শহীদ মো. আব্দুল্লাহ: আন্দোলনে গিয়ে জীবন দিয়েছে দেশের জন্য


ইত্তেহাদ নিউজ,যশোর : কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। আর আন্দোলনে গিয়ে জীবন দিয়েছে দেশের জন্য।বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এসব কথা বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মো. আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার। তিনি জানান, চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে তাঁর ছেলে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন।
তিনি ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাড়ি যশোরের বেনাপোল উপজেলার বড়আঁচড়া গ্রামে।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় আন্দোলন চলাকালে ফেসবুক লাইভে এসে পরিস্থিতির বর্ণনা দিচ্ছিলেন আব্দুল্লাহ। ওই সময় তাঁর কপালে গুলি লাগে।এর কিছুক্ষণ আগে মোবাইল ফোনে বাবাকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আব্বা।’ সেটাই তাঁর শেষ কথা।
আহত আব্দুল্লাহকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা সিএমএইচে নেওয়া হয়।
এক শ দিনের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৪ নভেম্বর তিনি শহীদ হন। পরদিন গ্রামের বাড়িতে নানা-নানির কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
পুলিশের গুলিতে শহীদ আব্দুল্লাহর কবরই এখন তাঁর মা মারিয়া খাতুনের সারা দিনের আশ্রয়। সকাল-বিকাল তিনি ছুটে যান কবরের পাশে। বসে থাকেন দীর্ঘ সময়।ছেলের স্মৃতি আওড়ে কখনো বিলাপ করেন, কখনো বা নীরবে কাঁদেন।
তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ ছিলেন সবার ছোট। বড় দুই ভাই হ্যান্ডলিং শ্রমিক। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও মেধাবী আব্দুল্লাহকে পড়াশোনায় এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মা-বাবা।
গত মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ আব্দুল্লাহর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা-বাবা এখনো ছেলের শোকে কাতর। মা মারিয়া খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। মনে হয়, ও পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’
বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘ছেলে জীবন দিয়েছে দেশের জন্য। শুধু আমার ছেলের না, জুলাই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, সবারই হত্যার বিচার চাই।’
আব্দুল জব্বার জানান, আর্থিক অনটনের কারণে বড় দুই ছেলেকে পড়াতে পারেননি। তবে ছোট ছেলে আব্দুল্লাহকে যত দূর সম্ভব এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। রাজনৈতিকভাবে পরিবারটি বিএনপির সমর্থক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাবা ও বড় দুই ভাইকে হ্যান্ডলিং শ্রমিকের কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা ট্রাকে মালপত্র পরিবহনের কাজে যুক্ত হন। এখন আবার হ্যান্ডলিং শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
আব্দুল্লাহ শহীদ হওয়ার পর নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা, সরকারের জুলাই ফান্ড থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছিল পরিবার। এ ছাড়া তৎকালীন উপদেষ্টা হাসান আরিফ এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। যশোর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক লাখ টাকা পেয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাত থেকে। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বাড়িতে এসে দিয়েছিলেন দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া আব্দুল্লাহ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা (বর্তমানে এনসিপি নেতা) সারজিস আলম ৫০ হাজার টাকা করে দুইবারে এক লাখ টাকা দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
শহীদ আব্দুল্লাহর বাবা বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ১৬ জুলাই আব্দুল্লাহর কলেজে তাঁকে নিয়ে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে তিনি আমন্ত্রিত হয়ে যান। ওই দিন যশোর জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলেন আব্দুল্লাহর মা ও ভাই।
নিজের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই জানিয়ে আব্দুল জব্বার বলেন, ‘যে বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমার ছেলেসহ আরো যাঁরা জীবন দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। এ কারণে দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাসহ সব খুনির বিচার করতে হবে।’ শহীদ আব্দুল্লাহকে হত্যার অভিযোগে চলতি বছরের ১ জুন ঢাকার কোতোয়ালি থানায় তিনি মামলা করেছেন বলে জানান।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।