qws

কুয়েতে ২৭ হাজার টাকা বেতনের ভিসা দাম ৭ লাখ টাকা

print news

জাহিদ হোসেন জনি
কুয়েত প্রতিনিধি

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত। জীবন জীবিকার তাগিদে এখানে আড়াই লাখেরও বেশি বাংলাদেশির বসবাস। এদের বেশির ভাগই আখুদ হুকুমা আকামাধারি ভিসায় জমিয়েছেন। প্রবাসে আসার আগে খুব কম সংখ্যক লোক এই ভিসা সম্পর্কে ধারণা রাখে। এই আকামাধারির অধিকাংশ ক্লিনার কোম্পানিতে কাজ করেন। যাদের বেতন মাত্র ৭৫ দিনার। বাংলাতে যা ২৭ হাজার টাকা।

২০১৮ সালে কুয়েতের একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে আসছেন লক্ষীপুরের বেলাল উদ্দিন(ছদ্মনাম)। তিনি জানতেন না তিনি আসলে কি ভিসায় আসছেন। দালালের ফাঁদে পড়ে ঋণ নিয়ে তার প্রবাসযাত্রা। ক্লিনার ভিসাতে যারা আসেন এদের বেশিরভাগই পার্টটাইম নিয়ে নিজেকে চালিয়ে নেন। যারা এই পার্টটাইমের সুযোগ পাইনা তারা বছরের পর বছর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে হয়। নিজের শখ পূরণ করা তো দূরের কথা পরিবারের চাহিদাও ঠিকমত পূরণ করতে পারে না।

“দেশ থেকে আসার পর ৫ মাস বসে ছিলাম। কোম্পানি খবর নেয় নাই। কোম্পানির ব্রাকে(আবাসস্থল) ছিলাম বলে থাকার চিন্তা না করলেও খাওয়ার চিন্তা ঠিকি ছিল। সেই খরচ যোগাতে আবারো ধারদেনা করতে হলো। পরবর্তীতে একটা পার্টটাইম ম্যানেজ করলাম। পার্টটাইম নেওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পেলাম। ৩ মাস পর আসলো করোনা। করোনায় পার্টটাইম বন্ধ হয়ে গেল। এবার তো আমার ঘুম নেই। এতগুলো টাকার ঋণ কিভাবে কি করবো”! নিজের কষ্টের কথাগুলো বলতে থাকলেন বেলাল উদ্দিন।

তিনি জানান, “করোনাতে ডিউটি বন্ধ হয়ে গেলে হয়তো আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকতো না। বাড়ি থেকে আর কত টাকা নিব। একদিকে নিজের খরচ অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ। বাড়িতে টাকা পাঠানো তো অনেক দূরের কথা। সব মিলিয়ে হতাশায় দিন কাটছিল। বিদেশ এসে যেন মহাপাপ করলাম। করোনার সময় অনেক কষ্ট করে চলছি। যেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। করোনার প্রকোপ কমার পর পুনরায় পার্টটাইম শুরু করলাম। এই কোম্পানিতে আমার মত অনেকের একই অবস্থা। কেউ কেউ তো পার্টটাইম করতে গিয়ে ধরা খেয়ে দেশে চলে গেছে। আবার অনেকে ছুটিতে গিয়ে আর আসতেও পারে নাই। সাড়ে চার বছর হয়ে গেছে এখনো আসছি যে সেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে হয়”।

বেলাল উদ্দিনের মত হাজারো কুয়েত প্রবাসীর অভিযোগ, কেন বাংলাদেশ থেকে কুয়েত আসতে আমাদের ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে? যেখানে কিনা ভারতীয় নেপালীরা আসে মাত্র ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। কুয়েতে কোম্পানিগুলো নামমাত্র টাকা নিয়ে ভিসা দেয়। বাংলাদেশিদের জন্য সেই ভিসার দাম হয়ে যায় ৭ লাখ টাকা। বাকি সব টাকা চলে যায় দালালের পকেটে। অথচ সরকারের এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেই।

কুয়েতের সরকারীভাবে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বের করতে লাগে বিশেষ অনুমতি পেপার, যাকে আরবিতে লামানা বলে, লামানা পদ্ধতি ছাড়া ভিসা বের করা সম্ভব হয় না। এখানে বাংলাদেশীদের ভিসা বের করার জন্য মন্ত্রী বরাবর দরখাস্ত করতে হয়। সেটাও আবার অনেক দালালদের মাধ্যমে। এভাবে ভিসার দাম ৭ থেকে ১০ লাখ টাকায় পৌঁছায়। ভিসা পেতেও অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আবার একটা ভিসা বের করতে বছরের পর বছর চলে যায়।

ক্লিনার কোম্পানিগুলোর বেতন কম হওয়ায় বাংলাদেশীরা কুয়েতে এসে প্রায় ৯০% লোক বৈধ একামা পাসপোর্ট ভিসা থাকা সত্বেও অবৈধভাবে পার্টটাইম কাজ করেন, যা এদেশের আইনের লঙ্ঘন। ৮ ঘন্টা কোম্পানির অথবা মালিকানায় কাজ করার পর অনেকে কোম্পানির বাহিরে বিভিন্ন কাজ করেন, যেমন গাড়ি পরিষ্কার করা, সবজি বিক্রি করা, বিভিন্ন মার্কেটে অফিসে দোকানে ফ্যাক্টরিতে কাজ করা। যা এদেশের আইনে সম্পূর্ণ নিষেধ। যেহতু পার্টটাইম ছাড়া উপায় নেই সেহেতু স্থানিয় আইনের তোয়াক্কা না করে বাইরে কাজ করে।

“কয়েকদিন আগে শুনলাম কুয়েতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ১৯০ দিনার বেতনে ভারত থেকে কর্মী নিয়ে আসছেন। তাদের ভিসার খরচ একদম ফ্রী। শুধুমাত্র নামমাত্র খরচ দিয়ে আসবে। একই ভিসায় একই কাজে তো আমরাও আসছি। তাহলে কেন আমাদের বেতনের এত বৈষম্য? আমাদের কেন ৭ লাখ টাকা দিয়ে আসতে হয়”? এমনটায় প্রশ্ন কুয়েত প্রবাসী বেলাল উদ্দিনের মতো হাজারো কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীদের৷

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

1715842415.Fallen 5 faces 640x400 1

পাঁচ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :  গাজার জাবালিয়ায় নিজেদের গোলতেই নিহত হয়েছেন পাঁচ ইসরায়েলি সৈন্য। নিহত সৈন্যরা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *