Bauphal News 1 scaled

তেতুঁলিয়া নদীর ভাঙ্গনে চার সন্তান নিয়ে কামরুন্নাহারের জীবন যাপন

print news

সাইফুল ইসলাম, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর বাউফলের ত্রিশোর্ধ বয়সী ৪ সন্তানের জননী কামরুন্নাহার, পরিবারে অর্থের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষা (৫ম শ্রেনী) সমাপনি পরীক্ষা শেষেই মাধ্যমিক স্কুলে পাঁ বাড়াতে পারেনি। অল্প বয়সী কামরুন্নাহারের চলে আসে নতুন সুখের সন্ধানে স্বামীর সংসারে। কিন্তু সুখ না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পিছু ছাড়ছে না কামরুন্নাহারে। নদী ভাঙ্গন, সিডর, আইলা সাথে লড়াই করে জীবন চলতে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ভাবে সামাজিক নিরাপত্তা অনেক কর্মসূচী চালু থাকলেও কামরুন্নাহারের ভাগে এ অধিকার ভোগ করার সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তেতুঁলিয়া নদীর ভাঙ্গনের মুখে ৪ সন্তান নিয়ে হুমকী স্বরুপ জীবন যাপন করেছেন পটুয়াখালী জেলাধীন বাউফল উপজেলার ধান্দী গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে ধান্দী গ্রামের দূরত্ব হচ্ছে ৫ কিলোমিটার। নাজিরপুর ইউনিয়নের ধান্দী গ্রামে যাতায়াত মাধ্যমে হচ্ছে সরু কাঁচা ও পাকা রাস্তা, পাশেই রয়েছে তেতুঁলিয়া নদী। প্রকৃতির নিয়মে নদী একুল ভাঙ্গে অপর কুল জাগে। নদীর ভেঙ্গে যাওয়া কুলে কামরুন্নাহারের বসতি। নিজস্ব বসত বাড়ি নেই তার। দখল সূত্রে (অখরাইত) অন্যের জমিতে বসবাস করেছে। এই ধান্দী গ্রামের সবচেয়ে দুর্যোগের শিকার হচ্ছে তেত্রিশর্ধো বয়সী কামারুন্নাহার বেগম, তারা স্বামী ছিদ্দিক হাওলাদার পেশায় একজন জেলে তাদের ২ ছেলে, ২ মেয়ে কামরুন্নাহারে ছোট শিশু ৩ মাস বয়সী সন্তান ইয়াসিন তার জন্ম থেকে রোগাক্রান্ত, চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছে তবুও যেন সুস্থ হয়ে উঠেছে না। নদী ভাঙ্গনে তিনতিনবার বাড়ী ভেসে গেলে অন্যের জমিতে বসত গড়েছে। ধার-দেনা করে অন্যের জায়গায় ছাপড়া দিয়ে বসবাস করেছে। প্রতি বছর ছোটখাটো ঝড় তার পিছু ছাড়ছে না আর্থিক দৈন্যতা কারেন ভালো কাঠামো ঘর তুলতে না পারায় সিডর আইলাসহ ছোটখাটো বন্যা ঝড় কামরুন্নাহার বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।

দক্ষিণ উত্তর দিকে প্রবাহিত তেঁতুলিয়া নদী। এ নদীর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কালাইয়া থেকে রাজধানী ঢাকা-গামী দ্বিতলা ও এক তলা লঞ্চ চলাচল করে। পাশেই নিমদী লঞ্চঘাট। ২ ঘন্টা পর পর লঞ্চের বাশির শব্দে কামরুন্নাহার পরিবারে ছোট ছেলে-মেয়ে আতঁকে উঠে। আবার ঘুম ভাঙ্গে। আবার জোয়ারের পানিতে ছোট ঘরটি ভাসতে থাকে। বসত ঘরের তিন পাশে মাটি সরে গেছে। যেখানে মুহুর্তে নদীর গর্ভে বাড়িটি বিলীন হয়ে যাতে পারে। নদীর গর্ভে বিলীন হওয়া কামরুন্নাহারের একবার ঘটনা না। এভাবে আরো তিনতিবার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে।

পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা জানতে গেলে দু চোঁখের পানি ছেড়ে দিয়ে কামরুন্নাহার বলেন, পারিবারিক আয় ব্যয়ের হিস্যা (হিসাব) হচ্ছে, মোর স্বামী নদীতে ইলিশ জাল, দরগী জাল অর্খাৎ মৌসুম অনুসারে জাল দিয়ে মাছ ধরে থাকে। নদীতে জালে মাছ ধরার উপর সংসারের খাবার চলে। কোনো দিন ৫শ টাকা কোনদিন ৩শ টাকা আবার কোনদিন শূন্য জালে ফিরে আসা। যে দিন শূন্য জাল সেই দিন আধা পেট কিংবা ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হয়। বর্তমানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেনা।

বৈবাহিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে কামারুন্নাহার বলেন, পিতার বাড়ি উপজেলার সদর দাশপাড়া গ্রামে। পিতা কালাম একজন মাছ ব্যবসায়ী। পিতার সংসারে কামরুন্নাহার বড়ো হলে দায়িত্ব যেন তার কাঁধে পড়ে। সংসার অভাব অনাটন ভাড় কাধে নিতে গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ম শ্রেনী পাশ করার পরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে স্বামীর সংসার অভাব ভার নিয়ে নতুন ভাবে জীবন গড়তে হচ্ছে। পরপর চারটি সন্তানে মা হলে বড় মেয়ে হাদিয়া মাদ্রাসা আলিম (এইচ এসএসিতে) পড়াশোনা করেন। মেঝে মেয়ে তানজিলা ৮ম শ্রনী ছেলে সাওয়ান এসএসসি পরীক্ষার্থী। কামারুন্নার অর্থের অভাবে নিজে লেখাপড়া করতে না পারলেও ৪ সন্তান শিক্ষিত করে ছোট একটি কর্মজীবন প্রবেশ করানো তার স্বপ্ন।

নদীতে ইলিশ মাছ ধরে স্বামী ছিদ্দিক হাওলাদার সংসার চালাতেন। স্থানীয় এনজিও থেকে ভাবে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ৩ কড়া জমি ক্রয় করেন। ধার-দেনা অন্যের সাহায্য নিয়ে খরের ঘর তোলেন। ভাগের কি পরিনাম ছিদ্দিক হাওলাদার বসতী স্থায়ী হয়নি। বসত ঘরের তিন বছর মধ্যে ভেঙ্গে নি:স্ব হয়ে পড়ে। অন্যের সাহায্য নিয়ে এলাকা এলাকা সেরাজ কালাম সালাম মীরা জায়গা দখলী হিসাবে বসত ঘর তোলে সংসার চালাতে শুরু করেন। সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তাও তেতুঁলিয়া নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর এলাকা বাচ্ছু মিরা জায়গা কাগজ টুরানো টিন ছাপড়া খরদিয়ে বসত শুরু করলেও তা নদীন গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সিডর আইলা কি ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ উত্তরে বলেন, পানির মধ্যে থাকা ব্যঙের আবার সর্দি কিশে, বার বার নদীতে বাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। অন্যের জায়গায় ছাপড়াদিয়ে বসত করলেও সিডর, আইলায়সহ ছোটোখাটোঝড় সমস্ত বাড়ি ঘর ভেঙ্গে নিয়ে ওড়ে গেছে। নিজস্ব জায়গা নেই বলে সরকারি কেরসকারি সাহার্য বাড়ি পাইনি। আইলা এবং ইয়াস ঘরে খড় ওরে গিয়েছে।

সামাজিক অবস্থা যাচাই করতে গিয়ে কামারুন্নাহার স্বামী এবং ছিদ্দিক হাওলাদার দু চোঁখে টানি ছিড়ে দিয়ে বলেন, ৪টি সন্তান আমার তাদের ভবিষৎ একটি পরিচয় থাকবে। আমি অভাবে আছি। এ ভাবে চিরদিন থাকবে না। একদিন হলে আমার সন্তান এ ভাবে দূর করে স্বচ্ছল জীবনে পা রাখবেন। তাই আজ তাদের ছোট করতে চাই না। সরকার বিভিন্ন আদর্শ গ্রামে দিয়েছে। সেখানে যেতে চাই না। অল্প হলে ২ শতক জায়গা নিয়ে নিজের বাড়ি করতে চাই। ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা থেকে এলাকা অনেক সাহায্য করে থাকে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং মুখ চেনা খাদিম কারনে সরকারি সেবা গ্রহন করতে পারছি না। নিরপাত্তার বিষয় তুলতে গেলে কামারুন্নাহার বলেন, ভাই বোঝেন মোর দুটি মেয়ে বড় হয়েছে। আমিও একজন মাঝ বয়সী গৃহিনী। স্বামী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ৩/ ৪ দিন থাকতে হচ্ছে। এ সময় অবশ্যই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগতে হয়।

ধান্দী এলাকা শিক্ষা অবস্থা জানতে গেলে স্কুল সর্ম্পকে প্রতিনিধিকে বলেন, নিমদী প্রাইমারি স্কুলটি নদীর মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া পথে। পাশে সরকার স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মান করতে গেলে তার বিলম্ব হচ্ছে। পাশে ধান্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। কাঠামোগত ভাবে বিল্ডিং হলে ২/১ বছর মধ্যে নদীর মধ্যে বিলীন হওয়ার আশংকা।

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা নিয়ে কামরুন্নাহারের পরিবার থেকে জানা যায়, মোর জীবনকী নদীর মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে। কত মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে। আমার জীবনে কি সুখের দেখা হবে না। নদীর পাড়ে অন্যের জমিতে ছাপড়া দিয়ে জীবন সংসার করছি। এলাকায় অনেকে পরের জমি বলে অখরাইত গালি দিয়ে থাকে। শুনেছি মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে সরকার ঘর দিচ্ছে। নদী ভাঙ্গলী পরিবার হিসাবে আমাকে যদি সরকার ঘর দেয়। কষ্ট হলেও আত্বীয় স্বজনের কাছে থেকে এক টুকড়া জমি নিয়ে ৪ সন্তান নিয়ে মাথার গোজার ঠাই নিতে পারি।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

cumilla new

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছড়িয়েছে আলোর দ্যুতি

মাহফুজ নান্টু : উঁচু দালান, তার মাঝে ফুলের বাগান। ক্লাসরুমে বসে পাঠগ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *