IMG 20230803 WA0011

রাজপথে আর সহিংসতা নহে

print news

রাজনীতির তালি কদাচ এক হাতে বাজে না। রাজপথে সংঘাত-সহিংসতার বেলাতেও ইহা সমান সত্য। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠ নিজেদের পক্ষে রাখিতে একদিকে বিরোধীরা আন্দোলন করিতেছে, অন্যদিকে সরকার তাহার প্রশাসন ও দলীয় শক্তিকে সাজ সাজ অবস্থায় রাখিতেছে। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও মিছিলের প্রতিযোগিতাও চলমান। বিরোধীরা জনসভা, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি দিয়া দেখাইতে চাহিতেছে, জনজীবনকে তাহারা কতটা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারে। ফলত সরকারকেও পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখিবার সক্ষমতা দেখাইতে হইতেছে। নিয়ন্ত্রণ কায়েমের এই রেষারেষি সংঘাতের দিকে গড়াইতেছে। ঢাকার একটা সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের প্রার্থী হিরো আলমের উপর হামলা হইয়াছে। হামলা হইয়াছে গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হকের উপর। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজপথে পুলিশ কর্তৃক প্রহৃত হইয়াছেন।

সংঘাত কে বেশি চাহিতেছে– বলা মুশকিল। তবে আমরা দেখিয়াছি, বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার হাত দিতেছে না; বাধা দিতেছে রাজপথে অস্থিরতা আনিবার চেষ্টাকে। ইহার ফলে গত শনিবার রাজধানীতে বিরোধী দল বিএনপির দুই বর্ষীয়ান নেতাকে পুলিশ সাময়িকভাবে আটক করে। একজনকে রাজপথে প্রহারে রক্তাক্তও করা হয়। পুলিশের এইরূপ অ্যাকশন যথাযথ হইয়াছে কিনা, তাহা বিচার্য বিষয়। কেননা, বর্তমানে বাংলাদেশ যেইভাবে স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক শক্তির মনোযোগ পাইতেছে; জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহও তৎপর; সেই সময়ে বিরোধীদের উপর নির্যাতন চলিতেছে– এমন কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাইয়া দেওয়া সরকারপক্ষের জন্য দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে না। বিরোধীদের পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপের দৃশ্যও তাহাদের দাবির পক্ষে যাইবে না। তাহা ছাড়া গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের যে অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহা আমলে লইলে সরকারও শান্তি বজায় রাখিবার যুক্তিতে অধিকতর বল প্রয়োগের সুযোগ লইতেই পারে। এই কারণেই বলা, সংঘাত-সহিংসতার তালি এক হাতে বাজিতেছে না।

এক সময় গোত্রে গোত্রে সংঘাত স্বাভাবিক ছিল। চর দখলের লাঠালাঠিও প্রাক্-আধুনিক যুগে চলিতে পারিত। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রে বল প্রয়োগ করিয়া বিরোধীপক্ষ দমন কিংবা সহিংসতা দিয়া জনগণকে জিম্মি করিয়া সরকারকে হীনবল করা কোনো পন্থা হইতে পারে না। সব পক্ষকেই সংযম দেখানো দরকার। কেননা, রাজনৈতিক সংঘাত হইতেছে ‘স্নো বল ইফেক্ট’-এর অনুরূপ। তুষারের দেশে তুষারের ছোট্ট বলকে তুষারের উপর গড়াইয়া দিলে তাহা আরও বরফকুচি জড়াইয়া বৃহৎ আকার ধারণ করিয়া প্রবল বেগে ধাবিত হয়। তদ্রূপ রাজপথের ছোট্ট সংঘাত হইতে বৃহৎ আকারের সহিংসতা ছড়াইয়া পড়িতে পারে।

বলা হয়, যুদ্ধে জয়লাভের জন্য যে কোনো কৌশলই গ্রহণযোগ্য। রাজনৈতিক যুদ্ধে এই নীতি অনুসরণের কুফল কিন্তু ভয়াবহ। জনজীবন বিধ্বস্ত হয়; নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরে, অর্থনীতি মুখ থুবড়াইয়া পড়ে। সুতরাং সরকার ও বিরোধীপক্ষ উভয়েই যেন শান্তিপূর্ণ খেলার নিয়ম মানিয়া চলে। বিশেষত রাজনীতিতে যখন সংলাপের আলাপ উঠিয়াছে, তখন অসাধু শক্তি সংলাপের পরিবেশ বিনষ্ট করিতে সহিংসতাকে হাতিয়ার করিতে পারে। অতএব, সাধু সাবধান।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

ad41b125fd93f775e5bdee70c1ab6d5b 6645e0f0c5393

ছোট ভাইকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন কাদের মির্জা

ইত্তেহাদ নিউজ,নোয়াখালী : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় আপন ছোট ভাই শাহদাত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *