ফিচার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে রাজপথেই নিথর হয় রিয়াদ

image 204167 1748666034
print news

অনলাইন ডেস্ক : ‘মা, আমি সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরব’—এই আশ্বাসই ছিল মায়ের সঙ্গে রিদোয়ান শরীফ রিয়াদের শেষ কথা। সেই শেষ বিকেলে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে ঝরে যায় তার প্রাণ। রাজপথেই নিথর হয়ে যায় এক মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন, এক সম্ভাবনাময় তরুণের জীবন।

ঢাকার টঙ্গী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন রিয়াদ (২০)। তার বাবা আহম্মেদ উল্লাহ বাদল একজন ব্যবসায়ী, মা রুপালী আক্তার বিউটি গৃহিণী। পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে রিয়াদ ছোট, বড় বোন শাহনাজ আহম্মেদ শিমু পড়াশোনা শেষ করে বিবাহিত।

গত ১৯ জুলাই, শুক্রবার বিকেলে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ আধুনিক মেডিকেলের সামনে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন রিয়াদ। সেই দিনটিকে ভুলতে পারছেন না শহীদ রিয়াদের পরিবার-পরিজন।

রিয়াদের মা রুপালী আক্তার বিউটি বা বলেন, ‘১৮ জুলাই রিয়াদ আমাকে কিছু না বলেই আন্দোলনে গিয়েছিল। বিকেল ৫টার দিকে আমি আমার অসুস্থতার কথা বলে মেয়ের মাধ্যমে ফোন করিয়ে তাকে বাসায় ফিরিয়ে আনি।’

‘রাতে খাওয়ার পর আমাকে বিভিন্ন ভিডিও দেখায়। বলছিল দেশে কী হচ্ছে, কতজন গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। আমি ওসব দেখে বললাম—তুই আন্দোলনে যাস না। যদি যাস, আমাকে নিয়েই যাবি। সে বলে, ‘তোমার তো অ্যাজমা, তুমি পারবে না।’ মেয়ে শিমু বলেছিল, ‘তুমি একদিন মা’কে নিয়ে যেতা আন্দোলন দেখতে।’ সেদিন এই কথাগুলোই ছিল আমাদের শেষ গল্প।”

রুপালী আক্তার আরও বলেন, ‘১৯ জুলাই সকালে আমার ছোট ভাই বলল, দেশের অবস্থা ভালো না, রিয়াদকে দেখে রাখিস। ওইদিন ছিল শুক্রবার। রিয়াদ বলে, ‘মা, আমি নামাজে যাচ্ছি।’ গোসল করে আতর মেখে পাঞ্জাবি পরে। আমি তাকে মসজিদের জন্য টাকা দিই আর বলি, নামাজ শেষে বাসায় ফিরে আসবি, দেরি করিস না।’

‘নামাজ শেষ হওয়ার সময় হলে আবার ফোন করি। সে জানায়, ‘মা, আমার দাওয়াত আছে, খেয়ে আসব।’ বিকাল ৩টার দিকে ফোন দিই— কখনও ধরে, আবার কখনও ধরে না। ৫টা ৩২ মিনিটে আবার বলি, ‘বাবা, ফিরে আয়, তোমার বাবা বাসায় চলে এসেছে।’ সে বলে, ‘সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসব, মা। আমি এলাকাতেই আছি।’

‘সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে আবার ফোন করি। তিন সেকেন্ড কথা হয়—ওপাশে কোনো শব্দ নেই। শুধু আমি বলি, ‘বাবা, তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।’ এরপর বহুবার ফোন দিই, কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। শুরু হয় উদ্বেগ।’

এরপর ঘটে সেই বিভীষিকাময় ঘটনা। রুপালী বলেন, ‘পরে জানতে পারি, এই ফোনালাপের ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশ আধুনিক মেডিকেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় রিয়াদ।’

‘মাগরিবের নামাজটা কোনো রকমে পড়ি, কত ভুল যে হয়েছে, আল্লাহ জানেন। নামাজ শেষে মেয়ের ঘরে গিয়েই দেখি অজানা এক নম্বর থেকে ফোন। শিমু রিসিভ করে জানতে পারে, রিয়াদ ইনজুরড, মনসুর আলী মেডিকেলে আছে—তাড়াতাড়ি যেতে বলা হয়।’

‘আমি ও রিয়াদের বাবা ছুটে যাই মনসুর আলী মেডিকেলে। দশ মিনিট পর এক ডাক্তার এসে ছবি দেখতে চান। ছবি দেখে জানান, ‘আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।’ আমার বুক ফেটে কান্না আসে। কিন্তু ডাক্তার বলেন, ‘কান্নাকাটি করবেন না, আওয়ামী লীগের লোকজন জানতে পারলে লাশ পেতে অসুবিধা হবে।’

‘নিজেকে অনেক কষ্টে সামলাই। ওটা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার ঘটনা। এরপর রিয়াদের লাশ বাসায় নিয়ে এসে বাসার কাছে বামনারটেক কবরস্থানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দাফন করা হয়।’

শহীদ রিয়াদের মা জানান, তারা দীর্ঘ ১৭-১৮ বছর ধরে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের কামারপাড়ায় বসবাস করেন। এক মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। ছেলেহারা এই মা বলেন, ‘এই দুনিয়ায় ন্যায়বিচার পাব কি না জানি না, তবে বিচার দিয়েছি আল্লাহর কাছে।’

রিয়াদের মামাতো বোন আদিবা আজম বলেন, ‘ভাইয়া প্রতি বছর আম-কাঁঠালের মৌসুমে ও ঈদে গ্রামে আসত। শান্ত ও ভদ্র ছিল ও। আমাকে সুন্দদ পরামর্শ দিত, অনুপ্রেরণা দিত। এমন ভাইয়া আর কোনোদিন পাব না।’

মামী আকলিমা বেগম বলেন, ‘এবারও আমের মৌসুমে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু এবার আর সে এল না। আল্লাহর কাছে চলে গেছে! আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল  জানান, গত ২৫ মে জেলার ৮ জন শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। এই তালিকায় শহীদ রিয়াদও আছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল শহীদ পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রের সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাসসকে বলেন, এই সঞ্চয়পত্র শুধু অর্থমূল্যের নয়, এটি জাতির পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার নিদর্শন।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.