মিল্টন ও জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেড়িয়ে আসবে লিটু হত্যার রহস্য


রবিউল ইসলাম রবি,বরিশাল অফিস : বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লিটন শিকদার ওরফে লিটু (৩২) কে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) এর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. রিয়াজ হোসেন এপিএম- এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আটককৃতরা হলেন- জলিল, মুন্না, রাসেল, কামাল ও সোহাগ। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিল্ববাড়ি এলাকায় পুলিশের কাছ থেকে লিটুকে ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে হত্যার পাশাপাশি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কেটে নেয়া হয় লিটুর ডান হাত। কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করা হয় শরীর। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয় তার ভাই-বোন মুন্নি ও সুমন। হত্যার ঘটনার পরই আত্মগোপনে চলে গেছে- নগরীর কাউনিয়া বাগানবাড়ির বাসিন্দা রিয়াজ খান মিল্টন ও কাশিপুর বিল্ববাড়ি এলাকার জাকির হোসেন গাজী। দৈনিক আজকের সময়ের বার্তার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ২নং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রিয়াজ খান মিল্টনের বিশ্বস্ত সহযোগী হলেন- নিহত লিটু। বিএমপির বিমান বন্দর থানা ও কাউনিয়া থানায় প্রায় এক ডজন মাদক মামলার আসামি হলেন- মিল্টন ও লিটু। অধিকাংশ মামলাতেই দুই জন একত্রে আসামি। আ.লীগ আমলে মানবেতর জীবন যাপন করলেও গত ৫ আগষ্টের পর লাখ দুই জনই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেন। লিটুর বসবাস করা বিল্ববাড়ি এলাকার সিংহভাগ অপকর্ম মিল্টনের নিয়ন্ত্রণে। অপকর্মের সামনে ছিল লিটু আর পেছনে শেল্টারদাতা ছিলেন মিল্টন। যে কারণে অতিষ্ট ছিল এলাকাবাসি। মিল্টন কয়েকটি অনলাইন নিউ পোর্টালে ভিডিও বক্তব্য প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই খুন হয় লিটু।
সম্প্রতি লিটুর বোন মুন্নি ও তার স্বামী জাকির হোসেন গাজীর মধ্যে পারিবারিক কলহের জের ধরে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। বিষয়টি নিয়ে বিল্ববাড়ি এলাকার মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তবে ঘটনাচক্রে সমাধানের জন্য এক পক্ষ মিল্টনের কাছে গেলে তিনি মিমাংসা করতে ব্যর্থ হন। বৃহস্পতিবার লিটু পুলিশ নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তখন জাকির গাজীর লোকজন বিক্ষোভ করলে পুলিশের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে হত্যার পাশাপাশি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে হামলায় আহত সুমন সিকদার (৩৫) ও বোন মুন্নি বেগম (৩৮) কে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে।
নিহত লিটুর আহত ভাই-বোন মুন্নি ও সুমন বলেন- বাগান বাড়ির ইয়াবা ব্যবসায়ী মিল্টন আমার ভাইর হাত কোপ দিয়া নিয়া গেছে। পরে অন্যরা কোপতে শুরু করে। কুপিয়েছে- কামাল, মিলন রাকিব, রাজিব, সুমন সহ নাম না জানা অনেকে ছিল। আমার ভাই তার নিজ এলাকায় মিল্টনকে ইয়াবা ব্যবসা করতে বাঁধা দেয়ার কারণ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল।
নিহত লিটুর ছোট বোন মীম বলেন বলেন- আমার ভাইকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে বিএনপির মিল্টন বাগানবাড়ির। এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায় দ্বন্দ্বের ক্ষোভটা আমার ভাইয়ের উপর ছাড়ছে। হামলার সময় মিল্টনের সাথে ছিল- রাজিব, মিলন, রিপন গাজী ও তার বউ, মোকছেদ গাজী, আলো গাজী, রাসেল, কালু, কামাল আরো অজ্ঞাত লোক তাদের নাম জানি না। এ হত্যার ফাঁসি চাই। তারা ওই এলাকার মৃত নজের শিকদারের ছেলে-মেয়ে।
পারিবারিক কলহের কারণ সম্পর্কে জাকির গাজীর বক্তব্য ছিল- গত ২৩ জুলাই শ্বশুর বাড়ি বসে তার স্ত্রী মুন্নি ও শ্যালকরা তাকে আটকিয়ে তার নগদ টাকা, জমি ও ব্যাংক চেক দিতে বলে এবং মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। টানা ৪ দিন বাড়িতে আটকে মারধর করে পা ভেঙে দেয় এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা সহ খালি স্ট্যাম্পে ও চেকে সই নেয়। বিষয়টি টের পেয়ে ২৭ জুলাই জাকিরের পরিবার ৯৯৯ এ কল করলে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
অপরদিকে শুরুতে মুন্নি বেগমের ছিল- যৌতুক চাওয়ার মধ্যে গত দুই মাস পূর্বে আমার স্বামী জাকির হঠাৎ উধাও হয়। আসার পর তার ব্যাগের মধ্যে আমি একটি বিয়ের কাবিননামা পাই। পড়ে দেখি গত ২৯ জুন জাকির কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার ৬নং ওয়ার্ড শরীফপুর গ্রামের মৃত মমতাজ মিয়ার মেয়ে মনোয়ার আক্তারকে বিয়ে করেছে। যা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। পরে বিষয়গুলো নিয়ে গত ২৭ জুলাই আমার বাবার বাড়ির বাসায় বসে জাকিরের প্রথম সংসারের দুই মেয়েসহ তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার মধ্যে হঠাৎ জাকির, রাজিব সহ ১০/১২জন মিলে আমার উপর হামলা চালিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। তখন আমাকে আমার ভাই সুমন ও সুজন বাঁচাতে আসলে তাদের উপরও হামলা চালানো হয়। পরে হামলাকারীরা উল্টাে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে। এ সময় জাকির পুলিশকে জানান- তাকে বাসায় আটকিয়ে মারধর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিকাল ৫ টায় কাশিপুর লাকুটিয়া সড়কের পাশে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় জাকির গাজীর আত্মীয়-স্বজন সহ প্রায় এলাকার শতাধিক মানুষ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের পর জাকির হোসেন গাজী ওই মিল্টনের কাছে ‘শরণাপন্ন’ হন। ২৮ জুলাই দুই পক্ষই বিমান বন্দর থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেন। মোটা অংকের অর্থ দিয়ে মিল্টনকে ম্যানেজ করা হয়েছে- এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও প্রমাণ মিলেনি। মিল্টনের বিশ্বস্ত যোদ্ধা ছিলেন- নিহত লিটু। আবার মিল্টন হল- বালুমহলে চাঁদাবাজির ঘটনায় বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক পদ থেকে স্থগিত হওয়া মশিউর রহমান মঞ্জুর বিশ্বস্ত সহযোগী।
ভিডিও বক্তব্যে মিল্টন বলেন- সমাধানের জন্য ঘটনাস্থলেও গিয়েছিলেন তিনি। লিটু সিকদারের বিরুদ্ধে ৬টি ডাকাতি মামলা ২টি ছিনতাই মামলা সহ নানা অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে। লিটু এলাটাকে জিম্মি করেছিল। তাও আমি প্রতিরোধ করেছি। সাথে ছিল সাংবাদিক-পুলিশ। দল নিয়ে নীতি বাক্য বয়ান দেন তিনি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।