বাংলাদেশ ঢাকা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন ৮ নভেম্বর

f1 2411031622
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। শারীরিক অবস্থাসহ সবকিছু ঠিক থাকলে ৮ নভেম্বর ‘লং ডিসট্যান্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ লন্ডন যাচ্ছেন তিনি। তার চিকিৎসার কাজে সহযোগিতার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডের ৭ চিকিৎসক এবং নার্স, সহকারী ও স্বজনসহ ১৬ জন তার সঙ্গে যাচ্ছেন। সবারই ভিসা হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া প্রথমে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার পর যাবেন যুক্তরাষ্ট্র অথবা জার্মানির মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল সেন্টারে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে এমন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে যেখানে সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে। প্রথমে ম্যাডামকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে স্টে-ওভারের পর মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল সেন্টার যে দেশে আছে সেখানে নেওয়া হবে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ম্যাডামের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স ও স্বজনদের মধ্যে যারা যাবেন তাদের নামের তালিকাও দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের ৭ চিকিৎসক যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. নূর উদ্দিন, প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিক, ডা. জাফর ও ডা. আল মামুন। এ ছাড়া যাচ্ছেন ৩ নার্স। আরও যাচ্ছেন প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি, দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত গৃহকর্মী ফাতেমা ও রূপা।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের টিমে দেশের বেশ ক’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী কার্ডিওলজিস্ট ডা. জোবাইদা রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ক’জন চিকিৎসকও রয়েছেন।
২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বেশ ক’বার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। করোনাক্রান্ত হয়ে ওই বছর ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভাল আসায় ওইদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল না আসায় ওই দিনই তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ জুন।
১১৫ দিন পর দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালে ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শরীরের একটি অংশের চামড়া ফোসকার মতো (চাকা) হয়েছিল। এ জন্য ২৫ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে তার বায়োপসি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৭দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরেন ওই বছর ৭ নভেম্বর। এর পর ১৩ নভেম্বর আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৮১দিন চিকিৎসা নেন তিনি। তখন হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি সিসিইউতে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া।
২০২২ সালের ৬ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, ইমেজিং, ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি ফাংশন টেস্ট, হার্টের টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করান খালেদা জিয়া। এর পর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তন আনেন। ১০ জুন রাত সোয়া ৩টায় বুকের ব্যথা নিয়ে চতুর্থ দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ১১ জুন এনজিওগ্রামের পর তার হার্টে ৩টি ব্লক ধরা পড়লে ওই দিনই একটি ব্লকে রিং পরানো হয়। পরদিন দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হৃদপি-ে ৩টি ব্লক পাওয়া যায়।

এর মধ্যে একটি ব্লকে রিং পরানো হয়। রিং পরানোর ক’দিন পর তাকে কেবিনে নেওয়া হয়। কেবিনে রেখেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চালায় মেডিক্যাল বোর্ড। এভারকেয়ার হাসপাতালে টানা ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে ২৪ জুন গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফিরেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পর ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে পরীক্ষা শেষে রাতেই আবার বাসায় ফিরেন তিনি। এর পাঁচ দিন পর ২৭ আগস্ট আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর ৩১ আগস্ট তিনি বাসায় ফিরেন।
২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার পর তিনি গুলশানের বাসায় ফিরে যান। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে ওইদিন রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিবিড় পর্যবেক্ষণে ৬ দিন চিকিৎসার পর ৪ মে আবার তিনি গুলশানের বাসায় চলে যান।

এর পর আবারও ১৩ জুন তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৫ দিন চিকিৎসা শেষে ১৭ জুন বাসায় ফিরেন। ৫৩ দিন পর ৯ আগস্ট আবারও চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওইদিনই হাসপাতালে ভর্তি হন। ৫ মাস ২ দিন পর এ বছর ১১ জানুয়ারি তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেন।
এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেদিনই তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফিরেন। এর পর ১৩ মার্চ এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একদিন পর ১৪ মার্চ তিনি বাসায় ফিরেন। ৩০ মার্চ দিবাগত রাত ৩টায় আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে ২ এপ্রিল বাসায় ফিরেন তিনি। এর পর ১ মে সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ২ মে রাতে তিনি বাসায় ফিরেন।
২১ জুন গভীর রাতে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১১ দিন চিকিৎসা শেষে ২ জুলাই সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া। ২৩ জুন তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। ৮ জুলাই খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৪৫ দিন পর ২১ আগস্ট গুলশানের বাসায় ফিরেন। এর আগে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের একদিন পর ৬ আগস্ট মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া।
উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলে দীর্ঘ ৮ বছর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে। তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই বছর ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রাজকীয় আমন্ত্রণে সপরিবারে ওমরা পালন করেছিলেন মা-ছেলে।
এর পর তারেক রহমানের সঙ্গে আর দেখা হয়নি মা খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির পর গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থানকালে করোনা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেশ ক’বার আবেদন করলেও আওয়ামী লীগ সরকার সে সুযোগ দেয়নি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করেছে বলে বিএনপি কার্যালয় সূত্র জানায়।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *