গুলিবিদ্ধ পা নিয়েই দোকানে কাজ করেন হাশেম


ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : ছাত্র আন্দোলনে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন আবুল হাশেম (১৬)। অর্থাভাবে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারেনি দরিদ্র পরিবার। এখন ক্ষতিগ্রস্ত পা নিয়েই দোকান কর্মচারীর কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণ সামলাতে হচ্ছে হাশেমকে। হাশেমের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চলাকালে পুলিশের ভয়ে ফুফাতো ভাইয়ের দোকানের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন হাশেম। পুলিশ সেই দোকানের শাটার খুলে গুলি করে। তখন ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে সেখান থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আবুল হাশেম বলেন, পুলিশের গুলিতে তারা দুজনই দোকানের ভেতরে লুটিয়ে পড়েন। একসময় তাদের নড়াচড়া দেখতে পেয়ে পুলিশ সদস্যরা আবার এসে রাইফেল তাক করে। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলে পুলিশ চলে যায়। দুজনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবিরের মৃত্যু হয়। পাঁচ দিন ভর্তি থাকার পর ছুটি পায় হাশেম। গুলিবিদ্ধ পা নিয়ে নান্দাইলে বাড়িতে আসে।
হাশেমের বাবা আবদুল হেলিম জানান, নিজের যৎসামান্য আয় ও ছেলের আয় মিলিয়ে সংসার চলছিল। কিন্তু জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার কিশোর ছেলেটি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়।
কিশোর আবুল হাশেম জানায়, সংসারের হাল ধরার জন্য চার বছর আগে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় ফুফাতো ভাই হুমায়ুনের মনিহারি দোকানে যোগ দেয়। গত ২০ জুলাই অন্যান্য দিনের মতো সে দোকানে বেচাকেনায় ব্যস্ত ছিল। ওই সময় দোকান থেকে কিছুটা দূরে প্রধান সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল যাচ্ছিল। সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা ওই মিছিলে ধাওয়া করে। তখন মিছিলকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। তার দোকানের কাছাকাছি পুলিশ সদস্যরা চলে এলে হাশেম ভয়ে দোকানের শাটার নামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তার ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবির দৌড়ে এসে দোকানে প্রবেশ করেন। এ সময় দোকানের বাইরে থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য শাটার উঠিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
হাশেমের বাবা আবদুল হেলিম জানান, ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে ছেলের পায়ের চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছেন। কিন্তু পুরোপুরি ভালো হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন, ছররা গুলি বের করতে হলে বেশ কটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। সেই ধকল তার কিশোর ছেলের শরীর নিতে পারবে না। ফলে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে হাশেম।
হুমায়ুনের দোকানটি এখন তার বড় ভাই হজরত আলী দেখভাল করছেন। সেই দোকানে ক্ষতিগ্রস্ত পা নিয়ে আবার কাজ শুরু করেছে হাশেম। বসে বসে দোকানে বেচাকেনা করে সে। পায়ে তীব্র যন্ত্রণা থাকলেও পরিবারের কথা ভেবে আবারও চাকরি নিতে হয়েছে তাকে। হাশেমের জন্য সরকারিভাবে সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তার বাবা হেলিম।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।