বাংলাদেশ ঢাকা

সিদ্ধিরগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে নিহত ২৮, কেমন আছেন তাদের পরিবার?

854 688c28b12b975
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,সিদ্ধিরগঞ্জ :  সারা দেশের মতো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে উত্তাল ছিল সিদ্ধিরগঞ্জও। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল ছোট এই শহরটি। প্রশাসনের শতশত রাউন্ড গুলি ও প্রশাসনের একাধিক বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহত হয় ২৮ জন। যারমধ্যে ছিলেন ছাত্র, দিনমজুর ও সাধারণ জনগণ। হেলিকাপ্টার দেখতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারায় একজন নারী। সে সময় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পিবিআই অফিস, হাজী ইব্রাহীম খলিল শপিং কমপ্টেক্স, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা। পুড়িয়ে দেয়া হয় অ্যাম্বুলেন্স ও সরকারী গাড়িসহ নানা যানবাহন। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ, নথিপত্র।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীনুর আলম জানায়, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েকশত।

অনেকেই আন্দোলন করতে গিয়ে নিজের জীবনটাকেই বিলিয়ে দিয়েছেন বুলেটের আঘাতে। বুলেট যেমনি আঘাত করেছে রাজপথের কোন আন্দোলনকারীকে, তেমনি আঘাত করেছে ৬ তলার বারান্দায় গৃহবধু সুমাইয়ার মাথায়। গুলিতে নিহত হয়েছে ১০ বছর বয়সের শিশু হোসেন মিয়া, মেকানিক সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজু, শিক্ষার্থী আকাশ, গজারিয়া পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের মেহেদী, হৃদয়, হোটেল ম্যানেজার শাহীন, গার্মেন্ট কর্মী মিনারুল, মাছ ব্যবসাীয় মিলন আরাফাত হোসেন আকাশ নামে ১৬ বছর বয়সি এক কিশোসহ ২৮ জন। বুলেটে তাজা দেহগুলো স্পটে বা হাসপাতালে নিতে নিতে নিথর হয়ে পড়েছিল। বুলেট যেমনি আঘাত করেছিল স্থলপথ থেকে, তেমনি আকাশ পথের হেলিকাপ্টার থেকেও গুলির অভিযোগ রয়েছে। কেমন আছেন জুলাই আন্দোলনে নিহতের পরিবারের সদস্যরা।

আরাফাত হোসেন আকাশের পরিবার

নারায়ণগঞ্জে জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের অবস্থা বেশ শোকাবহ। এক বছর পরও তাদের আপনজনকে হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। অনেকে বিচারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুণছে, আবার কেউ কেউ সরকারের দেওয়া আর্থিক সহায়তা পেলেও, তাদের মনে স্বজন হারানোর কষ্ট রয়ে গেছে। অনেক পরিবার এখনও আইনি প্রক্রিয়া এবং মামলার জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এবং কেউ কেউ নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত।

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড মোড়ে বুলেটের আঘাতে থেমে যায় আরাফাত হোসেন আকাশ নামে ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরের জীবন। ২১ জুলাই সকাল থেকে আন্দোলনকারী হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় নিহত আরাফাত হোসেন আকাশের বাবা, চাচা, চাচাতো ভাই সহ আন্দোলত ছাত্রদের পানি-শরবত খাওয়াতে সহযোগীতা শুরু করে। বেলা ১১টার দিকে ছাত্র-জনতার উত্তাল মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে এলোপাতাড়ি গুলিতে ৩টি বুলেট গুলিবিদ্ধ হয় আরাফাত হোসেন আকাশ। এসময় গুলিবিদ্ধ হলে আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় ঢাকা-মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৩টায় মৃত্যু হয় তার।

ঘটনার পর প্রায় একবছর হলেও ছেলে হারানোর শোকে এখনও কান্না থামছে না শহীদ আরাফাত হোসেন আকাশের বাবা-মায়ের। ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় বাবা-মা। ৪৫ বছর বয়স্ক বাবা মো. আকরাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে ফুটপাতে ক্ষুদ্র ফলের ব্যবসায়ী। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বর্তমানে আকরাম মানসিক রোগী। ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতি মনে পড়লেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে এখনও।

সুমাইয়ার মায়ের আকুতি- আমি মা হয়ে মেয়েটারে বাঁচাইতে পারি নাই

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা গুলি করতে থাকলে দিশেহারা আন্দোলনকারীরা মহল্লার ভিতর প্রবেশ করে। এসময় আইনরশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা এবং আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করতে মহল্লায় প্রবেশ করে। একই সময় র‌্যাবের হেলিকাপ্টার খুব নিচ দিয়ে উড়ছিল। সেই হেলিকাপ্টার দেখতে পাইনাদী দোয়েল চত্বর এলাকার সুমাইয়া তাদের ভাড়া বাসার ৬ তলার বারান্দায় দাড়ায়। সেখানেই তিনি গুলিতে নিহত হন।

এ প্রসঙ্গে নিহত সুমাইয়ার মা আসমা বেগম জানায়, আমি মা হয়ে মেয়েটারে বাঁচাইতে পারি নাই। মেয়ে আমার চোখের সামনে চইলা গেলো। এখন তিনি তার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠ বিচার চান সরকারের কাছে, প্রশাসনের কাছে। তিনি বলেন, নিজ দেশের মানুষ হত্যা করে এমন সরকার যেন এ দেশে আর না আসে।

গুলিতে গুরুতর আহত রুহুল আমিনের পরিবারের অবস্থা করুণ

গত বছর ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শিমরাইল মোড়ে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন একটি বেসরকারী কোম্পানির চাকুরীজীবি ৪৫ বছরের রুহুল আমিন। গুলিতে তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের হাড় উড়ে যায়। পরিবারের লোকজন পা বাঁচাতে ধার-দেনা করে তখনই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে। ৫আগস্ট পর সরকারী ফ্রি চিকিৎসা পেলেও এখনও পুঙ্গুত্ব অবস্থায় চলছে তার দিন। হাড় জোড়া দেওয়ার জন্য ডাক্তার পায়ের বাকি অংশে আরও ২২টি ছিদ্র করে। এরইমধ্যে একবছর অতিবাহিত হলেও কবে সুস্থ্য হবেন রুহুল আমিন তা কেউ বলতে পারছে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির গত একবছরে আয় রোজগার না থাকায় অনেকটা অসহায় পড়েছে রুহুল আমিনের পরিবার।

রুহুল আমিনের স্ত্রী পারুল আক্তার জানায়, তার স্বামীর পায়ের যে অবস্থা ডাক্তার বলছে আরও এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে ঠিকমত চলাফেরা করতে। পারুল আক্তার জানান, আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সংসারের আয় করার মতন কেউ নেই। উনার আয় দিয়ে আমাদের বাচ্চাদের ভরণ পোষণ ও লেখাপড়া চলতো। বর্তমানে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার দার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। উনার দৈনিক ঔষুধও কিনতে পারছি না নিয়মিত। কিভাবে আগামীদিন গুলো চলবে আল্লাহ ভালো জানেন। টাকার অভাবে আমাদের সংসার চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.