যে কারনে আ’লীগ দেউলিয়া হলো


আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভি :
রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। যতদিন গেছে ততোই দেউলিয়া হয়েছে। পেশীশক্তি নির্ভর ক্ষমতা গড়ে তোলার কারনে মূলত তাদের এইসব সংকটকে সংকট মনে হইতো না। দলটির নেতা থেকে কর্মীরা পর্যন্ত শেখ হাসিনাই ‘অল ইন অল’ প্রপাগান্ডায় মুগ্ধ থাকতো। তারা বিশ্বাস করতো শেখ হাসিনাকে পরাজিত করা সম্ভব না। আওয়ামী লীগের তরফ থেকেও এইভাবে প্রচার প্রচারনা ব্রান্ডিং চলতো। এই ছিলো আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলটির গত এক দশকের রাজনৈতিক প্রচার ভাষা চর্চার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় এই ভাষা মূলত হয়ে উঠেছিলো ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’কে ঘিরে। এমনকি শেখ পরিবারের সদস্যদেরও মান অভিমান দ্বন্দ থাকলেও কথার শুরু ও শেষে হাসিনার নাম ব্যবহার না করলে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে সেইসব বিষয় মাথায় রেখেই চলতে হতো।মুজিববাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগে অঘোষিত ভাবে তৈরি হচ্ছিলো ‘হাসিনাবাদ’ । এইসব ক্রিয়াকালাপ যত স্ট্রং হয়েছে আওয়ামী লীগ ততো বিচ্ছিন্ন আর রাজনৈতিক ভাবে নিঃশেষ হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর খেয়াল করলে দেখবেন- তাদের নিজস্ব কোন রাজননৈতিক ভাষা নেই! যাস্ট কপি আর পেস্ট। মানে বিগত সময়ে বিএনপি যেভাবে তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম করেছে, যেভাবে আন্দোলন করে গেছে তারা যেন ঠিক সেই সব কিছুই এখন কপি আর পেস্ট করতে চাইছে। যার ফলাফল হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক পরাজয়ের পরও কিভাবে পরিবর্তিত সময়ের ভাষা আয়ত্ব করতে হবে, নিজেদের কোন পন্থায় প্রকাশ করতে হবে তার দিশা খুজে পাচ্ছে না। নেতৃত্ব, মিডিয়াসেল থেকে শুরু করে কর্মী এবং ‘ফেসবুক যোদ্ধাদের’ পর্যন্ত কোন নিজস্ব ভাষা নেই। এই যে নেই এর কারনই হলো আওয়ামী লীগ শোষন নিপড়ন আর ক্ষমতার দাপটে একদিকে যেমন নিজেদের রাজনীতি হাড়িয়ে ফেলেছে, অন্যদিকে লুটপাটের ধান্ধায় ব্যস্ত থাকা নেতা কর্মীদের শরীরে এতো চর্বি জমে গিয়েছে যে এখন সেই চর্বি কেটে সংগ্রামের ভাষা খুজে বের করাটা তাদের জন্য গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার মতো অবস্থা হবে।
আওয়ামী লীগের ভাই-ব্রাদারদের লেখাটেখা দেখে মনে হয়, এরা এখনো ভাবে ৫ আগষ্ট একটা দুঃস্বপ্ন। ঘুমটা ভেঙ্গে গেলেই দেখবে, সেই আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ…। শেখ হাসিনা প্রচন্ড দম্ভ নিয়ে বলে বেড়াচ্ছে- কারেন্ট বন্ধ করে দেই? পদ্মাসেতু থেকে টুস করে ফেলে দেই? শেখ হাসিনা পালায় না। কিংবা ওবায়দুল কাদের বলছে, পালাবো না… কোথায় পালাবো। হাসান মাহমুদ বলছে- বিএনপির মতো জঙ্গি সংগঠনের সাথে কিসের সংলাপ। কিন্তু রিয়ালিটি হচ্ছে, শেখ হাসিনা পালায়ে গেছে, ওবায়দুল কাদের নিরব হয়ে গেছে, হাসান মাহমুদ বিএনপিকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়…।
২০০৮ সালে দিনবদলের ইশতেহার নিয়ে আসা আওয়ামী লীগ সেই সময়ে ব্যপক জনসমর্থন অর্জন করেছিলো। প্রায় দেড় দশক পর তার কি পরিনতি হলো।
প্রচন্ড ক্ষমতার দম্ভ, চাটুকারিতা আর হিংস্র নেতৃত্ব একটা বৃহৎ দলের কি করুন পরিনতি তৈরি করতে পারে আওয়ামী লীগ তার একটা বড় উদাহরন হয়ে থাকবে রাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের জন্য।
লেখক : আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভি