ফিচার

মা, আমি শহীদ হতে যাই, বড় ভাই রাকিবকেও একই কথা বলেছিলেন শহীদ শাকিল

image 186780 1742702972
print news

আল-আমিন শাহরিয়ার: ‘প্রায় প্রতিদিনই মোবাইলে ছেলের সঙ্গে কথা হতো। সেদিন শুক্রবারও জুমার নামাজ পড়ে শাকিল আমাকে ফোন করে, কেমন আছি জিজ্ঞেস করে।

আমিও জিজ্ঞেস করি, বাবা, তুমি কেমন আছো? এরপর আমি বলি, বাবা, বাইরে যাইও না। কেউ ডাকলেও যেও না। কিন্তু ছেলে আমাকে বলে, মা, আমি শহীদ হতে যাই। বড় ভাই রাকিবকেও একই কথা বলেছে।’

কথাগুলো বলেন ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিরাবাদ এলাকার মৃত মো. জালাল উদ্দিনের ছোট ছেলে শহীদ মো. শাকিলের মা শাকিনুর বেগম।

পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন মো. শাকিল (২০)। পাঁচ বছর আগে বাবা জালাল উদ্দিন প্যারালাইজড হয়ে মারা যান। এরপর বড় ভাইয়েরা মিলে ছোট ভাইকে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। সেখান থেকে ২০ পারা কুরআন শরিফ মুখস্থ করেন শাকিল।

দুই বছর আগে পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বছিলায় মেঝো ভাই মো. রাকিবের সঙ্গে মিষ্টির কারখানায় কাজ শুরু করেন। দুই ভাই মিলে মিষ্টির কারখানায় কাজ করে মালিকের ভাড়া করা রুমেই থাকতেন।

১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে মা শাকিনুর বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় ছেলে মো. শাকিলের। মায়ের শারীরিক খোঁজখবর নেয় সে। মা বাইরে গণ্ডগোলের কথা বলে তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করলে শাকিল বলেন, ‘মা, আমি শহীদ হতে যাই।’ ভাই মো. রাকিবও তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করেন। শাকিল তাকেও একই কথা বলেন।

তারা ভেবেছিলেন, শাকিল দুষ্টুমি করে বলছে। এরপর বিকেল তিনটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে বড় ভাই মিরাজের বাসায় যান। কিন্তু সেখানে অল্প সময় থাকতেই বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে চলে যান শাকিল।

মেঝো ভাই রাকিব বলেন, ‘১৯ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে কারখানার কাজ শেষ করে দুই ভাই গোসল করে জুমার নামাজ পড়ি। পরে রুমে এসে খাওয়া-দাওয়া করি। বিকেল তিনটার দিকে শাকিল বড় ভাই মিরাজের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর শাকিলের আর কোনো খোঁজ ছিল না।’

সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হয়ে ওয়েস্ট ধানমন্ডি হাউজিং এলাকায় মানুষের জটলা দেখে তিনি এগিয়ে যান। পরে সেখানে তার ভাই শাকিলসহ ৪-৫ জনকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

এ অবস্থায় কারখানার অন্য লোকদের খবর দিয়ে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর শাকিলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর শাকিল মারা যায়।

পরদিন শনিবার শাকিলের মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন স্বজনরা। রবিবার বেলা ১১টার দিকে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

শহীদ শাকিলের মেঝো ভাই মো. রাকিব জানান, ছোট ভাইকে পড়ালেখা করানোর জন্য তারা অনেক চেষ্টা করেছেন। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ও বছিলার দুটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলেন। সেখানে ২০ পারা কুরআনের হাফেজ হন শাকিল। এরপর আর পড়ালেখা করেননি।

২০২২ সালের দিকে তার সঙ্গেই বছিলায় একটি মিষ্টির কারখানায় আট হাজার টাকা বেতনে কাজ নেন শাকিল। সেই থেকে দুই ভাই একসঙ্গে মিষ্টির কারখানার একটি রুমে থাকতেন।

শহীদ মো. শাকিলের মা শাকিনুর বেগম বলেন, ‘শাকিলের বাবা ৯ বছর প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় ছিলেন। ছয় বছর আগে তিনি মারা যান। তখন থেকেই গ্রামের মানুষের বাড়িতে কাজ করে ছেলে-মেয়েদের বড় করেছি।’

দুই বছর আগে মেঝো ভাই রাকিবের সঙ্গে মিষ্টির দোকানে চাকরি নেন শাকিল। গত কোরবানি ঈদের এক দিন আগে বাড়িতে আসেন। এক সপ্তাহ বাড়িতে থেকে আবার ঢাকায় চলে যান। ঈদে বাড়িতে এসে বাবার কবর জিয়ারত করেন।

শাকিনুর আরও জানান, ছেলের মৃত্যুর পর জামায়াতে ইসলামী ও বিভিন্নজনের কাছ থেকে কিছু সহায়তা পেলেও সরকারিভাবে এখনও কোনো সাহায্য পাননি। তবে তাতে তার আফসোস নেই।

তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই। আমার ছেলের মতো অসংখ্য শাকিল হত্যাকারী ডাইনী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দেখে মরতে চাই।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.