08903d8fb3b9d4c2905b19779a0e5e09 65b653504bf2b

নিষিদ্ধ কোচিং সেন্টারের ছড়াছড়ি, হাত গুটিয়ে বসে আছে মাউশি

print news

ঢাকা প্রতিনিধি : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে ২০১২ সালে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা’ জারি করে সরকার। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারেন না। তবে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারেন। তবে ওই শিক্ষার্থীদের নাম, রোল ও শ্রেণি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে জানাতে হবে। এ নীতিমালা ঢাকাসহ দেশের কোথাও মানা হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চুপচাপ। নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’ (মাউশি) বসে আছে ‘হাত গুটিয়ে’। ফলে এটি এখন ‘কাগুজে নাতিমালা’য় পরিণত হয়েছে। সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে  স্কুল শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন শত শত কোচিং সেন্টার। সেখানে ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী পড়তে আসছে বেশি।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মূল ক্যাম্পাস, শাখা ক্যাম্পাসগুলোর আশপাশে হাঁটলে কোচিং সেন্টারের বহু সাইনবোর্ড চোখে পড়ে, যেগুলো ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা চালান।

সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছে তার কোচিং সেন্টারের ছাত্রীরা। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তিনি দুই দিনের রিমান্ডে আছেন।

শিক্ষকরা কোচিং সেন্টার খুলতে পারেন না
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসারে, কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারেন না। নিজে কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়তে উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতেও পারেন না।

আরও পড়ুন: উইলস’র শিক্ষক নাসিরের কোচিং ও টিউশন বাণিজ্য জমজমাট

 

ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মহানগরী এলাকার প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে তিনশ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুইশ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড়শ টাকা নেওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান ইচ্ছা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এ অতিরিক্ত কোচিংয়ের টাকা কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন।

তবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ কোচিং বাণিজ্যরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধে তদারকি করতে মেট্রোপলিটন ও বিভাগীয় এলাকার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে ৯ সদস্যের কমিটি থাকার কথা। জেলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে আট সদস্যের কমিটি গঠনের কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। বাস্তবে এসব কমিটির কার্যকারিতা দেখা যায় না।

নীতিমালা অনুসারে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতনভাতা স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন একধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তি হতে পারে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওহীন শিক্ষকের বেলাও একই শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এমপিওহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের ক্ষেত্রেও একই শাস্তির কথা বলা রয়েছে নীতিমালায়। তবে এক যুগে একজন শিক্ষককেও কোচিং সেন্টার পরিচালনার দায়ে শাস্তির মুখে পড়তে দেখা যায়নি।

কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ কোনো ব্যবস্থা না নিলে সরকার ওই পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি ও অধিভুক্তি বাতিল করতে পারবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিমালায় অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত প্রস্তাবিত ‘শিক্ষা আইন’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং সেন্টারে পাঠদান বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কোচিং সেন্টারের ছড়াছড়ি
রাজধানীর শাহজাহানপুরে রয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষকদের অনেক কোচিং সেন্টার। উত্তরা ব্যাংকের গলিসংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে হয়ে উঠেছে স্কুলের বিকল্প; অনেকের কাছে শ্রেণিকক্ষের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে শতাধিক কোচিং সেন্টার। এমনকি ফার্মেসির সাইনবোর্ড টানিয়ে ভেতরে শিক্ষার্থী পড়াতেও দেখা গেছে। আইডিয়াল স্কুলের মতিঝিল ও মুগদা শাখা, মতিঝিল সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরই এসব কোচিং সেন্টারে বেশি আসতে দেখা যায়। পড়াচ্ছেনও এসব শিক্ষালয়ের শিক্ষকরা। তারা এককভাবে অথবা কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছেন কোচিং সেন্টার। ‘বাটারফ্লাই কিন্ডারগার্টেন’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, আইডিয়াল স্কুলের বিভিন্ন শাখার দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়তে এসেছে। চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাসে সব পড়ানো হয় না, কোচিং করলে সিলেবাস শেষ হয়। এক অভিভাবক জানান, ক্লাসে এখন তেমন কিছুই পড়ানো হয় না, সেজন্য কোচিংয়ে পড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। অন্য শিক্ষকের কাছে পড়ানোর চেয়ে স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়ানোকে তিনি ভালো মনে করেন, কারণ তাতে রেজাল্ট ভালো হয়।

এই কোচিং সেন্টারের ইংরেজি শিক্ষক আইডিয়ালের মুগদা শাখার মতিউর রহমানের দাবি, তিনি নিজের শাখার চেয়ে আইডিয়ালের অন্য শাখার শিক্ষার্থীদের বেশি পড়ান। একই স্কুলের বনশ্রী শাখার শিক্ষকরাও বনশ্রী ও আফতাবনগর এলাকায় কোচিং করান। বনশ্রী আইডিয়ালের এক অভিভাবক বলেন, ‘চারজন শিক্ষকের কাছে পড়াতে মাসে ছয় হাজার টাকা চলে যাচ্ছে। এরপর স্কুলের বেতন, টিফিন, যাতায়াতে বাচ্চার জন্য ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।’

মিরপুরের মনিপুর স্কুলের শেওড়াপাড়া, ইব্রাহীমপুর ও রূপনগর শাখার চারপাশে কোচিং সেন্টারের ছড়াছড়ি। রূপনগরে ‘চারুপাঠ’ নামের একটি কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে মনিপুর স্কুলের ব্রাঞ্চ-১ থেকে, যা কয়েকশ গজের মধ্যে। এই স্কুলেরই কয়েক শিক্ষক কোচিং সেন্টারটি চালান বলে জানা যায়।

শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারে যৌন হয়রানির অভিযোগও উঠছে। গত বছর রাজধানীর মালিবাগে মৌচাক মার্কেট এলাকায় এক ছাত্রীকে কোচিং সেন্টারে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক কাজী জামিল উদ্দীনকে (৪৩) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৯৯৯ ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সেটি ছিল একটি আবাসিক কোচিং সেন্টার।

যা বলল মাউশি
কোচিং বাণিজ্যসংক্রান্ত নির্দেশনা শিক্ষকরা না মানার বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকের নিজের প্রতিষ্ঠানের এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের তা নির্ণয় করা খুবই কঠিন। সারাদেশে এটি দেখা, জনবলসাপেক্ষ ব্যাপার, যা মাউশির নেই। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে এখন কোচিং করার, টিউশন পড়ার তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। আমাদের বিশ্বাস, দিনে দিনে কোচিংয়ের প্রবণতা কমে আসবে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

da2d8d74942b83e9231f9d4588695c46 6644ecd450365

কলেজে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : অনলাইনে আবেদনের বিধান রেখে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কলেজে ভর্তি করার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *