107314 je

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ নিয়ে তোলপাড়

print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা :কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ নিয়ে তোলপাড় চলছে। সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। মূলত এই সনদগুলোর ক্রেতা ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এ অনৈতিক কাজে যুক্ত প্রায় ৪০ জনের নাম এসেছে। বিক্রি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সনদ। দেশের বিভিন্নস্থানে এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত কারিগরি কলেজ ও ইনস্টিটিউট থেকেই মূলত সংগ্রহ করা হতো এসব সনদ। এমপিও টিকিয়ে রাখার জন্য ও এমপিওভুক্ত হবার জন্য আইন অনুযায়ী শিক্ষার্থী পাসের একটা সংখ্যা নির্ধারিত থাকে। এই সংখ্যা ধরে রাখার জন্য মূলত জাল সনদ ক্রয় করা হতো।

তিন ধাপে বিক্রি হতো জাল সনদ। প্রথমত যাদের সনদে তথ্যগত ভুল থাকতো তা সংশোধন করা।দ্বিতীয়ত ফেল করা কিংবা কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য। আর সবশেষ ধাপে একেবারেই শিক্ষার্থী নন এমন ব্যক্তিদের সনদ দেয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক, অধ্যক্ষ ও সিনিয়র শিক্ষকরা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানের কাছ থেকে চাহিদাপত্র দিয়ে এসব জাল সনদ নিতেন। এরপর তারা সেই জাল সনদ তুলে দিতেন শিক্ষার্থীদের হাতে। শামসুজ্জামান নিজেই বোর্ডের বিশেষ সার্টিফিকেট পেপারে এই সনদ প্রিন্ট দিতেন এবং কম্পিউটারের সার্ভারে আপলোড করতেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বরাতে জানা যায়, গ্রেপ্তার একেএম শামসুজ্জামান একজন সহকারী রেখে এসব কাজ করাতেন। তার সহকারী ফয়সালকে বলে দিতেন কোনদিন কতোটি সার্টিফিকেট লাগবে। ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান, তার ব্যক্তিগত সহকারী ফয়সাল ছাড়াও কুষ্টিয়া গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলি, কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুজুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমানসহ দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি লালবাগ বিভাগ। এরমধ্যে রয়েছেন কারিগরি বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ার‌্যমান খান আকবর আলীর স্ত্রী সেহেলা পারভীন।

ডিবির জ্ঞিাসাবাদে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিবিএ নেতা আব্দুল বাছেরের নাম উঠে আসে। আরও রয়েছেন রেজিস্ট্রেশন শাখার এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার মামুনুর রশীদ ও বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া আব্বাস। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে সার্টিফিকেট ও রেজাল্ট পরিবর্তনের চাহিদাপত্র নিতেন।
শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ডিবিকে জানান, তার এই কাজের গুরু ছিলেন কারিগরি বোর্ডের সাবেক সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুল হক। তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে পারতো না তাদের জাল সনদ তৈরি করে পাস দেখাতেন। এ ছাড়াও তাদের নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার কাজটিও তিনি করতেন।

আগে কারিগরির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, বর্তমানে একটি সরকারি কারিগরি ইনস্টিটিউটে যোগ দেয়া এক শিক্ষক বলেন, এই চক্রটির বিষয়ে আমরা খুব একটা জানতাম না। তবে কিছু একটা যে হতো তা আঁচ করতে পারতাম। পূর্বের প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারিগরির শিক্ষার্থী একেতো কম তার উপর যারা ভর্তি হন তারা সকলে সরকারি প্রতিষ্ঠানমুখী। তাই ফল একটা বড় বিষয়। এই প্রতিষ্ঠানে ফলের গ্যারান্টি মৌখিকভাবে দেয়া হতো। আমরা জানতাম যারা খাতা দেখেন তাদের সঙ্গে হয়তো যোগাযোগ। তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসলে এই বিষয়গুলো খুব একটা প্রয়োজন হয় না বা শুনিনি। কারণ এখানে বৈধভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক অর্থ আয় করা সম্ভব।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ জাল অর্থাৎ শিক্ষার্থী না থাকার পরও সনদ পেতেন শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি জানা ছিল না। তবে প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীকে পাস করানো হতো। আমরা জানতাম বোর্ডের মাধ্যমেই পাস করানো হতো। যেসব শিক্ষার্থী ফাইনাল পরীক্ষার আগে ফল খারাপ করতেন তাদের নিয়ে একটি বিশেষ সেশনের আয়োজন করা হতো। সেখানে অর্থের বিনিময়ে স্পেশাল ক্লাসের কথা বলা হতো।
এ বিষয়ে ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বোর্ডের কয়েকজন ছাড়াও অনেকেই জড়িত। আমরা তাদেরও গ্রেপ্তার করবো। জাল সনদের ক্রেতার নামও পাওয়া গেছে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

Collage

মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড’র ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দুই ডিজিএম

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড আন্তর্জাতিক মানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবামূলক যন্ত্রপাতি সরবরাহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *