২৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের ১৩ জন চট্টগ্রামের


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা :দেশে সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাসহ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ভেঙে দিতেই কোটা আন্দোল রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। ফলে বাধ্য হয়েই গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এরপর রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ২৪ সদস্য রয়েছেন। শুরু থেকেই এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেই এই বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গত রবিবার রাতে তিন উপদেষ্টার শপথ নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঞ্চল বৈষম্য নিরসন দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।
২৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ১৩ জনের জন্মস্থান চট্টগ্রাম বিভাগে। এই ১৩ উপদেষ্টার দপ্তর-উপদপ্তরেও তাদের নিজস্ব এলাকার ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগের রয়েছেন সাতজন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কেউ উপদেষ্টা পরিষদে নেই। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের একজন করে আছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা জেলা থেকে উপদেষ্টা হয়েছেন বেশি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপদেষ্টা পরিষদে এই অঞ্চল বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘শুধু একটা বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা; অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই! তার ওপর খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে!’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মস্থান চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের জন্মস্থানও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পৈতৃক নিবাসও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।
যদিও তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। একই জেলার যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের অধিবাসী। একই জেলার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পৈতৃক বাড়িও চট্টগ্রামে। বিয়ে ও পরিবার সূত্রে তিনি ঢাকার ধামরাইয়ের বাসিন্দা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে। সর্বশেষ উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া মো. মাহফুজ আলমের বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের জন্ম কলকাতায়। কলকাতা কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করে পরে তিনি ঢাকায় আসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার অধিবাসী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও একই জেলার। বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অধিবাসী। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ঢাকা জেলার বাসিন্দা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ঢাকার বাসিন্দা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বরিশাল বিভাগের একমাত্র উপদেষ্টা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের জন্মস্থান সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে। যদিও তিনি কর্মসূত্রে ময়মনসিংহে স্থায়ী। তাকে বাদ দিলে সিলেট বিভাগের একমাত্র উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আর গণশিক্ষা উপদেষ্টাকে সিলেটের বাসিন্দা ধরলে ময়মনসিংহ বিভাগেরও কোনো উপদেষ্টা নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ঢাকার অধিবাসী। খুলনা বিভাগ থেকে একমাত্র উপদেষ্টা হয়েছেন সেখ বশির উদ্দীন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।