মাহবুবের চাতুরতায় প্রকল্পের কাজে ধীরগতি


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের মহাদুর্নীতিবাজ আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দোসর, অতি আস্থাভাজন ও সহযোগী হিসেবে ১৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রকল্পটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান মো. মাহবুব করিম। গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৩০ শে জুন ২০২৪ সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকলেও প্রকল্প পরিচালকের গাফিলতি, অবহেলা ও অদৃশ্য হাতের ছোয়ায় সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি প্রকল্পের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
দুর্নীতগ্রস্থ অন্য সকল প্রকল্পের মত চিরাচরিত নিয়ম মেনে প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে করে অত্যান্ত সুকৌশলে প্রকল্পের মেয়াদকাল ২ বছর বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন প্রকল্পটি শেষ করতে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মত কাজ সম্পন্ন করতে পারলেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিম সময়মত কাজ শেষ করতে না পারার সকল দায় ও দোষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দিলেন। এখানে প্রকল্প পরিচালক সুকৌশলে নিজের দোষ ও অবহেলাকে পাশ কাটিয়ে গেলেন। আসলে গভীর রহস্যময় গুপ্ত কৌশলটি হলো যতদিন এই প্রকল্পটি চলমান থাকবে ততদিন তিনি প্রকল্পের পিডি হিসেবে সম্মানিত হবেন, বেতন বোনাসসহ অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধাদি ভোগ করবেন।
২০২৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬১ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির সুক্ষ কৌশল হলো সুযোগ বুঝে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে নেওয়া। বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ম্যানেজারের দায়িত্ব থেকে সরকারের মহাদুর্নীতিবাজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় থেকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বটি বাগিয়ে নেন মো. মাহবুব করিম। গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পটির ১৬ টির মধে্য ১৪ টি কম্পোনেন্টের টেন্ডার আহবান করা হয়। তার মধ্যে ১ নং কম্পোনেন্ট টি হলো বাংলাদেশের জাতীয় করপাস উন্নয়ন। এই কাজের জন্য ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করলেও ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি মূল্যায়নে অকৃতকার্য ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
বাকি থাকলো শুধুমাত্র ১টি কোম্পানি। নিশ্চিতরূপেই দুর্নীতিবাজ সালমান এফ রহমানের ‘গিগাটেক- বেক্সিমকো কম্পিউটার কনসরটিয়াম লি.’ নামের সেই কোম্পানি পেয়ে গেলো ১৯ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকার কাজ। কোনো রকম প্রতিদন্ধিতাই সালমান এফ রহমানের কোম্পানিকে পরতে হলো না। আর যে ২ টি কোম্পানিকে কারিগরি মূল্যায়নে অকৃতকার্য করে দেয়া হলো তাদের মধ্যে ১টি ‘ড্রীম ৭১ বাংলাদেশ লি.’ নামের কোম্পানি ওই ১৪ টির মধে্য ৫ কোটি ১৪ লাখ ও ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ২ টি কাজ পেয়েছে। অথচ ১ নং কাজের জন্য এই কোম্পানি প্রাথমিকই অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে গেলো। এতেও ‘ড্রীম ৭১ বাংলাদেশ লি.’ এর কোনো আপত্তি নাই। ভাগ-বাটোয়ারা করে সবাই কম বেশি করে কাজ পেলেই হলো। ২ নং কম্পোনেন্ট হলো, বাংলা ওআরসি উন্নয়ন। কাজটি পেতে ৭ টি কোম্পানি টেন্ডার ড্রপ করে। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ৪ টি প্রতিষ্ঠানকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে দেয়।
বাকি ৩টির মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হন ‘ড্রীম ৭১ বাংলাদেশ লি.’ তাদের দেওয়া দর ছিলো ৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কিন্তু কাজ পেয়ে গেলো ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা দর দেওয়া প্রতিষ্ঠান ‘রেভী সিস্টেম এন্ড অপরটিয়া টেকনোলজি লি.’ নামে একটি কোম্পানি। বলা হলো কিউসিবিএস পদ্ধতিতে সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পায়নি। আর তাই এখানে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ৩ নং কম্পোনেন্টটি হলো ‘বাংলা বানান ও ব্যকরণ পরীক্ষক উন্নয়ন’। ‘ড্রীম ডোর সফট লি.’ নামে কোম্পানিটি এই কাজের জন্য ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দর দিলেও কাজ পেয়ে গেলো ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ৯৩ হাজার টাকা দর দেওয়া প্রতিষ্ঠান ‘রেভী সিস্টেম লি.’ এখানে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ। প্রায় ২ কোটি টাকা বেশি দর দিয়েও কাজ পাওয়ার কারণ কিউসিবিএস সিস্টেম। ৪ নং কম্পোনেন্টটি হলো ‘অনুভূতি বিশ্লেষন টুলস উন্নয়ন।
’ এই কাজের জন্য ৪ টি কোম্পানি দরপত্রে অংশগ্রহণ করলেও ‘ড্রীম ৭১ বাংলাদেশ লি.’ হয় সর্বনিম্ন দরদাতা। তাদের দর ছিলো ৩ কোট ৪৫ লাখ। আর ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দর দিয়ে কাজটি হাতিয়ে নেয় সালমান এফ রহমানের কোম্পানি ‘গিগাটেক- বেক্সিমকো কম্পিউটার কনসরটিয়াম লি.’। সালমান এফ রহমানদের কোম্পানিকে কাজ দিতে এখানেও ব্যবহার করা হয় কিউসিবিএস পদ্ধতি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের প্রতি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ পলকের সহযোগী প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিম, সালমান এফ রহমানদের স্বার্থ রক্ষা করতে তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি প্রকল্পের কাজে ধীরগতি এনেছেন যেন সময়বৃদ্ধি করে আরো ২ বছর তিনি প্রকল্প পরিচালক থাকতে পারেন। পিডি হিসেবে সকল ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে চান। সালমান এফ রহমানদের আরো সুযোগ দিতে চান। তাদের হাতকে আরো শক্তিশালী করতে চান। মহাদূর্নীবাজ পলকের দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করতে চান।
পিডি মাহবুব করিমের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মামুন অর রশীদ। তিনি দাবি করেন সে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে সেখানে তিনি বেতন পান। সেখান থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছেন। এই ছুটিতেই এখানে কন্সলটেন্ট হিসেবে ফুল টাইম কাজ করে মাসিক ৪ লাখ টাকা করে সম্মানী নেন। প্রকল্প পরিচালকের কাছে তার নিজে মাসিক বেতন, ভাতা, সম্মানী কত নেন বারবার জানতে চাইলেও তিনি বলেন, বলছি, জানাচ্ছি বলে সময়ক্ষেপন করছে। এমন প্রকল্প পরিচালক ও সহযোগিকে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিলে দেশের সম্পদ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের আত্মাও শান্তি পাবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।