ঝালকাঠি প্রতিনিধি : তিন মাস আগে জমকালো আয়োজনে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল চত্বরে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার ৯ তলা ভবনের হাসপাতাল উদ্বোধন করা হলেও শুরু হয়নি চিকিৎসাসেবা। জটিল কোনো রোগদেখা দিলে এখনো ঝালকাঠিবাসীকে যেতে হচ্ছে বিভাগীয় শহর বরিশালে। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালটির অবকাঠামোর কাজ চলছে। আগামী জুনের মধ্যে ভবনটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর ২৫০ শয্যার ৯ তলা ভবনের হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। উদ্বোধনের তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখনো সেখানে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি। ১৮ মাসের কাজ শেষ হয়নি সাড়ে পাঁচ বছরেও। বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। শুরু থেকেই কচ্ছপ গতিতে চলে নির্মাণকাজ। মাঝে নানা অজুহাতে কয়েক দফায় কাজ বন্ধও রেখেছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কার্যাদেশ অনুযায়ী ১৮ মাসে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রেখে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ৩৪ কোটি ৮০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার ঝালকাঠি সদর হাপাতালের ১১ তলা ফাউন্ডেশনের ছয় তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী দেড় বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো অসম্পূর্ণ। পরে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও চার বছরের মাথায় পুরো কাজ শেষ না করেই গত বছরের ১৭ অক্টোবর হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু তা কেবল কাগজে-কলমেই আছে। এখনো ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
তড়িঘড়ি করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হলেও চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা। এখনো হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ চলছে। চিকিৎসা সেবার উন্নত যন্ত্রপাতির কিছুই স্থাপন হয়নি। এখনো স্থাপন করা হয়নি আইসোলেশন ইউনিট, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও লিফট। ফলে কোনো সুফল মিলছে না এ প্রকল্প থেকে। জটিল কোনো রোগে এখনো ঝালকাঠিবাসীকে যেতে হচ্ছে বিভাগীয় শহর বরিশালে। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে অবকাঠামোর কাজই চলছে।
২০১৮ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন শিল্প মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু ১০০ শয্যা সদর হাসপাতাল চত্বরে ২৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির আওতায় জেলা সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্প গ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগ। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হলে জেলার আট লাখ মানুষ এখান থেকে আধুনিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবে।
১৯৮৩ সালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫০ শয্যার অনুমোদন মেলে ১৯৮৫ সালে। ২০০৩ সালে ১০০ শয্যার প্রতিষ্ঠানিক অনুমতি পায়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ১০০ শয্যার জনবল অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দে প্রাথমিকভাবে ৬ তলা এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও জিএম কনস্ট্রাকশন। মূল নকশায় ১১ তলা এ ভবনের ৭ম, ৮ম ও ৯ম তলার কাজের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭০ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার টাকা করা হয়। লিফটসহ আধুনিক সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে এ হাসপাতালটিতে।
হাসপাতালের প্রথম তলায় বহির্বিভাগে রোগী দেখার জন্য চিকিৎসকদের চেম্বার ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাব থাকবে। ৭ম ও ৮ম তলায় থাকবে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিন। ৯ম তলায় থাকবে আইসোলেশন ওয়ার্ড, কিডনি ডাইলোসিস কক্ষ, অপারেশন থিয়েটারসহ প্রশাসনিক অফিস।
ঝালকাঠির সামাজিক সংগঠন ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির (ইয়াস) সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন রানা বলেন, আমি আম্মুর পায়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাই। ডাক্তার দেখানোর পরে কিছু টেস্ট দেওয়া হয়। ভেবেছিলাম আম্মুর ট্রিটমেন্টের সব টেস্ট এখানেই পাব। টেস্ট করাতে গিয়ে জানলাম ব্লাড বিষয়ক টেস্ট ছাড়া এক্স-রে বন্ধ আছে। শেষে বাধ্য হয়ে বাহিরের ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করতে হয়েছে। নতুন ভবনটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করলে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষকে সামান্য বা জটিল রোগেও বরিশাল যেতে হবে না। সেই আশা রেখে এই হাসপাতালে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তারদের নিয়োগ ও উন্নত চিকিৎসার সকল যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের দাবি জানাই।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা নাগপারা এলাকার মো. মনির হোসেন বলেন, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, কাশি, সর্দি, জ্বর এসবের চিকিৎসা ছাড়া আর বড় কোনো সমস্যার চিকিৎসা এই ঝালকাঠিতে পাই না। এতো বড় দালানের হাসপাতাল, এতো টাকার দামি যন্ত্রপাতি, এসব কি আমাদের উপকারে আসবে?
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সারেংগল এলাকার মোসা. কোহিনুর বেগম বলেন, এই হাসপাতালে ভালো মেডিসিন ও সার্জারির চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। একটু বড় কোনো সমস্যা হলেই বরিশালে পাঠায়। আমাগো মতো গরিব মানুষের কি বরিশালে গিয়ে টাকা খরচ করে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব? মোরা গরিব মানুষ। ঝালকাঠি হাসপাতাল বাড়ির কাছাকাছি আছে। তাও ১০০টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে আইতে হয়। এহানে যদি সব চিকিৎসা সেবা চালু হতো হেলে মোগো মতো গরিব মানুষের উপকার হতো।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ বলেন, নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতির মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজে বিলম্ব হয়েছে। আগামী জুন মাসে হাসপাতালটিতে সেবা কার্যক্রম চালু হবে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news