ইত্তেহাদ নিউজ : সারা দেশে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু। রাজধানী ঢাকার পর বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ডেঙ্গু রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছে। জেলাটিতে সুপেয় পানির অভাব। বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখেন বাসিন্দারা। তাতে পুরনো পানি থেকেই যায়। এতেই মূলত মশা ডিম পাড়ে। প্রজনন বাড়ে। বরগুনার ৯ ওয়ার্ডের ৫টি ওয়ার্ডই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। সদর উপজেলায় লার্ভার ঘনত্ব মিলেছে স্বাভাবিকের অন্তত সাড়ে ৮ গুণ বেশি। প্রভাব বিস্তার করছে ডেঙ্গুর ডেন-৩ ও ডেন-২ ধরন। চিকুনগুনিয়া বা অন্য কোনো ভেরিয়েন্ট নেই। ডেঙ্গুর প্রজনন উৎসের বেশির ভাগ প্লাস্টিকের ড্রাম, প্লাস্টিক বালতি, সিমেন্টের পাত্র, ফুলের টব ও ট্রে, প্ল্যাস্টিকের মগ ও বদনা, প্লাস্টিকের বোতল থেকে। গত ১৬ই জুন থেকে ২২শে জুন আইইডিসিআরের গবেষণা টিমের বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে করা গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২৫শে জুন আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন প্রতিবেদন তুলে ধরেন। ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বরগুনার ৯ ওয়ার্ডের মধ্যে লার্ভার ঘনত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ৫টি ওয়ার্ডে। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে ৭ এবং ৯ নং ওয়ার্ড। পাশাপাশি ২, ৬ এবং ৮ নং ওয়ার্ডেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি লার্ভার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুর তিনটি ধরনের মধ্যে ডেন-৩ সবচেয়ে বেশি- ৪৬.৫ শতাংশ, এবং ডেন-২ ৩৯.৫ শতাংশ এবং ডেন-২+৩ পাওয়া গেছে ১৪ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, গত ১৬ই জুন থেকে ২২শে জুন আইইডিসিআর’র ৭ জনের একটি গবেষক টিম বরগুনায় গিয়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে কাজ করেন। ১৮৪ পরিবার/বাড়ি নিয়ে তারা কাজ করেন। শুধু সরকারি হিসাবে আসা কেস নিয়ে তারা কাজ করেছেন। কমিউনিটি বা বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য এর মধ্যে আসেনি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা পৌর এলাকার ১৩৮টি পরিবারের মধ্যে ৬৫ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪৬ পরিবারের মধ্যে ৭৫ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, এবার ডেঙ্গুর ডেন-৩, ডেন-২ এবং ডেন-২+৩ পাওয়া গেছে। কিন্তু চিকুনগুনিয়া বা অন্য কোনো ভেরিয়েন্ট নেই। গবেষক টিমের নেতৃত্ব দেয়া আইইডিসিআর’র প্রিন্সিপাল বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রত্না দাস বলেন, উপকূলীয় এলাকাটিতে সুপেয় পানির অভাব। বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখেন তারা। এতে ঢাকনাও দেন না। শুধু পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন। পুরনো পানি পরিবর্তন বা ফেলে দেন না। ব্যবহার শেষ হওয়ার আগেই এতে নতুন পানি যুক্ত করেন, তাতে পুরনো পানি থেকেই যায়। এতেই মূলত মশা ডিম পাড়ে। প্রজনন বাড়ে। পাশাপাশি ঈদের মৌসুম হওয়ায় মানুষের যাতায়াত বেশি হওয়ায় ছড়িয়েছেও বেশি। ডেঙ্গু সঙ্গে নিয়ে আসছে, বা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সরকারের জনবল অভাব আছে। তবে ওনারা কাজ করছেন। আমাদের টিমকেও যথেষ্ট সহায়তা করেছেন। আইইডিসিআর’র এই গবেষক দলের তথ্য বলছে, এডিস অ্যালবোপিক্টাস ৫৮ শতাংশ এবং এডিস এজিপ্টাই ৪২ শতাংশ রয়েছে সেখানে। এগুলোর প্রজনন উৎস হচ্ছে, প্লাস্টিকের ড্রাম, প্লাস্টিকের বালতি, সিমেন্টের পাত্র, ফুলের টব ও ট্রে, প্ল্যাস্টিকের মগ, পাত্র ও বদনা, প্লাস্টিকের বোতল এবং অন্যান্য। ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি স্বতন্ত্র পরিবার বা বাড়ির লোকজন; এটি ৫৬ শতাংশ। সেমিপাকা বাড়ির ৩৩ শতাংশ, বহুতল ভবনের ৯ শতাংশ এবং নির্মাণাধীন বাড়ির ২ শতাংশ লোক আক্রান্ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে বরগুনা সদর হাসপাতালে ৮ চিকিৎসক ও ২ কনসালটেন্ট কাজ করছেন। জনসচেতনতার জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়, আক্রান্ত হলে করণীয় এবং স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা সংবলিত তথ্যবহুল লিফলেট বিতরণ, ভিডিও প্রচারণা এবং মাইকিং করা হয়েছে। পৌরসভা থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। মশা ও তার ডিম ধ্বংসের জন্য ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পৌরসভা ও সিভিল সার্জনের অফিসের সমন্বয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত