image 83741 1714390902

ঝালকাঠির সেতু টোলপ্লাজায় সংঘর্ষে ১৪ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঝালকাঠি :ঝালকাঠিতে গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই ট্রাক-প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ১৪ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ঈদের পরে গত ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার এবং দুটি অটোরিকশার সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ জনসহ ১৪ জন নিহত হন। খুলনা থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে পাশে থাকা তিনটি অটোরিকশার ওপর গিয়ে পড়ে। আহত হন ২০ জনের মতো।

ঘটনার পরপরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। গাবখান সেতুসংলগ্ন দুর্ঘটনার জন্য ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঝালকাঠি জোনের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাহবুবুর রহমান ও বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হককে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চালকদের লাইসেন্স ও বাসের ফিটনেস না থাকা, ওভারটেকিং করা, সড়কে অবৈধ যান, সড়কের অবকাঠামোয় ত্রুটি, ট্রাকে ওভারলোড, অতিরিক্ত গতি এবং গতিরোধের জন্য নির্দেশনা না দেওয়াকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রার আলোচিত এ দুর্ঘটনার কারণ জানাতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য বুয়েটের এআরআইর সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক  বলেন, আমি অনেক সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয় না। এ ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আমরা চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ। দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামোগত ত্রুটি দূর করতে হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান কারণ হিসেবে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের ওভারলোড এবং অতিরিক্ত গতি দায়ী করা হয়েছে। ট্রাকটির ধারণক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন। সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল। এ ছাড়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তিনি ছিলেন বদলি ড্রাইভার। মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন। সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগাদা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে।

অন্যদিকে যে কোনো টোলপ্লাজা ও সড়ক জংশনের ৫০০ মিটার আগেই গতি কমানোর নির্দেশনা থাকে। ‘সামনে টোলপ্লাজা, গতি কমান’ এ ধরনের সাইনবোর্ড থাকে। কিন্তু গাবখান সেতুর ১৩০ ফুট আগে সেই নির্দেশনা ছিল। সে নির্দেশিকাও (সাইনবোর্ড) চোখে পড়ার মতো নয়। টোলপ্লাজায় গতি নিয়ন্ত্রণে ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা ছিল না। কাজেই এত অল্প দূরত্বের সাইনবোর্ড দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। আর সেতু থেকে নামার পর স্বভাবতই গাড়ির গতি বেশি থাকে, যার ফলেই ঘটে এ দুর্ঘটনা।

ড. আরমানা আরও বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছুটা দূরত্ব পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান ব্রিজটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেতু থেকে নামার পরে সড়কের দুই পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি। সড়কের দুই পাশে ১০ মিটার ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন থাকার কথা। কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তা সড়কের পাশে থেকে সেই ক্লিয়ারিং জোনে চলে যাবে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার মূল সড়কে এসে চলবে।

ঝালকাঠির ওই সড়কের পাশে ক্লিয়ারিং জোন দূরে থাক সেখানে গড়ে উঠেছে নানা অবকাঠামো। গাবখানে যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার খুব কাছে ছিল চায়ের দোকান। ট্রাক আরেকটু এগিয়ে গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। এ ছাড়া নিয়মানুযায়ী সড়কের প্রশস্ত অংশে টোলপ্লাজা হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের সরু অংশে টোলপ্লাজা করা হয়েছে। এটিও ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সেতু এলাকায় মূল সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল। এ ছাড়া ঝালকাঠির সড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন-করিমন, অটোরিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব বাহনের চালকরা হুট করে আঞ্চলিক মহাসড়কে চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে অধিক প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, গাবখান সেতু এলাকায় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম ছিল। এখানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল সংকট রয়েছে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে তাদের দক্ষতাও কম। সড়ক আইন কার্যকরের বিষয়টি পুলিশের ওপরও বর্তায়। গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডার গান ছিল না।

ঝালকাঠির দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। এতে সড়কের যেসব অংশে দুই পাশে গভীর খাদ রয়েছে সেখানে ভরাট করতে হবে। আঞ্চলিক সড়কগুলোর দুই পাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। ওই সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এই দুর্ঘটনায় ঘাতক ট্রাকচালক ও হেল্পারকে আটক করেছে ১৭ এপ্রিল ডিবি পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্ত যান ও ট্রাকটি উদ্ধার করে জব্দ করেছে পুলিশ।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

89158cb347b1c8e5d0b7ad26c3f4545d 6645e0064c758

সাবেক এমপি পাপুলসহ ৩ জনের নামে দুদকের মামলা

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন ও রেজিস্ট্রার ঘষামাজা করে আয়, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *