সত্যের নির্ভীক পথিক :সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন


হাফিজুর রহমান শফিক : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অগ্রদূত, নির্ভীক ও ত্যাগী সংবাদযোদ্ধা সাঈদুর রহমান রিমন আর নেই। আজ দুপুর ৩টায় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি ইন্তেকাল করেন (মৃত্যুকালে বয়স প্রায় ৭৩ বছর)। দেশ হারাল এক সাহসী কলমযোদ্ধাকে—যিনি আজীবন আপোষহীন ছিলেন সত্যের পক্ষে, জনগণের পক্ষে।
সাঈদুর রহমান রিমন ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলার কৃতি সন্তান। তাঁর শৈশব থেকেই ছিল বই, রাজনীতি ও সমাজ চিন্তার সঙ্গে গভীর সংযোগ। সেই চিন্তা ও আদর্শ তাঁকে টেনে আনে সাংবাদিকতায়। ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে যখন নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল, ঠিক তখন থেকেই রিমনের সাংবাদিকতা যাত্রা শুরু।
দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক আমাদের সময় সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন দৈনিক দেশ বাংলা-এর সম্পাদক হিসেবে। সংবাদকক্ষে যেমন তিনি ছিলেন নেতৃত্বদায়ী এক ব্যক্তিত্ব, তেমনি মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিংয়েও ছিলেন তিনি নিজের জাত চিনিয়ে দেওয়া এক অনুসন্ধানী সৈনিক।
রিমনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। তিনি দুর্নীতি, অনিয়ম, মিথ্যাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে কলম ধরেছেন। তাঁর লেখা বহু প্রতিবেদনই একাধিকবার জাতীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার নজরে এসেছে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে।
তাঁর সাংবাদিকতার আদর্শ ছিল—“সত্য কোনো দলের নয়, সত্য জনগণের।”
এই আদর্শিক অবস্থান থেকেই তিনি বারবার হুমকি, মামলা ও সামাজিক চাপের মুখে পড়েছেন। তবে কখনো পিছু হটেননি। সাংবাদিকতা ছিল তাঁর কাছে পেশা নয়, দায়িত্ব।
রিমনের জীবদ্দশায় তিনি ১১টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে রয়েছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, মানবাধিকার বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন, এবং দুর্নীতিবিরোধী রিপোর্টিংয়ের জন্য সম্মাননা।
একবার এক বৃদ্ধা পাঠক তাঁর প্রতিবেদন পড়ে এতটাই প্রভাবিত হন যে নিজের জমি-জমা তাঁকে দিয়ে দিতে চান। তবে রিমন বিনয়ের সঙ্গে তা ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনা তাঁর ব্যক্তিত্ব, সততা ও মানবিক মূল্যবোধের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
রিমনের সহকর্মী, পাঠক এবং অনুসারীরা বিশ্বাস করেন—তিনি শুধু সংবাদ লিখতেন না, সংবাদ ‘জাগিয়ে’ তুলতেন। তাঁর প্রতিবেদন পাঠকের চেতনায় আলোড়ন তুলত। সারা দেশের নির্যাতিত সাংবাদিকের পক্ষে সাইদুর রহমান রিমন ছিলেন এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের নাম। তিনি সবসময় মফস্বল সাংবাদিকদের নিয়ে ভাবতেন।
আজ যখন সাংবাদিকতা বাণিজ্যিক চাপে এবং রাজনৈতিক মেরুকরণে প্রশ্নবিদ্ধ, তখন রিমনের মতো আপোষহীন, প্রজ্ঞাবান ও সাহসী সাংবাদিকের প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি।
তাঁর মৃত্যুতে শুধু পরিবার, সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধব নয়—সমগ্র জাতি একজন সত্যনিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হারাল। তাঁর জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য হবে এক প্রেরণার বাতিঘর।
সাঈদুর রহমান রিমনের অকালপ্রয়াণে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
সত্যের পক্ষে নিবেদিত এই কলমযোদ্ধাকে জাতি চিরদিন মনে রাখবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।