05 04 24 Kaptan Bazar 18 504012e6a9dfc176a0d47cd51516807a

চালের বস্তা : সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি: ঘোষণা মানেননি চালকল মালিকরা

print news

বাংলা ট্রিবিউন : চালের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে পহেলা বৈশাখ, রবিবার (১৪ এপ্রিল) থেকে নতুন নিয়ম চালু করতে চেয়েছিল সরকার। চালের বস্তায় ধানের জাত, দাম, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং উৎপাদনের তারিখ লেখার নির্দেশনা কার্যকরের কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের এই ঘোষণা মানেননি দেশের কোনও চালকল মালিক।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর কাওরানবাজার ও চালের আড়ৎ নামে খ্যাত বাবুবাজার-বাদামতলী চালের পাইকারি বাজার ঘুরে কোথাও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত চালের বস্তার দেখা মেলেনি। অথচ চালের বস্তায় বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশ করতে মিল মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয়েছে। দুই মাস আগে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এরপরও তারা প্রস্তুত নন বলে জানিয়েছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেশের ৬৪ জেলায় মিল মালিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকরা মিটিং করেছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা মিটিং করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবও মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পরেও তারা বলছেন, তারা এখনও প্রস্তুত হতে পারেনি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেনের সই করা পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদকারী কয়েকটি জেলা পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পছন্দমতো জাতের ধান, চাল কিনতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজার মূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে বস্তায় এসব তথ্য লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, বস্তার ওপর এসব তথ্য কালি দিয়ে লিখতে হবে। চাল উৎপাদকারী মিল মালিকের সরবরাহ করা সব রকম চালের বস্তা ও প্যাকেটে ওজন (৫০/২৫/১০/৫/১) উল্লেখ করবেন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। এক্ষেত্রে মিলগেট দামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করতে পারবে।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি দেওয়া সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সময় দেওয়া হয় ৫৩ দিন। সরকারের দেওয়া সেই সময় শেষ হয়েছে গত ১৩ এপ্রিল শনিবার। রবিবার (১৪ এপ্রিল) থেকে চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিল গেটের মূল্য লিখে বাজারে বিক্রি করার কথা ছিল। একই সঙ্গে বস্তার গায়ে লিখার সিদ্ধান্ত ছিল বস্তার গায়ে চাল উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা না হলে শাস্তি পেতে হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।

এই পরিপত্রের আলোকে সব জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদর্শকরা পরিদর্শনকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩ এর ৬ ও ৭ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানানো হয়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখনও প্রস্তুত নন চালকল মালিকরা (মিলার)। কারণ ধানের জাত লেখার বিষয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। বস্তার গায়ে দাম লেখার ক্ষেত্রেও জটিলতা রয়েছে। এলাকাভেদে দামের মধ্যে তো পার্থক্য থাকে। তাই পাইকারি বাজারের কোথাও সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বস্তার গায়ে ধানের জাত, দাম, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং উৎপাদনের তারিখ লেখা বস্তা ভর্তি চাল পাওয়া যাবে না। এর জন্য আরও সময় লাগবে।

চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি জানেনই না। তারা এখনও এ বিষয়ে অপ্রস্তুত। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন কেনও সম্ভব নয়—জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানিয়েছেন, কৃষকের কাছে অনেক প্রকার ধানের জাত রয়েছে যা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছেও নাই। কৃষক সেই সব ধানের চাষ করলেও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তা চাষ করে না। ফলে সেই সব ধানের জাত বস্তার গায়ে লেখা যাবে না যা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চাষ করে না। এখানে এ ধরনের জটিলতা রয়েছে। সরকার আমাদের ধানের জাতের কোনও তালিকা দেয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ধানের জাতের একটা তালিকা পেলে সেই দালিকা ধরে কাজটা করা সহজ হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ জানিয়েছেন, এখনও নতুন কোনও ধান আসেনি। ফসল মাঠে। কৃষকের গোলায় পুরোপুরি আসেনি। দেশের বিভিন্ন জেলায় সামান্য ধান কাটাকাটি চলছে। তাই এখনও তো চাল উৎপাদন শুরু হয়নি। এ ছাড়া বস্তার গায়ে ধানের জাত, দামসহ নানা ধরনের তথ্য লিখতে হলে কিছু মেশিনপত্র লাগবে। মিলারদের কাছে যে ডাইস আছে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে, সেই বিষয়ে আমাদের ধারণাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোজা ও ঈদে বন্ধ থাকায় সেটা করতে পারিনি। একটা বিষয় বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছু সময় লাগবে। আমাদের তো সেই সময় দিতে হবে।

কাওরানবাজারের চাল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, আমরা তো বিষযটি জানি না। আমাদের তো কেউ এ বিষয়ে বলেনি। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমরা বাজারজাত করি মাত্র। আড়ৎ থেকে আমরা যেভাবে পাই সেভাবেই বিক্রি করি। এখানে আমাদের তো করণীয় কিছু নাই। দোকানগুলোয় বর্তমানে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা চালের বস্তার গায়ে কি তথ্য লেখা রয়েছে এর ছবি তুলতে চাইলে সে ছবি তোলার আপত্তি জানিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভালো। আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সিদ্ধান্তটি মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো যায়নি বলেই মনে হয়। আমরা আসলে এ বিষয়টি সম্পর্কে ততোটা ওয়াকিবহাল নই। আমার মনে হয়, আরো কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। এ ছাড়া কাজটি তো মিলারদের। তারা এ কাজটি করলেই সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে বলেও জানান তিনি।খাদ্য মন্ত্রণালয় যদিও বলেছে নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু রবি ও সোমবার এ ধরনের কোনও অভিযান দেখা যায়নি।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

aa288613bf604eeb5b9db258ab976fe7 66467e717d993

মাদারীপুরে ডিমের সংকট,হিমাগারে মজুত লাখ লাখ ডিম

ইত্তেহাদ নিউজ,মাদারীপুর : হিমাগারে থাকার কথা আলু, কিন্তু সেখানে এখন মজুত লাখ লাখ ডিম। কৃত্রিম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *