অনুসন্ধানী সংবাদ

ভুয়া সনদে বিপিসিতে চাকরি নেয়াসাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোরশেদ বহাল-তবিয়তে

মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : বয়স চুরি এবং ভুয়া সনদে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এ চাকরি নিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ। এই বয়স চুরি এবং সনদ জালিয়াতির ঘটনা পরবর্তীতে সরকারের অডিট প্রতিবেদনে নাতেনাতে ধরা পড়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো তিনি পদোন্নতিও পেয়েছেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বদৌলতে। তিন দফায় পদোন্নতি পেয়ে উপব্যবস্থাপক থেকে হয়েছেন মহাব্যবস্থাপক। বর্তমানে আছেন মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) পদে।

অবাক ব্যাপার হলো, এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, জালিয়াতিতে হাতেনাতে ধরা পড়া মোরশেদ হোসাইনের বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আগের মতোই বহাল-তবিয়তে রয়েছেন তিনি। এমনকি বিপিসি কেন্দ্রীক একটি দুর্নীতিবাজচক্রের ছত্রছায়ায় থেকে মোরশেদ হোসেইনের প্রভাব আগের চেয়েও বেড়েছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সোভারেন্টি’র পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ে করা হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর বৃহস্প্রতিবার এই রিট মামলা দায়ের করা হয়।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বিপিসির উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সময় মোরশেদ হোসাইন আজাদের বয়স ছিল ৩৬ বছর ৪ মাস ২১ দিন, অথচ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা চাওয়া হয়েছিল অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর। তাছাড়া অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে গ্লোয়ার ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সনদপত্র দাখিল করা হয়, যা পরবর্তীতে অডিটে ধরা পড়ে। এ বিষয়ে অডিট আপত্তি উঠলেও কোনো তদন্ত হয়নি।

জানা যায়, ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছেন। ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর যমুনা অয়েল কোম্পানির মোংলা ইন্সটলেশনের তৎকালীন ব্যবস্থাপক (পরিচালন) একেএম জাহিদ দুর্নীতির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে দুদকে অভিযোগ করলেও তা যথাযথভাবে তদন্ত হয়নি। মোরশেদ হোসাইন তখন দুদকের ওপর প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত ধামাচাপা দেন।

বয়স জালিয়াতি ও ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি) চাকরি নেয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোরশেদ হোসাইন আজাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি ছয়টি সরকারি দপ্তরে লিগ্যাল (উকিল) নোটিশ পাঠানো হয়। ‘স্টুডেন্টস ফর সোভারেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহম্মদ আহসান এই নোটিশ পাঠান।

লিগ্যাল নোটিশটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান বরাবর পাঠানো হয়।

লিগ্যাল নোটিশে মোরশেদ হোসাইন আজাদের চাকরিচ্যুতি, প্রতারণা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাত দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সুপ্রিমকোর্টের হাইকোট বিভাগে রিট দায়ের করেন ‘স্টুডেন্টস ফর সোভারেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হকের আইনজীবী।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৩ ই মার্চ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড এ উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) পদে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা সহ অনুর্ধ্ব ৩৩ বছর (৩১-০৩-২০০৯) বয়স চাওয়া হলেও তিনি ৩৬ বছর ৪ মাস ২১ দিনে উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তার কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় গ্লোয়ার ট্রেডিং নামে ভুয়া দোকানের অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন তিনি। সম্প্রতি বিষয়টি অডিটে ধরা পরায় এটি নিয়ে আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। বিপিসিতে ডেপুটি ম্যানেজার থেকে অফিসিয়েটিং হিসেবে ব্যবস্থাপক করলেও পরবর্তিতে জালিয়াতির মাধ্যমে ফাইল ঘায়েব করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অফিসিয়েটিং পদ হতে হয়ে যান ডিজিএম। যা সম্পূর্ন আইন বিরোধী।

শুধু তাই নয় জালিয়াতি করে নিয়োগ ও পদোন্নতি পেয়েই তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে। আর অবৈধভাবে উপার্জন করেন কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পগুলোতে ডিলারদের বেজাল তেল বিক্রয়ে উৎসাহী করে ভূয়া রিপোর্ট প্রদান করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ বিপিসিতে রিপোর্ট প্রদান করেন বেজাল মুক্ত তেল হিসেবে।
স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানী লিমিটেডে (এসএওসিএল) থাকাকালীন সময়ে আমদানীকৃত বিটুমিন বাজার দরের অনেক কম দামে বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন কোটি টাকা। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নিজস্ব লোক ফারহান ট্রেডিং এর সাথে যোগসাজশে ৬৮৬৩ ড্রাম ৬০/৭০ গ্রেডের বিটুমিন নাম মাত্র মূল্যে (২,৯৭, ৭৩৪০০ টাকা) বিক্রি করে দেয়। কিছু বিটুমিন প্রতি ড্রাম ৫৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে। অথচ ঐ সময় বাজারে বিটুমিনের দাম ছিল ড্রাম প্রতি ৭ হাজার টাকা। যার থেকে মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ হাতিয়ে নেন ১০ লক্ষ টাকা।
এসএ ওসিএল এর সীতাকুন্ড প্রজেক্টের জন্য আমদানীকৃত স্টিল স্ট্রাকচার স্ক্রাপ হিসেবে নিজস্ব লোকের কাছে অল্প দামে বিক্রি করে দেন। ঐ সময় স্টিল স্ট্রাকচার এর আমাদানী খরচ ছিল প্রতি কেজি ১২৫ টাকা। কিন্তু (রহিম) তার নিজস্ব লোক দিয়ে সব স্ট্রাকচার মাত্র ৫৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন। অথচ ঐ স্টাকচারের আমদানী খরচই ছিল ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানীর ৬৯ লক্র টাকা যায় তার পকেটে। এছাড়া স্টিল স্ট্রাকচার যারা কিনেছেন তারা ১১টি গাড়ি যোগে সরবরাহ দেখিয়েছেন কিন্তু সরবরাহকৃত ১০টি গাড়ির স্টিল স্ট্রাকচারের টাকা পরিশোধ করলেও একটি গাড়ির টাকা পরিশোধ করেনি। বিষয়টি জানার পরও মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ নিরব ছিলেন। এবং এই কাজে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এসএওসিএলের আমদানীকৃত লুব (বেস অয়েল) বিপিসি নির্ধারিত মূল্যে প্রতি লিটার ১১৭ টাকা প্রতি লিটার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলকে বিক্রি করা হতো। কিন্তু মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের কাছে ১০৯ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। যা বিপিসির নির্ধারিত মূল্যে ধরলেও আরো ২ কোটির টাকা বেশি বিক্রি করা যেতো। কিন্তু না করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোম্পানীর টাকা গচ্ছা দেখিয়েছেন তৎকালীন বোর্ড।

মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠার পর জালিয়াতি ও অফিসের নথিপত্র গায়েব করে ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি নেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ বলেন, নিয়োগে বয়স জালয়তির বিষয়ে ‘কর্তৃপক্ষ ভাল বলতে পারবেন তাদের জিজ্ঞেস করুন। আমার কোন ছবি ছাত্রলীগের ব্যানারে দেখাতে পারবেন না ,আমি একজন ইসলামিক মাইন্ডের লোক ।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.