44 20240326114503

চিনি বিবির মানবেতর জীবন

print news

শেরপুর প্রতিনিধি : ঘরে অভাব থাকলেও স্বামী, সংসার নিয়ে এক সময় সুখের জীবন ছিলো চিনি বিবির। তবে দূরারোগ্য ব্যধিতে জন্মের কিছুদিন পরই মারা যায় দুই সন্তান। এজন্য ভাগ্যের নির্মমতায় স্বামী তালাক দেন চিনি বিবিকে। অভিমানে অন্য কোথাও ঘর বাঁধেননি তিনি। নিজের কিছু না থাকায় সৎ বোনের পরিত্যক্ত ঘরে ঠাঁই নেন ষাটোর্ধ্ব চিনি বিবি। জীবনের এই ক্রান্তিকালে এখন তার একমাত্র ভরসা সৃষ্টিকর্তা। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা পা নিয়েই অসুস্থ ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।

শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমুড়া নামা পাড়া এলাকার চিনি বিবির ভাগ্যে কখনো মেলেনি সরকারি সুবিধা। পরিবারের কোনো সদস্য না থাকায় ছেষট্টি বছর বয়সী এ গৃহহীন বৃদ্ধার একেকটি দিন যেন চরম দুর্দশাগ্রস্ত। কখনো খেয়ে বা না খেয়ে কাটছে তার দিন।

জানা যায়, স্থানীয় মৃত বয়জ উদ্দিনের মেয়ে চিনি বিবির ৩৫ বছর আগে বিয়ে হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার বাকাকুড়া গ্রামে। কোলজুড়ে দুই সন্তান এলেও দূরারোগ্য রোগে বাঁচেনি একজনও। সেই ক্ষোভে তাকে তালাক দেন স্বামী। পরবর্তীতে ৩০ বছর ধরে নিজ গ্রাম লামাপাড়াতেই অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে দিন কাটান স্বামী পরিত্যক্তা এ নারী। বছর দুয়েক আগে কাজ করতে গিয়ে পড়ে একটি পা ভেঙে যায়। চিকিৎসার ব্যবস্থা না করতে পারায় ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়েন তিনি।

চিনি বিবির ভাই মিয়ার উদ্দিনের মৃত্যু হয় আট বছর আগে। এরপর থেকেই তার খোঁজ নেয় না স্বজনরা। নিদারুণ কষ্টে থাকা এই বৃদ্ধার অবলম্বন বলতে কেউই নেই এখন। সৎ বোনের পরিত্যক্ত ঘরে বসতি গড়লেও আশ্রয় হারাবার ভয় তার মনে। ভাঙা পা নিয়ে দাঁড়াতে পারেন না তিনি। বসে বসেই চলাচল করেন।

চিনি বিবি বলেন, ‘নিজের বলতে কিছুই নেই। যা ছিলো আল্লাহ সব নিয়ে গেছেন। বাপ মা ভাই বোন সবাই মারা গেছেন। পা ভাঙার পর এখন ভাঁজ হয় না। কোমড়ের ব্যথায় দাঁড়াইতে পারি না। ছেঁচুড় পাইরা চলা লাগে। খাবার না জুটলে না খাইয়াই থাহা লাগে। ডাক্তর দেহানির টেহাও নাই, মানুষও নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ খোঁজ নেয় না। যার কিছু নাই, তার খোঁজ নেওনের কেউ থাহে না। এত কষ্ট আর সইতে পারি না। এহন আল্লাহ আমারে নিয়া গেলেই ভালা। ঘর নাই, বিছনা নাই। পরের জাগায় থাহি; কবে তুইল্লা দেয় আল্লাই জানে।’

স্থানীয় বাসিন্দা খলিল মিয়া বলেন, পা ভাঙার পর থেকে ছেচুর পেড়ে (বসে বসে) ঘরের বাইরে বের হয় চিনি বিবি। সৎবোনের একটি ভাঙা ঘরে থাকলেও মাঝেমধ্যে বকাঝকা করে তারা। একসময় মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও এখন সে নিজেই চলতে পারে না। তার কোনো আত্মীয় স্বজনও খোঁজ নেয় না। তবে চিনি বিবি কারর কাছে হাত পাতে না, কেউ ইচ্ছে করে দিলে খাওয়া জোটে তা না হলে উপোষ থাকে। রোজার মাসেও তিনি না খেয়েও রোজা রাখছে। গ্রামের ধনী মানুষেরা আরেক ধনী মানুষের খোঁজ নেয়, গরীবের না।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর আল আমিন হিরু বলেন, ৩০ বছর ধরে চিনি বিবি এ এলাকায়। ছেলেমেয়ে, মা, বাবা, ভাই সবাই মারা গেছেন। অসুস্থ চিনি বিবির খাবার জোটে না। মাঝেমধ্যে কেউ খাবার দিলে তা খেতে পারে। চিনি বিবির পায়ের চিকিৎসা, একটি হুইল চেয়ার আর খাবরের প্রয়োজন।

নাঈম ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন রিকশাওয়ালাদের কাছে তার জন্য ওষুধ পাঠিয়ে দিই। এ রমজানে তার কাছে গিয়েছিলাম খোঁজ নিতে, তার কষ্ট দেখে কেউ চোখে পানি আটকাতে পারবে না। দীর্ঘদিন ধরে পা ভাঙা থাকায় আর সেটি বাঁকানো যায় না। তাই সে বসে বসে ঘর থেকে বের হয়। তার সৎবোনের পরিত্যক্ত ঘরে থাকছে, কিন্তু তারাও কয়েকবার সেখান থেকে বের করে দিয়েছিলো। স্থানীয় কয়েকজন বলে বুঝিয়ে আবার সেখানে তুলে দিয়েছে। তার বাবার রেখে যাওয়া সামান্য ভিটাটারও কোনো হদিস নেই। ছেলেমেয়ে, মা, বাবা, ভাই কেউ বেঁচে নেই, দুই ভাতিজাও (দিনমজুরের কাজ করে) দেখাশুনা করে না। আমাকে চিনি বিবি জানিয়েছে, সরকারি কোনো সহায়তা জোটেনি তার। খেয়ে না খেয়ে থাকেন তিনি। চরম দুর্দশাগ্রস্ত এ বৃদ্ধার পাশে সরকার বা সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা জরুরি।

শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত বলেন, দ্রুত চিনি বিবির খোঁজ খবর নিয়ে সহায়তা করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা মোতাবেক তার জন্য যতটা করা যায় দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

5d3e1d8c33d78eb979c3dc8603dda9bc

ময়মনসিংহে হিজড়াদের উদ্যোগে মসজিদ নির্মাণ

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁষা সরকারের জমিতে হিজড়াদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *