231760b4c53015753cc411c525c678d0 62447df59a589

মোবাইলের কল লিস্ট, খুদে বার্তাও তল্লাশি করে পুলিশ

print news

স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপি’র মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। রাজধানীজুড়ে ছিল বাড়তি নজরদারিও। সমাবেশের আগের দিন রাত থেকেই তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। ঢাকায় আসা প্রতিটি গাড়িতেই মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করা হয়। কোথায় যাচ্ছেন, কার কাছে যাচ্ছেন, যাত্রীদের প্রশ্ন করা হয়। যাত্রীদের মুঠোফোন ঘেঁটে দেখা হয়েছে। মোবাইলের কললিস্ট ও খুদে বার্তাও যাচাই করা হয়। অনেকের ডায়াল কলের নম্বর ধরে ধরে ফোনও করা হয়। এমনকি ফোনে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে তা জব্দ করে পুলিশ। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

অনেককে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনা হয়। পরে তাদের পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সন্দেহভাজন প্রায় শতাধিক মানুষকে আটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমিনবাজার, আব্দুল্লাহপুর ও সদরঘাটেই বেশি আটক করা হয়। তবে পুলিশ ঢাকামুখী সব ধরনের দূরপাল্লার পরিবহন ও গণপরিবহনে তল্লাশি চালালেও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে আসা কোনো গাড়িতেই তল্লাশি করতে দেখা যায়নি। শান্তি সমাবেশের ব্যানারযুক্ত গাড়িগুলো পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থায় পার করে দিতে দেখা গেছে।
গতকাল সকাল ১১টা থেকে নবীনগর, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, শ্রীপুর থেকে যুবলীগের প্রায় ২৫০টি গাড়ি কোনো বাধা ছাড়াই ঢাকায় প্রবেশ করে। ঢাকার অন্য প্রবেশপথেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার ও সদরঘাটে পৃথক পৃথক তল্লাশি করে র‌্যাব ও পুলিশ। এতে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। তবে পুলিশ বলছে, যাদের আটক করা হয়েছে। তাদের নামে মামলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলা থাকলে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেয়া হয়। কোনো বিস্ফোরক বা মাদক আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এটি কাউকে হয়রানি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। নিয়মিত তল্লাশিরই অংশ। সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমেই পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ১২ জন। গতকাল সকালে ঢাকা সদরঘাট থেকে আটক করার কথা স্বীকার করলেও তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। আউয়াল নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, লঞ্চ থেকে নেমে যাত্রীরা কোতোয়ালি থানার সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় অনেককে আটক করেছে দেখেছি। সাভারের আমিনবাজারে যাত্রীদের মুঠোফোন ঘেঁটে দেখার পর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিন সকালে সন্দেহভাজন প্রায় ২০ থেকে ৫০ জনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়।

অনেকের মুঠোফোন, ব্যাগ, ম্যানিব্যাগ চেক করা হয়। এই পথের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, মোবাইল ফোন, ব্যাগ, মানিব্যাগ ও গাড়ির সিটের নিচে পর্যন্ত তল্লাশি করা হয়েছে। কোথায় যাচ্ছি তার বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়েছে। তথ্যে গরমিল হলেই গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপি’র সমাবেশে যাচ্ছি কিনা তাও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। রাজবাড়ী থেকে আসা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক নাদিম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ আমার মোবাইল দেখতে চান। তারা মোবাইল নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকে। চেকের সময় আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে আমি বিএনপি’র সমাবেশে যাচ্ছি কিনা। বিএনপি’র কোনো নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা। মোবাইলে বিএনপি’র কোনো নেতার সঙ্গে ছবি আছে কিনা। তাদের এত প্রশ্ন কেন? এটা কেমন দেশ? গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আসা তমিজউদ্দিন বেপারী বলেন, পুলিশ গাড়িতে উঠে আমার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে কাপড়-চোপড় উল্টিয়ে দেখে। আমার কাছে জানতে চান কোথায় যাচ্ছি। পল্টন যাচ্ছি কিনা। আমি বলেছি, আমি মুরগি দোকানি মিরপুর যাচ্ছি। পরে তারা চলে যায়। এমনভাবে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যাকে সন্দেহ হয়। তাকে নামিয়ে নিয়ে যায়।

মানিকগঞ্জ থেকে আসা বিএনপি’র নেতা লোকমান হোসেন বলেন, দেশের মানুষের কোনো অধিকার রক্ষা করছে না সরকার। সমাবেশে যোগদান আমার রাজনৈতিক অধিকার। সাংবিধানিক অধিকার। সেখানে পুলিশ আমার সেই রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আমি হেঁটেই সমাবেশের যোগ দিতে নয়াপল্টনে যাচ্ছি। কোনো বাধা মানবো না। অভিযোগ করে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, মানুষের মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে। মোবাইলে কি আছে ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। অনেককেই গাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাভার থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, সাভার থেকে মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে আসা নেতাকর্মীদের পরিচয় পেলেই সাভারের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করছে পুলিশ। আমিনবাজারে বাসে তল্লাশি করেও নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, যাত্রী পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্তোষজনক উত্তর পেলে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেকের তথ্য যাচাই করে দেখতে কিছুক্ষণ তাদের অপেক্ষা করানো হচ্ছে। এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

ad41b125fd93f775e5bdee70c1ab6d5b 6645e0f0c5393

ছোট ভাইকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন কাদের মির্জা

ইত্তেহাদ নিউজ,নোয়াখালী : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় আপন ছোট ভাই শাহদাত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *