলজিইডিতে আধিপত্য বিস্তার করেন। শুরু করেন এলজিইডির দরপত্র নিয়ন্ত্রণ। এলজিইডির এই মাফিয়া শুধু ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ নয়, নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশল ও সহকারী প্রকৌশলীদের বদলিও হতো তাঁর ইশারায়। এলজিইডির অনেক কর্মকর্তা সুবিধাজনক উপজেলায় বদলির জন্য তদবির করেন আব্দুল মান্নানের কাছে—এমন তথ্য পাওয়া গেছে একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে।

আরও পড়ুন:

সড়কের মাফিয়া ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল মান্নানের গোমস্তাপুর উপজেলার জাতাহারা এলাকায় শিউলী রাইস মিল, বঙ্গপুরে সাথী ও মান্নান নামে দুটি ইটভাটা, মহারাজপুরে আলীজ ড্রিম ফিলিং স্টেশন নামে একটি পেট্রলপাম্প, রাজশাহী মহানগরীর উপশহরে স্যাটেলাইট স্কুলের পাশে ১০তলা ভবন, রাজশাহীতে একাধিক প্লট, ঢাকায় ফ্ল্যাট, গোমস্তাপুরে জমিসহ বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। তিনি যেই পাজেরোতে চড়েন সেটি এমপি জিয়াউর রহমানের নামে আসা ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি। এমপির কাছ থেকে গাড়িটি তিনি কিনে নেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২ আসনের এমপি জিয়াউর রহমানও পালিয়ে যান। এর পর থেকে আব্দুল মান্নানের চলমান প্রকল্পের মালামাল লুট হয়েছে। অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ।

অনুসন্ধান আরও জানা গেছে, আব্দুল মান্নানের ঠিকাদারি লাইসেন্সে নাম রয়েছে মো. আব্দুল মান্নান। তাঁর ছেলে সুমন আলীর লাইসেন্সটি আলীজ ড্রিম করপোরেশনের নামে। কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মমিনুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেলিম রেজা, ঢাকার এমএমবিইএল, নিট বসুন্ধরা নামের লাইসেন্সও ব্যবহার করেন তিনি। বর্তমানে ২২ কোটি টাকায় শিবগঞ্জ উপজেলার পাগলা নদীর ওপর কালুপুর সেতু নির্মাণকাজ করছেন আব্দুল মান্নান। ৬৩ কোটি টাকার বাঙ্গাবাড়ী ও দলদলী ইউনিয়নের মহানন্দার ওপর সংযোগ সেতু নির্মাণ করছেন তিনি। হরিপুর ব্রিজের কাজ আব্দুল মান্নানের লাইসেন্সে। তবে এই কাজটি বাস্তবায়ন করছেন কৃষক লীগ নেতা রুহুল আমিন রাসেল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মান্নানের। একসময় বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে সখ্য গড়েন আওয়ামী লীগের এমপি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময় এলজিইডিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। এখনো তাঁর ইশারার বাইরে কিছু হয় না। এলজিইডিতে তাঁর একাধিপত্যের কারণে অনেক ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এত সম্পদের উৎস জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত। দুটি ইটভাটা করেছি সেটিও ১৮ বছর আগে। আমার অটোরাইস মিল নাই। রাজশাহীর ১০তলা ভবন আমার একার নয়, এটি যৌথ মালিকানার। পেট্রলপাম্প আছে। বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে বিনিয়োগ করেছি, সেটির বিপরীতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ২৩ কোটি টাকা ঋণ আছে। ২০২১ সালে এমপি জিয়াউর রহমানের পাজেরো গাড়িটি কিনেছি ৪৬ লাখ টাকায়। দুই মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করে ভাড়া বাড়িতে থেকে। ২৯ বছর ধরে ঠিকাদারি করছি, আমি টেন্ডারবাজি বা সিন্ডিকেট করিনি।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *