দৃশ্যমানভাবে চিড় ধরেছে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে,শিবিরকে কেন ‘গুপ্ত সংগঠন’ বলছে ছাত্রদল


অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এখন দৃশ্যমানভাবে চিড় ধরেছে। এর প্রভাব পড়েছে তাদের ছাত্র সংগঠন- ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যেও। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রশিবিরকে ‘গুপ্ত সংগঠন’ বলে অভিহিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে।
যদিও অতীতে বিএনপি ও জামায়াত একসঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সরকার গঠনের মতো বড় পদক্ষেপ নিয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একে অপরকে প্রকাশ্যে দোষারোপ করছে তাদের অনুসারীরা।
ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা দাবি করছেন, শিবির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করছে এবং ছাত্রদলের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করছে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই শিবির পরিকল্পিতভাবে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে গোপনে রাজনীতি করছে। এদের কমিটি আছে বলে দাবি করলেও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে না।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করে বলছে, বিএনপি এবং ছাত্রদল রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে অপপ্রচারের আশ্রয় নিচ্ছে।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল হাস্যকর অভিযোগ এনে শিবিরের বিরুদ্ধে বয়ান দাঁড় করাতে চাইছে। জনগণ জানে শিবির কী এবং কোথায় কাজ করে।
তিনি আরও দাবি করেন, যেখানে আমাদের কমিটি আছে, সেটা আমরা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করি। অথচ আমাদের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পাল্টাপাল্টি ভিডিও, পোস্ট ও বিবৃতি ছড়িয়েছে।
পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর হত্যাকাণ্ড ঘিরে উত্তেজনা চরমে ওঠে, যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়, যাতে ছাত্রদল ও অন্যান্য সংগঠন অংশ নেয়। কিন্তু ওই কর্মসূচির মধ্যেই শিবির বিরোধী স্লোগান ভাইরাল হয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করে।
১৪ জুলাই নয়াপল্টনে ছাত্রদলের এক সমাবেশে শিবিরকে ‘গুপ্ত সংগঠন’ বলা হয়। ছাত্রদল দাবি করে, শিবির কথিত ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ পরিচয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালাচ্ছে।
১৯৯৯ সালে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক জোট গঠন করে, যা ২০০১ সালে সরকার গঠনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ নেয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ২০১৫ সালের পর থেকে সম্পর্ক আরও শীতল হয়।
একইভাবে, এক সময় যৌথ আন্দোলনের অংশীদার ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির এখন মুখোমুখি অবস্থানে। ২০০১ সালে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’-এর যৌথ নেতৃত্বে থাকলেও, ২০২৩ সালের ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ থেকে ইসলামী ঘরানার সংগঠনগুলো বাদ পড়ে যায়।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল বলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আমাদের একসময় নির্বাচনী সমঝোতা ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে নেই। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, রাজনীতিতে বিভাজন নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোই মূলত সাময়িক বিরোধ সৃষ্টি করেছে।তিনি বলেন, ছাত্র শিবিরকে দেশের জনগণ চিনে। এখানে লুকানোর কিছু নেই।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।