barisal metropaliton

বরিশালে ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু’র অভিযোগ : চুপ মেট্রোপলিটন হাসপাতাল

print news

মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : ডাক্তারের ভুল অপারেশন ও অবহেলায়’ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বরিশালের কালিবাড়ি রোডস্থ বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে অপারেশনে মারা যাওয়া নারীর পরিবারের অভিযোগ, কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বাঁচানো যায়নি সুমাইয়া নামে ওই প্রসূতি নারীকে। রোগীর মৃত্যর আগে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি মৃত শিশু প্রসব করে ওই প্রসূতি নারী।

তবে, বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।শিঘ্রই তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করবো।

কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ খালিদ মাহমুদ জানান,রোগী সুমাইয়া আমার অধিনে ২৯ এপ্রিল বিকেল পাচঁটার দিকে ভর্তি হয়।রাতে নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করে।এর পরেই রোগীর শ্বাষ কস্ট বেড়ে যাওয়া এবং অক্সিজেনের সেচুরেশন কমে যাওয়ার কারনে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে প্রেরন করা হয়।ডাঃ খালিদ মাহমুদ বলেন, রোগী সুমাইয়ার অপারেশনের সময় আমার সাথে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক ও এ্যানেসথেসিয়ার জাহিদ ছিলো।তবে ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক বলেন,আমার শশুর বাড়ীর দিকের লোক তাই দেখতে গেছিলাম।

এদিকে, মারা যাওয়া নারীর স্বামী আব্দুল্লাহ আল আমান জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা প্রথমে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশকে অবহিত করেছি।আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিএমডিসিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিবো। বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসক এবং হাসপাতালের ভুলে ও অবহেলায়  অপচিকিৎসার অভিযোগ নতুন নয়। এর মধ্যে খৎনা করাতে গিয়ে একটি শিশুর দু দুবার অপারেশন করা হয়।

আরও পড়ুন :

বরিশালে রোগী নিহত ও পঙ্গু করনের পরেও সর্বরোগের ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হক বহাল তবিয়তে

মঙ্গলবার সুমাইয়ার মরদেহ দাফন করা হয় বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইতে। সুমাইয়ার স্বামী জনাব আমান বলেছেন, আমার স্ত্রীকে সুস্থ্য সবল ও হাসিখুশি অবস্থায় বরিশাল সদরের কালিবাড়ি রোডস্থ বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করাই। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি মৃত সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু ডেলিভারির পরে অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পরেই আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। টানা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং রক্তচাপ কমতে থাকে।এক পর্যায় প্রথমে ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক তার পরে ডাঃ খালিদ মাহমুদ আমাদের কিছু না বলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। ঐ দুই ডাক্তাররা নার্সদের বলেছে রোগী নিয়ে স্বজনরা শেরেবাংলায় চলে যায় যেন।

জনাব আমান বলেন,নার্সরা আমাদেরকে বলে যে পেটের ভিতর সমস্যার কারণে ব্লিডিং হচ্ছে। এক্ষুণি শেরেবাংলায় সিসিউতে নিয়ে যান,রোগী বাচাঁতে হলে।ওখানে নিলে পেশেন্ট বাঁচবে। নয়তো বাঁচানো খুব টাফ। আমি বলি যে ঠিক আছে, কিন্তু আমার পেশেন্টকে বাঁচান।এরপর গভীর রাতে রোগীকে শেরেবাংলায় আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে রোগী সুমাইয়া মৃত্যুর কোলে ঢেলে পরেন।

অপরেশনে থাকা মুন্সি মুবিনুল হক জানান যে, রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।একই কথা বলেছেন ডাঃ খালিদ মাহমুদও। তিনি বলেন ,রোগীর সেচুরেশন ওঠানামা করে এবং শেষ পর্যন্ত ভেন্টিলেটরে দেয়া হয়েছিল।

জনাব আমান বলেন,শেরেবাংলার আইসিইউ ইনচার্জ এসে বলে যে আপনাদের যদি দেখার ইচ্ছা হয়, দেখতে পারেন। গিয়ে দেখি কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে। তখন বুঝে গেছি, যা হওয়ার হয়ে গেছে।

মেটোপলিটন হাসপাতাল কী বলছে?

বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসান বলেছে, বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে।তিনি বলেন,আমরা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করবো। তাদের তদন্তের রিপোর্টের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো যে প্রকৃত ঘটনা কী। রিপোর্ট পেলে আমরা সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারবো।“ভুল চিকিৎসা নাকি, চিকিৎসায় অবহেলা, সেটা তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে জানা যাবে,” তিনি বলেন।

এদিকে, অভিযোগের ব্যাপারে ডাঃ খালিদ মাহমুদ বলেন,রোগীর মৃত বাচ্চা জন্মের পরে আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করাই। তাতে দেখতে পাই পেটে ব্লাড রয়েছে।এ জন্য দ্রুত ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক ও অবসের জাহিদকে নিয়ে রোগীকে অপারেশন করাই। অপারেশনের পরে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেরেবাংলার আইসিউতে পাঠাই।

এ ব্যাপারে বরিশালের সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসান বলেন,এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি।লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গগত, ডাঃ খালিদ মাহমুদ বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে এবং ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আবাসিক মেডিকেল সার্জন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এ দু’জন ডাক্তার বাইরে দালাল প্র্যাক্টিসে জড়িত।তারা দালালদের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখেন এবং রোগীদের অপারেশন করান।

আইনি প্রতিকার কী আছে?

বাংলাদেশে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৮০ এবং ৮৮ ধারাতে ‘সরল বিশ্বাসে পরিচালিত চিকিৎসাকার্যে’ সংঘটিত দুর্ঘটনার দায় থেকে চিকিৎসককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণে অভিযোগ করার একমাত্র জায়গা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বা বিএমডিসি। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।বিএমডিসির নিয়মানুযায়ী, কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তা অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে জবাব দেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির উত্তর অভিযোগকারীকে জানানো হবে।তিনি তা গ্রহণ না করলে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত চিকিৎসকের লাইসেন্স স্থগিত করার বিধান রয়েছে।যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা বিএমডিসির এই প্রক্রিয়া জানেন না বা এর মধ্য দিয়ে যান না। আইনে চিকিৎসকদের দায় নিয়েও স্পষ্টভাবে কোনও কিছু বলা হয়নি।

সুপ্রিম কোর্ট ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড ট্রাস্টের আইনজীবী অনিক আর হক গনমাধ্যমকে বলেছেন, “এ ধরনের ক্ষেত্রে খুব বেশি হলে বিএমডিসিতে অভিযোগ করা যায়। তদন্ত কমিটিতে চিকিৎসকরাই থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণ হয় না।“ভুক্তভোগী তখন বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে রিট করে। তবে, অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু হলে ফৌজদারি মামলা করার সুযোগ আছে,” বলেন মি. হক।ভুল চিকিৎসা বা অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা এ রকম বেশ কয়েকটি রিট হাইকোর্টে বিচারাধীন বলে জানান তিনি।এছাড়া ‘স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৩’ নামে একটি আইনের খসড়া করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে, সেটি এখনো আইনে পরিণত করা হয়নি।এর খসড়াতেও চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণে রোগীর মৃত্যু হলে ফৌজদারি আইনে বিচার এবং আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা বলা হয়েছে।এতে, হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের এবং চিকিৎসা প্রদানকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে লাইসেন্স বাতিল ও চিকিৎসকের ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশের কথা উল্লেখ আছে খসড়ায়।সেইসাথে, এ সকল অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।আইনজীবী আরও বলছেন, ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৩৮ ধারাটি ডাক্তারি অবহেলা সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিকারের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ধারায় উল্লেখ আছে, যে কোনও ধরনের বেপরোয়া কাজ বা অবহেলার কারণে আঘাত দিলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা একসঙ্গে দুটি দণ্ডই দেওয়া যাবে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

Collage

মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড’র ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দুই ডিজিএম

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড আন্তর্জাতিক মানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবামূলক যন্ত্রপাতি সরবরাহ …