ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :  মহাসড়কের পাশে ছোট্ট টং দোকান। সেখানে চায়ের কেটলিতে পানি ফোটাচ্ছেন আব্দুল হামিদ। পাশে প্যারালাইজড স্ত্রী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। ওই দোকানেই তাদের থাকার
স্থান। নওগাঁ জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার হবে নওহাটা এলাকা। সেখান থেকে আরেকটু দূরেই ভীমপুর গ্রাম। সেখানেই নওগাঁ-রাজশাহী সড়কে আব্দুল কাদের চা বিক্রি করেন। দোকানে বসা কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষের কাছে জানতে চাই, বিপ্লব পরবর্তী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো কেমন আছে, দেশ নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন তারা? একজন বলেন, ‘আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি আমরা। খুব ভালোভাবে দেশ চলছে। আমরা শান্তিতে আছি। তবে দ্রব্যমূল্যের দাম কমালে আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন দরকার। তার আগে রাষ্ট্রসংস্কার জরুরি। আগের সরকার দেশের বারোটা বাজিয়েছে। কেউ ভালো ছিল না। না সাধারণ মানুষ, না ব্যবসায়ী, না বিরোধী দলের লোকজন। ইউনূস সরকার আসার পর অন্তত দলে দলে মারামারি নেই। পুলিশের ধরাধরি নেই।

চালের চাতাল আর আমের নগরী নওগাঁ। উত্তরের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর অন্যতম একটি জেলা এটি। দীর্ঘ স্বৈরশাসন আমলে রাস্তাঘাটের কিছু উন্নয়ন হলেও টেকসই উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি নওগাঁতেও। হাসিনা সরকারের চোক্ষুশূল ছিল বগুড়া। সেই বগুড়ার সঙ্গে লাগোয়া জেলাটিও সরকারের রোষানলে ছিল। এখানে আওয়ামী রাজনীতির প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী থাকলেও তারা কেবল নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিলেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জলিল নওগাঁর মানুষ। হাসিনা সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের আরেক এমপি মরহুম ইসরাফিল আলম। এসব নেতা জেলার নেতৃত্ব দিলেও উন্নয়নে তাদের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। মরহুম আব্দুল জলিল তার নামে একটি পার্ক করে নিজেকে জীবিত রাখার চেষ্টা করেছেন। তার নিজস্ব কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছিলেন সেই সময়। বতর্মানে তার ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন দেখাশোনা করছেন। পিতার মৃত্যুর পর জন নিজেও সংসদ সদস্য ছিলেন নওগাঁ-৫ সদর আসন থেকে। হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্য সব এসপিদের মতই নিজাম উদ্দীনও পলাতক।

এদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু একসঙ্গে অনুমোদন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের অনুমতি মিললেও হাসিনা সরকার নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঝুলিয়ে রাখে। পরে ৫ই আগস্ট হাসিনা সরকার পালানোর পর বাংলাদেশের নতুন সরকার নওগাঁয় অবস্থিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে নিয়োগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র প্রফেসর ড. হাছানাত আলীকে। নওগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্র বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের পাশে আবাসিক প্রকল্প এলাকার মধ্যে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে কার্যক্রম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। আগস্ট মাসের ৭ তারিখে ভিসি হিসেবে যোগদান করেছেন অধ্যাপক ড. হাছানাত আলী।

ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. হাছানাত আলী বলেন, নওগাঁ কৃষিসমৃদ্ধ একটি জেলা। গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে জেলাটি। সেই বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য বর্তমান সরকার দেশের হাল ধরার পরপরেই নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু জন্য আমাকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ করেছে। আমি এখানে যোগদানের পরেই ১৭ই নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছি। ভর্তি কার্যক্রমের বিষয়টা ইউজিসি অনুমোদন দিলে নওগাঁবাসীর প্রাণের দাবি ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাণ পাবে। আমার ইচ্ছে ছিল ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা।
গেল এক সপ্তাহ ধরে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলা এবং গ্রামপর্যায়ের হাটবাজারগুলোতে চায়ের আড্ডায় সময় কাটানো প্রান্তিক মানুষদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষ ইন্টারনেটের বদৌলতে দেশের চলমান রাজনীতি, অর্থনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারেন। তাদের মতে, খেটে খাওয়া মানুষগুলো ভালো থাকলে একটা দেশকে ভালো বলা যাবে। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপশি টেকসই উন্নয়নের কথা বলছেন তারা। এখন ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার বোঝা হয়ে আছে। তাদের কর্মসংস্থান নেই। ব্যবসার পরিবেশ নেই। বেকারদের দক্ষ করে তোলার পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাও নেই। শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে কর্মমুখী করে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন গ্রামের মানুষগুলো। তাদের চাওয়া ইউনূস সরকার গরিব মানুষগুলোর দিকে দৃষ্টি দেবেন।

নওগাঁর তরুণ আলু ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের কাছে ব্যবসায়িক পরিবেশ চাই। সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ চাই। পূর্বের সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া ব্যাংকগুলো ঋণ দিতো না। আমাদের হয়রানি করতো। বর্তমান দেশের হাল ধরা সরকার আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টেনে তোলার ব্যবস্থা করবেন এটা আশা করি। সেইসঙ্গে তিনিও দেশের সংস্কার চান। সংস্কার হলে ভালো মানুষদের নেতা বানাতে সহজ হবে।

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।