ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ তদারকির সময় নেই এলজিইডি কর্মকর্তাদের


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীতে তৈরি প্যালাসাইডিং বলি। যাতে রডও দেয়া হয়নি ঠিকঠাক মতো। কাজের সাইটে পৌঁছতে না পৌঁছতে সেগুলোর বেশির ভাগই ভেঙে গেছে। ভাঙা-দুর্বল এসব বলি বসানোও সারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ২ কোটি টাকার একটি রাস্তার কাজের শুরু এভাবেই। এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি)এর এই কাজ কেমন হবে সেটি এরই মধ্যে বুঝে গেছেন এলাকার মানুষ। কাজের বিষয়ে এলজিইডি’র উপজেলা ও জেলার কর্মকর্তাদের কয়েক দফা অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার মানুষ। কিন্তু কর্মকর্তাদের কেউ সাইটে এসে উঁকিও দেননি। কোনো তদারিক ছাড়াই যাচ্ছেতাই ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নবীনগরের বড়াইল ইউনিয়নের গোসাইপুর বাজার থেকে জালশুকা মতুর বাড়ি পর্যন্ত পাগলা নদী ফেরীঘাট সড়কের সাড়ে ১৩শ’ মিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের কাজ হচ্ছে। প্রকল্পে ৩শ’ মিটার সড়ক রক্ষা প্রকপ্লের কাজও রয়েছে।
২ কোটি ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯০ টাকার এই কাজের ঠিকাদারি পেয়েছেন মেসার্স লোকমান হোসেন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদার আবার নূরু নামের আরেক ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস। গত ২৫শে জানুয়ারি এই কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। কাজটি তদারকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মীর্জা মো. তরিকুল ইসলামও নিম্নমানের কাজ হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার ওই কাজের সাইটে গিয়েছিলেন। তখন দুর্বল ও নিম্নমানের বলি দেখতে পান। সেগুলো সরিয়ে নিতে বলেছেন ঠিকাদারকে। শনিবার বিকালে সরজমিন জালশুকা গ্রামে কাজের স্থানে গিয়ে ভাঙা বলি চোখে পড়ে। এরপর একটু দূরে সরে যেতেই ঠিকাদারের লোকজন সেগুলো সরিয়ে নিতে এবং গাছ দিয়ে ঢেকে ফেলতে তৎপর হয়। ঠিকাদারের কর্মচারী আনিছ মিয়া জানান, বলি বসাচ্ছেন, এরপর গাইড ওয়াল হবে। জালশুকা গ্রামের হারিছ মিয়া জানান, কাজের শুরু থেকেই ভাঙা মাল লাগানো হচ্ছে। বড়াইল ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের অভিযোগ, বলিগুলোতে ৪ সুতা রডের পরিবর্তে ৩ সুতা রড দিয়ে করা হয়েছে। রিংগুলোও ৮ মি.লি. রডের পরিবর্তে তারের। তাও নামমাত্র কয়েকটি দেয়া হয়েছে। কম সিমেন্ট দিয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের বলি বানানো হয়েছে। এগুলো সাইটে তৈরি করার কথা থাকলেও ঠিকাদার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নিয়ে এসেছেন। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিম্নমানের বলি বসানোর কথা জানিয়েও প্রতিকার পাইনি। কাজের গুণগত মান ভালো করার কথা বলার কারণে ঠিকাদার আমাকে হুমকি দিয়েছে। বলেছে আমি যেন ওই রাস্তার পাশে না যাই। উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, চেয়ারম্যান সাহেব রডের ডায়া কম বলে জানানোর পর আমি লোক পাঠিয়েছি। কাজের সাইটে তার যাওয়া হয়নি জানিয়ে বলেন, কাজের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে উপ-সহকারী প্রকৌশলীরই দেখার কথা। তাছাড়া কাজটি শুরুর সময় আমি এখানে ছিলাম না। এক সপ্তাহ আগে যোগ দিয়েছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মান্নানের কাছে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের। এক্সইএন অফিসতো উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে মনিটরিং করে। একা কি ১০ হাজার প্রজেক্টে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়