309391658 401811268784711 3873952713390289965 n

জিম্মিরোগীরা : চিকিৎসা সেবা পেতে পদে পদে  ভোগান্তি

print news

মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : 

  চিকিৎসার জন্য শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর দক্ষিনাঞ্চলের কোটি মানুষের নির্ভরতা। বরিশালসহ খুলনা বিভাগের একাংশ ও ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর মাদারীপুর,গোপালগঞ্জের  মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর  স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে  সবচেয়ে পুরনো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি। অথচ এই হাসপাতালের রোগীসেবায় কেউ সন্তুষ্টি নন ।কোনো কাজে আসছে না গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত কোনো রোগী।এখানে ভর্তি করা হলে ঢাকা মেডিকেল বা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে প্রেরন করা হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় কম মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সুবিধা পাচ্ছে না রোগীরা। আছে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যও। হাসপাতালের সর্বত্রই ময়লা-আবর্জনা। তবে সেবা পেতে রোগীর ভোগান্তি সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। একাধিক রোগী ও রোগীদের স্বজনরা  ইত্তেহাদ নিউজকে জানিয়েছেন, এখানে হাসপাতালে সেবা পেতে পদে পদে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

1431013481 7

অনিয়ম যেখানে নিয়মে পরিনত, অসভ্যতাই যেখানে সভ্যতা, নোংড়াই যেখানে পরিচ্ছন্নতা! রোগী, স্বজন যেখানে জিম্মি, বর্তমান আলোর পৃথিবীতে এক ভয়ানক অন্ধকার জগতের নাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। রোগী ভর্তি থেকে শুরু হয় নানান রকম হয়রানী আর বিরম্বনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জরুরি বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ক্যাজুয়ালটি বিভাগটি পুরোপুরি চালু করা যাচ্ছে না। জরুরি বিভাগ থেকে আহত রোগীদের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে না পাঠিয়ে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর দালাল চক্রের সঙ্গে জরুরি বিভাগের কর্মচারীদের সিন্ডিকেট রয়েছে। কমিশনের বিনিময়ে জরুরি বিভাগ থেকে রোগী ভাগিয়ে তারা প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে নিয়ে যায়।কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারীতা, কর্তব্যে অবহেলার কারনে জটিল ধাধায় পরে যায় আগত সাধারন রোগী ও স্বজনরা। আয়া বুয়াদের দাপট আর আচরণ এতটাই জঘন্য। এমনকি ঝাড়ু নিয়েও আক্রমন করতে দেখা গেছে স্বজনদের উপর। কেউ প্রতিবাদ করলেই যেনো তাকে বিপদে পরতে হয়, ভিমরুলের দলের মত সব দলবদ্ধ হয়ে ঝাপিয়ে পরে। এতো গেলো আয়া বুয়া ক্লিনারদের কথা।সিস্টার নার্স আর ডাক্তার, তারাতো বাংলার নবাব। কোন বিষয় কথা বলতে গেলেই ধমকের সুরে কথা বেড়িয়ে আসে তাদের মুখ থেকে। রোগী যখন সংকটময় অবস্থা তখন দশবার ডেকেও তাদের পাওয়া যায়না। তাদের অবহেলার কারনে শিশু মারা গেছে নবজাতক শিশু ওয়ার্ডে। স্বজনদের অভিয়োগ ডাক্তার যদি একটু কেয়ার করত তবে হয়ত শিশু তিনটি বেচে যেতো। এর কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে নাজেহাল করে দেয় তারা। সাংবাদিক পরিচয় দিলে, হুমকী দিয়ে বলা হয়, এটা সরকারী হাসপাতাল, ডাক্তারদের ক্ষমতা অনেক, আপনি যা পারেন করেন গিয়ে। শিক্ষিত ডাক্তারদের এমন অশালীন দৃষ্টতাপূর্ণ আচরনে হতবাগ হয়ে পরে উপস্হিত জনতা। পরিচ্ছন্নতার কথা আর কি বলব, এক কথায় সমগ্র হাসপাতালটি একটি নোংড়া দূর্গন্ধময় ভুবন। বেশিরভাগ বাথরুমের নেই কোন দরজা, পানি ব্যাবহারের ব্যবস্থাও নেই বেশিরভাগ বাথরুমে, নানা অব্যাবস্থাপণা, অনিয়নম আর সেচ্ছাচারীতায় এমন বৃহত্তর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এখন কতিপয় অমানুষ আর হায়েনার রাজ্যে পরিনত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবী, লাখো মানুষের সেবায় নিয়োজিত এই মহা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিয়ম ও সভ্য আচরণে ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

411496fb706953ce38c45b1c433cea2607a3576646250344

ডিউটি রেখে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে সময় দেন চিকিৎসকরা :

সরকারি ডিউটি রেখে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত ক্লিনিকে সময় দেন। এর ফলে সরকারি চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা পড়েন চরম ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায়।

 

c012a06e25786f9566ba5a4140ccd9dda5a0892fb73230fa

হাসপাতাল ময়লার ভাগাড়:

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের মানসিক বিভাগের পাশের এ খোলা জায়গাতে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলছে কর্তৃপক্ষ। রাতে সিটি করপোরেশন এসব ময়লা অপসারণ করলেও দিনভর পাখি, কুকুর, বিড়াল এসব বর্জ্য চারদিকে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। হাসপাতালের মূল ভবনের পাশেই ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলায় চিকিৎসা নিতে এসে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।রোগীর স্বজনরা জানান, মানসিক বিভাগের পাশে ময়লার ভাগাড় করায় কোনোভাবেই চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো রোগীর সঙ্গে এসে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানান তারা।এদিকে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দুদফা চিঠি ও বৈঠক করেও কোন সুরাহা করতে পারেনি পরিবেশ অধিদফতর।বরিশাল জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক বলেন,‘দ্রুত এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিষয়টি দুঃখজনক।’তবে দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের কথা জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালে ২ টি জায়গা নির্ধারণ করেছি। দ্রুত এই দুই জায়গায় ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’১৯৬৮ সালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর ৫৫ বছরেও তৈরি করা হয়নি ডাম্পিং স্টেশন।

cfe14ae48cf1d5f8ff8f69cf5e36ce21 63c96c9f26a93

পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ  স্বাস্থ্যমন্ত্রীর :

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অডিটোরিয়ামে এক আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতাল নোংরা থাকবে এবং মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে না-এটা আর গ্রহণ করতে রাজি নই। যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিতে চাই– যদি না পারেন তবে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।’

হাসপাতালটির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য হাসপাতালের তুলনায় এই হাসপাতাল পিছিয়ে আছে। হাসপাতালের বাইরে খারাপ অবস্থা। এখানে চারিদিকে ফুলের গাছ দিয়ে ভরিয়ে দিতে হবে, যাতে মানুষের প্রথম দেখায় ভালো লাগে। এখানে চারিদিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে, হাসপাতালে শীতের মধ্যে মানুষকে শুয়ে থাকতে দেখেছি। এরপরে যখন আসবো এসবের উন্নতি দেখতে চাই।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালের (শেবাচিম) আগে ক্যান্সারসহ বিশেষায়িত হাসপাতালের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম, সেগুলোও অন্যান্য বিভাগের তুলনায় কাজ পিছিয়ে আছে। যারা ঠিকাদার রয়েছেন তাদের বলতে চাই, যে টুকু পিছিয়ে পড়েছে সেটি যেন দ্রুত পূরণ করা হয়, তা নাহলে পেনাল্টিতে পড়তে হবে।’

জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ২০ নভেম্বর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে সব ধরনের রোগের চিকিৎসার ইনডোর-আউটডোর সেবা থাকতে হবে। কিন্তু শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসক ও স্থান স্বল্পতার কারণে একাধিক রোগের ইনডোর-আউটডোর সেবা কার্যক্রম চালু ছিল না। বিশেষ করে কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) চিকিৎসার বহির্বিভাগ চালু না থাকায় গরিব ও সাধারণ রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এ অবস্থায় ২০১৫ জানুয়ারিতে এক সভায় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ জরুরি ভিত্তিতে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগ বহির্বিভাগ চালুর নির্দেশ দেন। প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পর ২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ভাস্কুলার সার্জারি, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি ও গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বহিঃ বিভাগের কার্যক্রম।

ববি শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত :

শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের বহির্বিভাগে মাকে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত।১৯ জুন বেলা ১১টার দিকে শেবাচিমের নিচতলায় ববি শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।

হামলার শিকার সাংবাদিকরা :

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষের বিচার চাইলেও বিচার পাননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। বরং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বক্তব্য নেয়ায় সাংবাদিকদের পিটিয়েছেন কলেজের শিক্ষকরা। ২৪ আগস্ট ওই ছাত্রী র‌্যাগিংয়ের শিকার হন। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য শনিবার ২৬আগস্ট সাংবাদিকরা কলেজে গেলে হামলার শিকার হন।

কলেজ অধ্যক্ষের কাছে র‍্যাগিংয়ের বিচার চাইতে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এদিন সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ, চিত্র সাংবাদিক সুমন হাসানসহ চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রি‌পোর্টার কাওছার হো‌সেন রানা, বাংলা নিউজ ২৪ এর রিপোর্টার মুসফিক সৌরভ, এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার ফিরোজ মোস্তাফা যান তথ্য সংগ্রহে। এ সময় ভুক্তভোগীর বক্তব্য নেয়ায় সাংবাদিকদের পিটিয়েছেন কলেজের কমিউনিটি মে‌ডি‌সিন বিভা‌গের শিক্ষক ডা. সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভা‌গের সহ‌যোগী অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সাহা।

hos

্যাগিং হামলা: অভিযুক্তকে দিয়েই গঠন করা হলো তদন্ত কমিটি

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালের ছাত্রী হলে র‌্যাগিং ও সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।রবিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে এই কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান উপাধ্যক্ষ জিএম নাজিমুল হক।কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। যার প্রধান করা হয়েছে অধ্যাপক উত্তম কুমার সাহাকে। কমিটির অন্য ৩ সদস্য হলেন- অভিযুক্ত প্রবীর কুমার সাহা, প্রভাষক আনিকা ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম।

309391658 401811268784711 3873952713390289965 n

হাসপাতালের কক্ষ ব্যাংকের কাছে ভাড়া :

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যাসংকট সত্ত্বেও নিচতলায় একটি বেসরকারি ব্যাংককে কক্ষ ভাড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আপন ছোট ভাইকে ব্যাংকটির চাকরিতে স্থায়ী করতে এ কাজ করেছেন তিনি।হাসপাতালে শয্যাসংকটে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। বারান্দা, শৌচাগারসহ কোথাও নেই একটুও হাঁটার জায়গা। এমন দুর্ভোগের মধ্যেই হাসপাতালের নিচতলায় একটি বেসরকারি ব্যাংককে ভাড়া দেয়া হয়েছে কক্ষবরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, ‘হাসপাতালের পরিচালক তার ছোট ভাইকে চাকরি দেয়ার সুবাদে হাসপাতালের ভেতর ব্যাংক ভাড়া দিয়েছে। এমন অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। হাসপাতালের বাইরে অনেক খালি ভবন রয়েছে। সেখানে ব্যাংক স্থাপন হলেও চলত। হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের ভেতর ব্যাংকটি অবিলম্বে সরিয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি নিয়ম মেনে হাসপাতালের নিচতলায় এক হাজার স্কয়ার ফুট জায়গা ভাড়া দেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া আসে সেখান থেকে। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।এ বিষয়ে ভাড়া নেয়া বেসরকারি ব্যাংকটির কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিমাসের ভাড়া নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়া হয়। হাসপাতালের ভেতরে ব্যাংকটি খোলা হয়েছে রোগীদের সেবা দেয়ার জন্যই। আমরা চাই রোগীরা নিরাপদে টাকা-পয়সা লেনদেন করুক।ডা. সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই মনির হোসেন বলেন, ‘আমি নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমার চাকরির বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরও ভালো জানে।

a3bb12e76fa0e5d442fee53404697138279bc583f89074ac

নার্সদের ঘুমে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা :

মধ্যরাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোগী ও স্বজনদের দাবি, সেবা না দিয়ে হাসপাতালের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকেন দায়িত্বরতরা। ডাকাডাকি করেও প্রয়োজনে পাশে পান না নার্সদের। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার দায়সারা জবাব হাসপাতাল প্রশাসনের।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে রাতে বিছানার চাদর টাঙিয়ে ঘুমাচ্ছেন নার্সরা। দরজার সামনে অপেক্ষায় রোগী ও তাদের স্বজনরা। শুধু মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডেই নয়, এমন অবস্থা হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, ডাকাডাকি করেও প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না নার্সদের। রাতে সেবা চাইতে গেলে উল্টো খারাপ ব্যবহার করেন তারা।রোগীরা জানান, ঠিকমতো নার্সরা আসেন না। সেবা তো দূরে থাক, প্রয়োজনের সময় অনুরোধ করেও আনা যায় না তাদের। ডাক্তার আর প্রশাসনের কাছে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে দাবি তাদের। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেন নার্সরা। তারা জানান, রোগীরা যখন আসে তখনই সেবা দেয়া হয় তাদের। পাশাপাশি রাতে রোটেশন অনুযায়ী সেবা দেয়া হয় রোগীদের। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দৈনিক গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ২ হাজার। আর তাদের সেবা দিতে বর্তমানে নার্স আছেন ৯৪৬ জন।

dc561363dca4ca3831e0d80ba31fbc5644a3540c9d680fce

বছরজুড়ে কার্ডিয়াক বিভাগের এসি বিকল, গরমে রোগীদের ভোগান্তি

এক বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের সব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন। একে তো চলছে তীব্র দাবদাহ, তার ওপর মাত্র ৪৩টি শয্যার বিপরীতে রোগী থাকেন প্রায় দ্বিগুণ। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করেও সমাধান মিলছে না। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কার্ডিওলজি বিভাগে তারা বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। বাইরে প্রচণ্ড গরম। ভেতরে মানুষ ঠাসাঠাসি। এসি না থাকায় তাদের খুব সমস্যা হচ্ছে।

চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সিসিইউ ও পিসিসিউতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। কার্ডিওলজি বিভাগে শয্যা সংখ্যা ৪৩টি। কিন্তু রোগী প্রায় দ্বিগুণ। মেঝেতে শুয়েও নিতে হয় চিকিৎসা।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সিসিইউতে থাকা ১০টি, পিসিসিউর ৮টি, ইকো ও ইটিটি কক্ষে ১টি করে মোট ২০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেশিনের সবই বিকল। দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করেও সমাধান মিলেনি বলে জানান পরিচালক।বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে থাকা ২০টি এয়ার কন্ডিশনই ব্যবহার অনুপযোগী। বিভিন্ন দফতরে লিখিত জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।’  তবে দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের দাবি, রোগীদের কষ্ট লাঘবে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে। বরিশাল গণপূর্ত মেডিকেল কলেজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করা হবে। যাতে করে রোগী ও স্বজনদের কষ্ট লাঘব হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে দৈনিক গড়ে ২ হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। আর প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা নেন তিন হাজার রোগী।

a0385b2f0bbae49d3ed78edc1dbe6bc3b9b31005be544b59

শয্যা সংকট, মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা

প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছরেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অত্যাধুনিকসব যন্ত্রপাতি থাকলেও অধিকাংশই বিকল। ভোগান্তির অপর নাম শয্যা সংকট। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও সমস্যার সমাধান না পাওয়ার আক্ষেপ খোদ হাসপাতালের পরিচালকের। শয্যা সংকটে মেঝেতেই চলছে চিকিৎসাসেবা। ৫৪ বছর আগে নির্মাণ করা হাসপাতালটির ভবনের অবস্থাও জরাজীর্ণ। খসে পড়ছে পলেস্তারা। পানি সংকট ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণেরও অভিযোগ রয়েছে নার্সসহ হাসপাতালের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।দীর্ঘদিন ধরে বিকল এমআরআই, সিটিস্ক্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। তাই স্বাস্থ্যের যেকোনো পরীক্ষায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোই ভরসা রোগীদের।বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় ইমার্জেন্সি মোকাবিলা করতে পারি না। তবে প্যাথলজি বিভাগে আমরা দুই শিফট চালু করেছি।’ সংকটের বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েও কোনো সমাধান মিলছে না বলে আক্ষেপ করেন হাসপাতাল পরিচালক।

aacb0e85627a6e811606fee3c4ee7d199d32962a10809e8b

রমরমা ট্রলি বাণিজ্য, বিপাকে রোগীরা :

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালে জমে ওঠেছে ট্রলির ব্যবসা। কোনো রোগী টাকা ছাড়া ট্রলিতে উঠতে পারে না। এছাড়া প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির কথা জানে বলেও সরল স্বীকারোক্তি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে ঢুকতেই ইমারজেন্সি চত্বরে দেখা যায় বেশ কয়েকটা ট্রলি। আর এখানেই ঝগড়া-বিবাদ। হাসপাতালে ট্রলি পেতে এমন বাগ্‌বিতণ্ডা নিত্যদিনের। ট্রলিতে রোগী উঠলেই গুনতে হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, নিচে পরীক্ষা করতে গেলে যার ট্রলি তাকে ১০০ টাকা দেয়া লাগে। এ ছাড়া রোগী সুস্থ হোক বা না হোক, নাশতা খাওয়ার টাকা দিতে হবে।রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, ট্রলিতে আসা-যাওয়াসহ বিছানার চাদর পাওয়া,পরিষ্কার করানো থেকে শুরু করে যে কোনো বিনামূল্যের সরকারি সুবিধা ভোগ করতে টাকা দিতে হয় একদল স্বেচ্ছাসেবক নামধারীদের। আর সরকারি স্টাফরা দুর্ব্যবহার করেন রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে। রোগী ও স্বজনরা বলেন, ২০০ টাকা দিতেই হবে। না হলে তারা এমনভাবে রোগীকে টান দেয় যে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা এসব কর্মী ছড়িয়ে আছেন হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই কাজের বিনিময়ে খুশি হয়ে যা দেয় সেটাই তারা নেয়। স্বেচ্ছাসেবকরা বলেন, ‘আমরা জোর করে টাকা নেই না। রোগীকে পৌঁছে দিলে স্বেচ্ছায় কিছু টাকা তারা দেন। সেগুলো নিয়ে থাকি।হাসপাতালের বিভিন্ন শাখায় এসব নামধারী স্বেচ্ছাসেবক আছেন অন্তত ২৫০ জন। চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মী সংকট থাকায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

3f64b265583f9c5293c3d5a8100e6b799c15f2176a6ad43e

পানির জন্য হাহাকার :

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাহিদার অর্ধেকেরও কম পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী, স্বজনসহ কর্মচারীরা। সংকট নিরসনে স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। লিফটে পানি নিয়ে ওঠা যাবে না। তাই ৫তলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে বালতিতে পানি নিয়ে উঠছেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। প্রতিনিয়ত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমন চিত্র। শুধু তিনিই নন, পানির নিদারুণ কষ্টে আছেন তিন তলার সার্জারি নারী ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের পাশে থাকা স্বজনরা। হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোরে পানিসংকটের ভোগান্তি সইতে হচ্ছে তাদের। মাসখানেক ধরে হাসপাতালের আনসার কোয়ার্টারে পানির সংকট পৌঁছেছে চরমে। দিনে দুবার যে পানি দেয়া হচ্ছে, তা-ও আবার ব্যবহার অনুপযোগী। বারবার বলা সত্ত্বেও মিলছে না কোনো স্থায়ী সমাধান। শেবাচিমের আনসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২ ঘণ্টা পানি থাকে; সেটাও দুগন্ধযুক্ত ও ময়লা। এখানে খাওয়ার মতো পানি নেই।প্রতিদিন হাসপাতালে রোগী, স্বজন, চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষার্থী, স্টাফ, আনসার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ৫ থেকে ৬ লাখ গ্যালন পানি ব্যবহারের চাহিদা রয়েছে। অথচ মাত্র দুটি সেন্ট্রাল পাম্পের মাধ্যমে ট্যাঙ্কে পানি উঠানো হয় মোট চাহিদার অর্ধেকেরও কম।বরিশাল গণপূর্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলেন, এখানে যে পানি সরবরাহের সিস্টেম; এটা ১৯৬৮ সালে যেভাবে চলত এখনো ঠিক সেভাবে চলছে। কোনো আপডেট করা হয়নি।রোগীদের চাপ বাড়লেও সে অনুযায়ী পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়েনি।

0ee574d7858d4b02ae00a8e4686f83c72518b06f573f1f17

বার্ন ইউনিট বন্ধ, বিপাকে দগ্ধ রোগীরা :

যাত্রীবোঝাই লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের উদ্ধার করে পাঠানো হয় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে হাসপাতালের বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় চিকিৎসা চলে সার্জারি বিভাগে। একসঙ্গে এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

প্রায় ৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এম‌ভি অভিযান-১০ নামে ল‌ঞ্চে অগ্নিদগ্ধ ৭২ জন রোগী।রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, সার্জারি বিভাগে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরাই রোগীদের একমাত্র ভরসা। হাসপাতালটির বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন দগ্ধ রোগীরা। সার্জারি ওয়ার্ডের আগে থেকে অনেক রোগী ভর্তি থাকায় দগ্ধদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচতলায় আটটি শয্যা নিয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু করা হয়েছিল। বিভাগে আটজন চিকিৎসক ও ১৬ জন নার্সের পদ রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিটটি ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। চালু থাকা পাঁচ বছরে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি রোগী বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন।শেবাচিমের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. এমএ আজাদের রহস্যজনক মৃত্যুর পর ইউনিটটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

650f9b4cad974aa6bc63defc1043417f0f891ca4eedfd640

ধুঁকে ধুঁকে চলছে চিকিৎসাসেবা :

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের মেশিনগুলোর অর্ধেকেরও বেশি অচল। ব্যক্তি মালিকানার ল্যাবের সঙ্গে হাসপাতালের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় বছরের পর বছর পার হলেও সরকারের ডায়াগনস্টিক মেশিন সচল হচ্ছে না। এতে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগী নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে চিকিৎসাসেবা। বরিশাল  শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটির একমাত্র এমআরআই মেশিনটি ২০০৭ সালে চালু হয়। ৯ বছর কোনোমতে চললেও, গত ৬ বছর ধরে বিকল। এছাড়াও হাসপাতলের একমাত্র সিটি স্কান মেশিনটি চালু হয় ২০১৪ সালে। গত ৪ বছর ধরে বন্ধ। আরও জানা গেছে, হাসপাতালের ২২টি ইউনিটি মোট ৪৫০টি মেশিনের মধ্যে পুরোপুরি অচল ৮৫টি আর মেরামতযোগ্য আছে ৭৪টা মেশিন। সচল রয়েছে ২৯১টি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরকারি মেশিনগুলো যখন অচল, তখন হাসপাতালের আশপাশে একের পর এক গড়ে উঠছে ব্যক্তি মালিকানার ল্যাব। রোগীদের অভিযোগ, সরকারি মেশিন নষ্টের অজুহাত দেখিয়ে বেশি টাকায় বাধ্য করা হয় বাইরের ল্যাবে পরীক্ষা করাতে। এসব ল্যাবের সঙ্গে হাসপাতালের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অথচ ধারণ ক্ষমতার প্রতিদিন তিনগুণ বেশি রোগী সেবা নেয় এই হাসপাতাল থেকে।

ac7efc81a87ecf69cf89086366337c0020f60802c40e6634

অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও :

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ড থেকে ১শ’ অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ৩০টি সিলিন্ডার মিটার উধাও হয়ে গেছে।

এ ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সন্ধান চালিয়ে উধাও হওয়া কোন সিলিন্ডার উদ্ধার করতে পারেনি তারা। মেডিকেলের স্টোর সূত্র জানায়, করোনা ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাস্টারদের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও সিলিন্ডার মিটার সরবরাহ করা হয়। কোন ওয়ার্ডে কতটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও সিলিন্ডার মিটার নেয়া হয়েছে তার তালিকা করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন ওয়ার্ড তল্লাশি করে অন্তত ১শ’ সিলিন্ডার ও ৩০টি সিলিন্ডার মিটারের হদিস পাওয়া যায়নি। নন কোভিড ওয়ার্ডেও সেগুলোর খোঁজ মেলেনি। বিষয়টি পরিচালককে অবহিত করা হলে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

sher e bangla medical college hospital 1662451801

৮টার অফিসে ১০টায়ও যান না চিকিৎসকরা :

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল সকাল সোয়া ৯টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে গিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষককে (চিকিৎসক) অনুপস্থিত পেয়েছেন। পরে ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনের কাছে চিকিৎসকদের গত এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরা রিপোর্ট দেখতে চাইলে অধ্যক্ষ দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধ্যক্ষের বাদানুবাদ হয়েছে।সকাল ৮টায় কর্মস্থলে হাজিরার কথা থাকলেও বরিশাল মেডিকেল কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষক ১০টার পরে কর্মস্থলে যান। তাঁরা রাত ২-৩টা পর্যন্ত প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন। বিশেষ করে নিউরোলজি মেডিসিনের ডা. অমিতাভ সরকার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় দুদক কর্মকর্তারা মেডিকেল কলেজে অভিযান চালান। এ দিনও এই দুই চিকিৎসককে সকাল সাড়ে ৯টায় কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি।বরিশাল দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল সকাল ৯টার দিকে প্রথমে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। দলের সদস্যরা বহির্বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে পরিচালকের কক্ষে গিয়ে বসেন। সেখান থেকে সকাল সোয়া ৯টায় যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামানের কার্যালয়ে। তখন তিনি কক্ষে ছিলেন না। দুদক দল আসার খবর পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে কার্যালয়ে পৌঁছান। তাঁর কাছে গত এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরা রিপোর্ট চাইলে দিতে অস্বীকার করে তিনি দুদক টিমের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দুদক টিমের ছবি তুলে রাখার হুমকি দিচ্ছেন অধ্যক্ষ। তখন দুদকের এক কর্মকর্তা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিলে অধ্যক্ষ পাল্টা বলেন, ‘আমি উড়ে এসেছি নাকি?’ এর কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা একে একে অধ্যক্ষের কক্ষে আসা শুরু করেন। তাঁরা সকাল ১০টার দিকে হাজিরা দেন অধ্যক্ষের কক্ষে। সাড়ে ১০টার দিকে দুদক টিম মেডিকেল কলেজ ত্যাগ করে।

saa

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন :

মানববন্ধনে বক্তারা হাসপাতালের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, অকেজো যন্ত্রপাতি চালু, লিফট, এসি সচলসহ দালালের দৌরাত্ম্য রোধের দাবি জানান। তারা চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের সেবা না পাওয়ারও প্রতিবাদ করেন। আর এ জন্য হাসপাতালে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের তাগিদ দেন। রেহানা বেগমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান বক্তা বেসরকারি সংস্থা স্কোপ এর নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘শেবাচিম হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে সেবা থেকে রোগীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের এখানে চিকিৎসা হচ্ছে না। তাদের ঢাকায় রেফার করা দুঃখজনক। এমনটাই যদি করতে হয়, তাহলে বড় বড় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা কি করেন।’ তিনি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের তাগিদ দেন।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

Collage

মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড’র ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দুই ডিজিএম

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড আন্তর্জাতিক মানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবামূলক যন্ত্রপাতি সরবরাহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *