ইত্তেহাদ নিউজ,ঝালকাঠি :দুপুর ২টা। বরিশাল-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় শুল্ক দিতে থামে একটি প্রাইভেট কার। পেছনে ধীরে ধীরে থামে তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক।প্রাইভেট কার শুল্ক দিয়ে সামনে এগোনো শুরু করতেই হঠাৎ পিছন থেকে একটি ট্রাক তিনটে ইজিবাইককে চাপা দিয়ে উঠে যায় প্রাইভেটকারের ওপর। বাহনগুলিসহ ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়।বুধবার দুপুরে এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ১৪ জনের। আহত হয়েছেন কমপেক্ষ ২৩ জন। ট্রাকের চাপায় ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাকচালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।বুধবার দুপুরে ঘটনার পরপরই চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল।গ্রেপ্তার চালক নাম আল আমিন হাওলাদার ঝালকাঠি সদরের নবগ্রামের বাসিন্দা। আর সহকারী নাজমুল শেখ খুলনা সদরের বাসিন্দা।ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।পুলিশ সুপার বলেন, আল আমিন নিয়মিত চালক ছিলেন না। তিনি বদলি চালক হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি খুলনা থেকে সিমেন্টের বস্তা নিয়ে নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন।ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মেহেদী হাসান সানি জানান, নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালে এসে মরদেহ শনাক্ত করেছেন।নিহতরা হলেন- ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান গ্রামের সেলিম হাওলাদারের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৩৫), ওস্তাখান গ্রামের আব্দুল মান্নান মাঝির ছেলে শফিকুল মাঝি (৫০), নওপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিম মাঝির ছেলে অতিকুর রহমান সাদি (১১), নূরুল ইসলামের ছেলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্য ইমরান হোসেন (৪০), কাঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের মো. ইব্রাহীমের মেয়ে নূর জাহান (৭) ও তাহমিনা, প্রাইভেট কার চালক রাজাপুর উপজেলার এলাকার মো. ইব্রাহিম, রাজাপুর উপজেলার সাংগর গ্রামের বারেক মৃধার মেয়ে নিপা আক্তার, উত্তর সাউদপুর গ্রামের সনিয়া বেগম, তানিয়া আক্তার, তাহমিদ রহমান, হাসিবুর রহমান।এছাড়া বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি গ্রামের মো.রুহুল আমিন এবং দুর্ঘটনাস্থলে থাকা ভিক্ষুক মো. শহিদুল ইসলাম।ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারহা গুল নিঝুম বলেন, জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ১৪ জনের পরিবারকে মোট পাঁচ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ববরণকারীদের তিন লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য জনপ্রতি এক লাখ টাকা দেওয়া হবে।
এ ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।আহত রায়হান হোসেন বলেন, আমি ট্রাকে করে মাল নিয়ে বরিশাল আসছিলাম। টোল দেওয়া শেষে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড শব্দ শুনি। এ সময় আমাদের ট্রাক একটা বাসের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে ট্রাক উল্টে যায়। আমার হাত কাটা পড়ে।ওই দুর্ঘটনার কবলে পড়া দুটি ইজিবাইকের যাত্রীরা যাচ্ছিলেন বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। চারটি ইজিবাইকে কনের বাড়ির লোকজন ঝালকাঠির শশীর হাটে বরের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে গাবখান সেতুতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দুটি ইজিবাইকের যাত্রী। এতে ওই পরিবারের বেশ কয়েকজনের প্রাণ গিয়েছে; বাকিরা হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন।পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বৌভাত অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন রুবেল হোসেন (৩০) । যে দুটি ইজিবাইক আগেই টোল প্লাজা পার হয়ে যায় তার মধ্যে ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান রুবেল।রুবেল বলেন, গাবখান ব্রিজ পার হয়ে চারটি ইজিবাইক নিয়ে যাচ্ছিলাম। দুইটা অটো পার হয়ে যায়। দুইটা টোল দিচ্ছিলো। পেছন থেকে ট্রাক এসে আমাদের ওই দুইটা ইজিবাইকসহ আরও দুইটাকে মেরে দিয়েছে। ব্রেক ফেল করে নিজেও গর্তে পড়ে যায়।রুবেল জানান, নিজেদের পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আছে আরও সাতজন।ঝালকাঠির রামনগরের বাদশা মিয়ার ছেলে সাইদুল বলেন, তার প্রতিবন্ধী ভাই শহিদুল গাবখানে ভিক্ষা করেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়