ইত্তেহাদ নিউজ,পটুয়াখালী : স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতাপশালী ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেন এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন। ২০২৪ সালের ০৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর তিনি ভোলা থেকে বদলী হয়ে পটুয়াখালী জেলায় যোগদান করেছেন।
এর আগে ২০১৬ সালে দেলোয়ার হোসেন বাউফলের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) থাকাকালীন ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তখন তাকে শাস্তির পরিবর্তে পুরস্কৃত করা হয়। প্রত্যাহারের নামে তাকে বাউফল উপজেলা থেকে বদলী করে গলাচিপা উপজেলায় পোষ্টিং দেওয়া হয়। পরে পদোন্নতি দিয়ে ভোলা জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হিসেবে বদলী করা হয়।
০৫ অগাস্টের আগে ভোলায় তিনি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি জনরোষ এড়াতে তদবির করে ভোলা থেকে পটুয়াখালী জেলায় বদলী হয়ে আসেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায় বাউফল উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ০৬ এপ্রিল ৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয়ে ১৫টি সেতুর টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। একই দিন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে গোপন টেন্ডারে সমপরিমাণ অর্থের আরও ১৫টি ব্রিজের নির্মাণ কাজ স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভাগ বাটোয়ারা করে দেন তিনি।
দুর্নীতি জায়েজ করতে তখন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ, কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান ওরফে শামীম মুন্সি, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান হাসান ও সাধারন সম্পাদক মাহমুদ রাহাত জামসেদকে নিয়ে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। দুর্নীতির পথ পরিষ্কার রাখতে তাদের প্রত্যেককে একটি করে সেতুর নির্মাণ কাজ পাইয়ে দেন পিআইও দেলোয়ার।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে তখন গ্রুপিং তুঙ্গে থাকলেও দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে ঠান্ডা মাথায় সব গুছিয়ে নেন তিনি। অর্থবছরের শেষের দিকে থাকায় ঠিকাদাররা তখন তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও কোনো প্রকার তদারকি ছাড়াই রাতের আঁধারে ঢালাইয়ের কাজ করেন। সবচেয়ে গুরুতর যে অভিযোগটি ছিল তা হলো প্রায় সবগুলো সেতুই নির্মাণ করা হয় কেশবপুর ইউনিয়নে। কেশবপুর ইউনিয়নের যেখানে কালভার্ট হলেই চলে সেখানেও সেতু নির্মাণ করে সরকারের অর্থের অপচয় করা হয়। আর অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণের সাইটগুলো নির্বাচন করেন পিআইও দেলোয়ার হোসেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে জানা যায়, মল্লিকডুবা বাজারের দক্ষিণ পাশে এবং বাজেমহল মুন্সি বাড়ির উত্তর পাশে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত ওই দুটি সেতু এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। এলাকায় জনশ্রুতি আছে যেখানে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ওই পথে শিয়াল পর্যন্ত যাতায়াত করে না।
এছাড়াও, উত্তর মমিনপুর কালা মিয়ার বাজারের দক্ষিণ পাশের সড়কে, বাজেমহল ঈদ গা মাঠের দক্ষিণ পাশে, বাজেমহল হাই স্কুলের পূর্ব পাশে এবং কেশবপুর চৌমহুনী বাজারের উত্তর পাশে চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ ওই চারটি স্থানে ছোট ছোট কালভার্ট হলেই যথেষ্ট। প্রতিটি সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে পুকুর চুরির মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন পিআইও দেলোয়ার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক জহিরুল ইসলামের বাড়ি কেশবপুর ইউনিয়নে। তার ইচ্ছায় কেশবপুর ইউনিয়নে প্রায় ৩০টি সেতু নির্মাণ করা হয়। আর অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করে সরকারি অর্থ লুটপাটের মূখ্য ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন পিআইও দেলোয়ার হোসেন।
এক ইউনিয়নের ৩০টি সেতু নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে তখন বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি টিম তখন তদন্তে নামে। তদন্তে এসে কেশবপুর ইউনিয়নে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক জহিরুল ইসলামের বাড়িতে ভুঁড়িভোজ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ওই ভুঁড়িভোজের অর্থায়ন করেন পিআইও দেলোয়ার। পরে পিআইও দেলোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহারের নামে গলাচিপায় বদলী করে তার পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পিআইও দেলোয়ার হোসেন।
গলাচিপায় থেকে বাউফলের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। গলাচিপায় থাকা অবস্থায় পদোন্নতি পেয়ে ভোলায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন তিনি।
সম্প্রতি দেলোয়ার হোসেন ভোলা থেকে পটুয়াখালী জেলায় যোগদান করেছেন। পটুয়াখালীতে যোগদানের পর তাকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক ঠিকাদার বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ঘুরে ফিরে পটুয়াখালী জেলায় চাকুরি করতে আসেন। তার কাছে জিম্মি ঠিকাদাররা। প্রতিটি কাজে তাকে নির্ধারিত অংকের কমিশন দিতে হয় । দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে তার হাত রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করে তিনি বার বার পটুয়াখালীতে পোষ্টিং নেন।
অবশ্য কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে পটুয়াখালী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ব্রিজের বিষয়টি ১০ বছরের পুরানো। এটা নিয়ে এখন কথা বলার কি আছে? এটা তদন্ত হয়ে গেছে। আমি পটুয়াখালী যোগদান করেছি বলে আপনার সহ্য হয় না।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত