সংবাদ এশিয়া

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সমুদ্র যোগাযোগ স্থাপন, উদ্বিগ্ন ভারত

2411151816
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কপঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পর পুনরায় পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। বুধবার (১৩ নভেম্বর) করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর মধ্যদিয়েই এ যোগাযোগ পুনর্প্রতিষ্ঠা পায়।

যা দুই দেশের মধ্যে নতুন করে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে এটি ভারতের নিরাপত্তা মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম সমুদ্রপথে যোগাযোগ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছল। নতুন এ সমুদ্র যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে চট্টগ্রামে ৩০০টি কনটেইনার নিয়ে আসে জাহাজটি।

পাকিস্তানের বাংলাদেশস্থ হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ একে ‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের এক বিশাল অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এই নতুন রুট সরবরাহ চেইনকে আরও সহজ করবে। পণ্য পরিবহনে সময় কমাবে এবং উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করবে’।

ভারতের নিরাপত্তা শঙ্কা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খুব কাছাকাছি হওয়ায় সরাসরি সমুদ্রপথে পাকিস্তানের উপস্থিতি ভারতের জন্য নিরাপত্তার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

এ বিষয়ে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানান, বাংলাদেশের দুটি প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর- দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। এতদিন এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কার্যক্রম সিঙ্গাপুর বা কলম্বোতে স্থানান্তরের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।

বর্তমানে সরাসরি সমুদ্রপথে পাকিস্তানি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় এই বিশেষজ্ঞের মতে, এই পরিবর্তন শুধু বাণিজ্যের জন্য নয়, বরং এই রুট ব্যবহার করে চোরাচালানের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে পাকিস্তানি জাহাজ আসা মানেই চোরাচালানের সুযোগ তৈরি হওয়া। এর ফলে অস্ত্র বা অবৈধ পণ্য বাংলাদেশ হয়ে ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে পৌঁছে যেতে পারে। এটি ২০০৪ সালের চট্টগ্রাম বন্দরের অস্ত্র আটকানোর ঘটনার মতো পরিস্থিতি আবারও সৃষ্টি করতে পারে’।

এ সময় তিনি ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পরিচালিত একটি অস্ত্র চালান ধরা পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। যা এখনও দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্র জব্দের ঘটনা। ওই সময় চীনা অস্ত্রের একটি বড় চালান ভারতের আসামের জঙ্গি সংগঠন উলফার কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল।

বদলে যাওয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে। এই সমুদ্র যোগাযোগ স্থাপনের ঘটনাকে নতুন সরকারের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজের নিয়মিত যাতায়াত হতে পারে মাদক বা অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যম।

একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে জাহাজটির বেশ কয়েকটি ৪০ ফুটের কনটেইনার প্রথমে নামিয়ে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়, যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারতের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ সহজ, যা নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

বাণিজ্যিক ও সামরিক দিক

নতুন এ সমুদ্রপথ খুলে দিলে পাকিস্তান থেকে তুলা ও অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশে আসবে। আর বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানি হবে। তবে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক এতই গভীর যে, পাকিস্তানের সঙ্গে এই সম্পর্ক সেই জায়গা দখল করতে পারবে না বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘আমান’ নামে আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়ায় প্রথমবার অংশ নিতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গত মাসে পাকিস্তানে একটি যুদ্ধজাহাজও পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব

চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর। এটি মিয়ানমারের সন্নিকটে অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে।

এই বন্দরটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই

চট্টগ্রামে পাকিস্তানি জাহাজের নিয়মিত উপস্থিতি অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ

এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, বিশেষ করে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা এবং অঞ্চলে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের সমস্যা।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ইতোমধ্যেই ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগের কারণ।

এখন সরাসরি পাকিস্তানের প্রবেশাধিকারের ফলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কৌশলগত দিকগুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভারতকে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিহত করার জন্য কৌশল তৈরি করতে হবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গুরুত্বপূর্ণ পরিপ্রেক্ষিত

ভারত এবং বাংলাদেশ একসময়কার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সম্পর্কের এক নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সময় চীন ও পাকিস্তানকে বাংলাদেশি বন্দর থেকে দূরে রাখার যে কৌশল ছিল, তা নতুন সরকারের অধীনে পাল্টে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে ভারতের নিরাপত্তা এবং প্রভাব রক্ষায় নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *