Breaking News
prothomalo bangla 2023 06 fdbf65e1 cd99 4ff2 ac95 edd2b6166e8a 3af56b58 e8d7 4249 9b9e c97597f6dfb8

চিকিৎসায় অবহেলা প্রতিকারে পূর্ণাঙ্গ আইন নেই

print news

দিদারুল আলম : চিকিৎসায় অবহেলা প্রতিকারে দেশে পূর্ণাঙ্গ কোনো আইন নাই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কিছুটা প্রতিকারের বিধান থাকলেও তাতে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ করতে দেখা যায় না। তবে চিকিৎসায় অবহেলার ঘটনায় কেউ দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের। আবার অনেক ভুক্তভোগী মামলা করেন দণ্ডবিধি আইনে। সেই মামলায় অনেক সময় চিকিৎসককে পাঠানো হয় জেলহাজতে। দণ্ডবিধিতে মামলা করলেও প্রতিকার পাওয়ার নজির খুব একটা দেখা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসায় অবহেলা প্রতিকারে এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে আইন কমিশন।

আট বছর আগে ‘স্বাস্থ্যসেবা আইন’ নামে ঐ খসড়া প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে। ২০১৭ সালের সেই খসড়া পুনরায় সংশোধন ও পরিমার্জন করে সোমবার আবারও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আইন কমিশন। খসড়াটিকে আইনে রূপ দিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, মহাপরাক্রমশালী ব্যক্তিরাও অসুস্থ হন। অসুস্থ হন চিকিৎসকেরাও। এজন্য দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানের উন্নতি জরুরি। কারণ মানুষের সুস্থতা সবার আগে। যদি মানুষ সুস্থ না থাকে, তাহলে সব অর্জন বৃথা যাবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের হাজার হাজার লোক বিদেশে চিকিৎসার জন্য ছুটছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ওপর তাদের আস্থা না থাকায় বিদেশে ছুটছেন। এ অবস্থা থেকে দেশের মানুষকে বের করে আনতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইত্তেফাককে বলেন, ‘আইন কমিশনের খসড়াটি আমি পেয়েছি। এটা দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কমিশনের খসড়ায় যা বলা হয়েছে:

স্বাস্থ্যসেবা আইনের খসড়ায় ৬৫টি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। পরিচ্ছেদ রয়েছে ১৪টি। খসড়ায় চিকিৎসক, চিকিত্সাসহায়ক কর্মচারী ও চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সংঘটিত বিভিন্ন প্রকারের অবহেলা এবং এর ফলে সৃষ্ট ক্ষতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এছাড়া অবহেলার ধরন অনুযায়ী দেওয়ানি ও ফৌজদারি প্রতিকারের জন্য বিধান রাখা হয়েছে।

খসড়ায় চিকিৎসক কর্তৃক যথাযথ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অর্থাৎ ভুল চিকিৎসা করা; রোগ নির্ণয়ে ভুল করা; ভুল ওষুধ প্রদান; ভুল অঙ্গ অপসারণ; ভুল বা অতিরঞ্জিত রিপোর্ট প্রদান; জরুরি ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রদানে অহেতুক বিলম্ব করা; অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক টেস্ট দেওয়া; ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় এবং বিভিন্ন কোম্পানির একই ওষুধ বারবার প্রদান করা; প্রয়োজন ছাড়া নিজ ক্ষেত্রের বা এক্তিয়ারের বাইরে চিকিৎসা দেওয়া; চিকিৎসার নির্ধারিত প্রটোকল অনুসরণ না করা; চিকিৎসকের কাজ নিজে না করে নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় বা অন্য কারো দ্বারা করানো; প্রয়োজনের তুলনায় কম বা মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রদানকে অবহেলার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু চিকিৎসকই নন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অবহেলার বিষয়টিও অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। অর্থাৎ, রোগীর চিকিত্সাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে নিয়মিত তদারকি না করা; পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম না রাখা; প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ নার্স, রোগীর চিকিৎসা-সংক্রান্ত চিকিৎসকের মতামত, ব্যবস্থাপত্র ও মন্তব্যসংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষণ না করা; সব ধরনের জরুরি ওষুধের ব্যবস্থা না রাখা; অটোক্লেভের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল (শল্য চিকিৎসার) যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা না রাখা; হাসপাতালে উদ্ভূত সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া; প্রতিটি চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মানের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা অবহেলার পর্যায়ে পড়বে।

খসড়ায় চিকিৎসাসেবায় অবহেলাজনিত ক্ষতি বলতে শারীরিক ক্ষতি—অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানো, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হারানো, স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসমর্থতা ইত্যাদি; মানসিক ক্ষতি—মানসিক ভারসাম্য হারানো, প্রিয়জন হারানো, মানসিক চাপ তৈরি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সামষ্টিক ক্ষতি—রোগীর মৃত্যু, প্রজননক্ষমতা হারানো, দাম্পত্য জীবন নির্বাহে অসমর্থতা, সামগ্রিকভাবে সাংসারিক দায়িত্ব পালনে অসমর্থতা ইত্যাদি। সৃষ্ট ক্ষতি নিরূপণ ও তার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ এবং আদায়ের লক্ষ্যে দেশে এক বা একাধিক ‘স্বাস্থ্যসেবা বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনাল’ গঠনসহ উক্ত ট্রাইব্যুনালসমূহের কার্যপ্রণালি, তথা স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত অভিযোগ, তদন্ত, আপিল, কমিশন গঠনসহ প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে খসড়ায়।

বিদ্যমান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে যা বলা হয়েছে:

এই আইনের ৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সেবা প্রদানকারী অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটালে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৭৩ ধারায় বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে পরিচালিত স্বাস্থ্য পরিসেবা পরিবীক্ষণ করে পরিলক্ষিত ত্রুটি-বিচ্যুতি উদঘাটন করার ক্ষমতা মহাপরিচালকের থাকবে। তবে পরিলক্ষিত ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়ে প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা মহাপরিচালক গ্রহণ করবেন না। তিনি সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করবেন মাত্র।

এই আইন সম্পর্কে আইন কমিশন বলছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে চিকিৎসা অবহেলার প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। যেখানে একজন রোগী ভোক্তা হিসেবে উপযুক্ত সেবা না পেলে আদালতে প্রতিকার পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সহজ নয়। ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে, অর্থাৎ রোগীকে প্রথমে যেতে হবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। এই আইনের সাধারণ নীতি চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপযোগী হিসাবে বিবেচিত নয়।

প্রসঙ্গত, আইন কমিশনের এই খসড়া বাস্তবায়নের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন আইনজীবী মো. শিশির মনির। সুন্নতে খত্না করাতে গিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় করা রিট মামলায় ইন্টারভেনর হিসেবে তিনি এই আবেদন করেন।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

MlUUzyJ5HkNwSq1laPEgspMb05GowIhDm0TDfQlO

উদ্দীপ্ত কৈশোর বনাম কিশোর গ্যাং

 রুমা মোদক : কিশোর গ্যাং শব্দটির সঙ্গে ঠিক কবে পরিচয় ঘটেছিল? খেলার সাথি, গলাগলি কিংবা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *