নির্বাচিত সংবাদ

বরিশালের মুর্তিমান আতংক সাদিক আব্দুল্লাহ পালিয়ে গেছে আমেরিকায়,সহযোগীরা ভারতে

sadek abdullah
print news

আহমেদ আবু নাইম,ইত্তেহাদ নিউজ :

সাদিক আব্দুল্লাহ।কার্য্যক্রম স্থগিত বরিশাল মহানগর আ.লীগের সাধারন সম্পাদক।বিসিসির সাবেক মেয়র।৫ আগষ্ট ‘২৪ এ শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত যাওয়ার পরেই বরিশাল থেকে পালিয়ে যান সাদিক আব্দুল্লাহ।ইত্তেহাদ নিউজের কাছে রাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান,সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল থেকে পালিয়ে ভারত হয়ে আমেরিকা গেছেন।তাকে আমেরিকায় দেখা গেছে।
সুত্রটি আরো জানায়,সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালের নেতা কর্মীদের নিয়ে গেড়ে ওঠাএকটি হোয়াটএ্যাপস গ্রুপে এসে খোজ খবর নেন মাঝে মাঝে।তবে তিনি আমেরিকার বাসা থেকে কম বের হোন। সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালের কালিবাড়ি রোডস্থ বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বাসায় আগুন দিঢে জ্বালিয়ে দেয়।পরে ঐ বাসা ছাত্র -জনতা বুলডোজার দিয়ে সামনের অংশ গুড়িয়ে দেয়। সাদিক আব্দুল্লাহ ছিল বরিশালের মুর্তিমান এক আতংকের নাম।সাদেকের সহযোগীরা ভারতে পালিয়ে গেছে।কেউ আজমির, কেউ কলকাতায় রয়েছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে হওয়ার সুবাদে অনিয়ম-দুর্নীতির ‘বরপুত্র’ ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে একতরফা জয় পান সাদিক। পরের বছর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন তিনি।মেয়র ও পদ বাগিয়ে নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অফিস থেকে মূল্যবান আসবাপত্রসহ মালামাল তার নিজ বাসায় নিয়ে যান।মেয়র হওয়ার পর তার বাসাকে বানিয়েছেন অফিস।যেখানে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
তার বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মৃত্যুর হয়। সাদেকের বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়।তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও বরিশাল সড়ক ও জনপথ এর রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে জনগনের টাকায় মায়ের নামে বরিশাল চৌমাথায় মহাসড়কে পার্ক তৈরী করে।সেটা ছিল সম্পূর্ন অবৈধ।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নকশাবহির্ভূত নির্মাণের কারণ দেখিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়া, জরিমানার নামে টাকা আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছে কমিশন দাবি, ভবন নির্মাতাদের কাছে ফ্ল্যাট দাবি, রাজনৈতিক বিরোধীদের মারধর, কথায় কথায় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করাসহ বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সাদিকের বিরুদ্ধে। তার নির্দেশে না চললে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় জেল পর্যন্ত খাটাতে হয়েছে অনেককে। পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি, বরিশাল ক্লাবও অবৈধভাবে দখল করেছেন তিনি।সেখানে তিনি এক এসি পাঁচ বছরের জন্য একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি এমনটি জানিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার।কিন্তু এত কিছুর পরেও কেউ টু শব্দ করতে পারেনি তার বিরুদ্ধে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে সার্বক্ষণিক ঘিরে রাখতেন তাঁর ছয় সঙ্গী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও তাঁরা মেয়রের প্রিয়জন।আলোচিত-সমালোচিত ছয় নেতা হলেন– মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইছ আহমেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত এবং জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিব হোসেন খান। তাঁদের মধ্যে বর্তমান দুই কাউন্সিলর ছাড়াও মান্না ও সাজ্জাদ কাউন্সিলর প্রার্থী হতে এক বছর আগেই মাঠে নামেন।যাদের দিয়ে পুরো বরিশাল নিয়ন্ত্রন করতেন চাঁদাবাজি থেকে ফ্লাট দখল। গত পাঁচ বছর বরিশাল নগরীতে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, নগর ভবনে সেবা নিতে আসা নাগরিককে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়সহ নানা অপকর্মের হোতা ছিলেন তাঁরা।
নিরব হোসেন টুটুল সাদিক যুগে তিনি মহানগরে শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক পদ পেয়ে যান। তাঁর পরিচিতি ছিল মেয়র সাদিকের ‘ক্যাশিয়ার’। নগরের সব হাট-বাজার, মৎস্যবন্দর, নৌবন্দর, বাস টার্মিনালের ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ ইজারাদার হন তিনি।বৈধ অবৈধভাবে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার মালিক।
সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র হওয়ার পর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পান তখনকার পদহীন ছাত্রলীগ নেতা রইছ আহমেদ মান্না। একপর্যায়ে তিনি তিনটি বাসের মালিক হয়ে জেলা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন শাখা ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে।যার নিয়ন্ত্রনে ছিল বরিশাল মহানগরীর মাদক নিয়ন্ত্রনে।
ভর্তি-বাণিজ্যসহ কলেজের আর্থিক-সংক্রান্ত বিষয়গুলো তাঁর মাধ্যমে হয়। কলেজের সাত পুকুরের তিনটিতে মাছ চাষের বাণিজ্য করছেন মুনিম।২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে মুখোশ পরে একদল যুবক সমাজকর্ম বিভাগে হামলা এবং কর্মচারী মিজানুর রহমান বাচ্চুকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনার মূল হোতা এই মুনিম।
বিসিসির সড়ক পরিদর্শক হিসেবে ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের নিয়োগের পরে অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে গোটা নগরে ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।পভিযোগ আছে অবৈধভাবে সিটি কর্পোরেশনের স্টল দখল করার।
মেয়রের আস্থাভাজন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নাও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।নগরের চৌমাথায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণের ইন্ধনদাতা ছিলেন মান্না। ঠিকাদারও ছিলেন তিনি।
জুলাই’২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাদিক ও তার বাহিনী ছাত্র জনতার ওপর একাধিকবার হামলা করে।ছাত্রদের নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করে। সাদিকের নেতৃত্বে ইত্তেহাদ নিউজ বরিশালের অফিস ভাংচুর করা হয়।ছাত্র জনতার ধাওয়ায় বরিশাল নগরীর সিএন্ডবি রোড এলাকা ত্যাগ করে ১৮ জুলাই ।পরে সদর রোড এলাকা দখল করে মিছিল মিটিং শুরু করে।অস্ত্রসহ মহড়া দেয়ায় আতংক ছড়িয়ে পরে নগরজুড়ে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মেয়র এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন সাদিক আবদুল্লাহ। তার অনুগতরা পান আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদপদবি। তার বিরোধিতা করলে শুধু অপমান, হয়রানি, মামলা নয়, নকশাবহির্ভূত নির্মাণের অভিযোগ তুলে বাড়িতে সিটি করপোরেশনের বুলডোজার চালানোর ভয়ে সবাই চুপ থাকতেন।দলীয় মনোনয়ন তার আপন চাচাকে দিলে সাবেক সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘বরিশাল মুক্ত হয়েছে। বরিশালে অনেক অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও সন্ত্রাস হয়েছিল। বরিশালের মানুষ অনেক কষ্টে এই দিনগুলো অতিবাহিত করেছে।
তার নিজ দলীয় নেতা কর্মীরা বলেন সাদিক মেয়র থাকাকালীন বরিশালে যারাই ভবন নির্মাণ করেছে, তাদের কাছে কমিশন হিসেবে ফ্ল্যাট অথবা ফ্লোর চাইতেন তিনি। না দিলে সিটি করপোরেশনের লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতেন। এমনকি নিজের মামার নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনেও অংশীদারত্ব চেয়েছিলেন সাদিক। রাজি না হওয়ায় ভবনটি নকশা মেনে হচ্ছে না অভিযোগ দিয়ে চারপাশ থেকে ১০ ফুট করে ভেঙে দেয় সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের নামে প্রায়শই চোখ ধাঁধানো প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে সেগুলোর অধিকাংশই ছিল কাগুজে ও দুর্নীতিপূর্ণ। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তা সংস্কার, বিদ্যুৎবাতি স্থাপন, এমনকি ময়লা ব্যবস্থাপনাতেও দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট বলে অভিযোগ নগরবাসীর। অভিযোগ আছে সাদেক মেয়র থাকা কালিন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে জার্মান প্রকল্প্রের কাজ না করে কয়েক কোটি টাকা আত্নসাত করে বলে জানান বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা।
বিভিন্ন সময়ে টেন্ডার বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য, ও অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। অনেক ঠিকাদার এবং কর্মচারী চুপ থাকলেও সম্প্রতি বদলির পর ভেতরের খবর ফাঁস হতে শুরু করে। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ব্যয়ের অস্বাভাবিক ব্যবধান, যা একাধিক তদন্তকারী সংস্থার নজরে এসেছে।তবে এখন পর্যন্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও দুদক কোন মামলা করেনি সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে।ফলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

২০১২ সাল থেকে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় এই নেতার নিয়ন্ত্রণেই ছিল এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ। তাঁর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক।

সরকার পতনের পর স্থানীয়রা, এমনকি আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরাই বলছেন, এই বাবা-ছেলের নিয়ন্ত্রণে ছিল এলাকার চাঁদাবাজি, দলের পদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন বাণিজ্য। আর দলে পরিবারতন্ত্র কায়েম করে আওয়ামী লীগকেই পঙ্গু বানিয়েছেন। তাঁরা আত্মগোপনে গিয়ে আরাম-আয়েশে থাকতে পারলেও তৃণমূলের কর্মীরা ঝুঁকিতে পড়েছেন।বরিশাল অঞ্চলে আ.লীগের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাতেই ছিল দলীয় পদ এবং মনোনয়নের চাবিকাঠি। তিনি জেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে একচেটিয়া বাণিজ্য করতেন বলে অভিযোগ দলের নেতা-কর্মীদের। মনোনয়নপ্রতি নেওয়া হতো ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

তা ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের পদ পেতেও হাসানাতকে উৎকোচ দিতে হতো বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক নেতা। তাঁদের মতে, হাসানাতের বড় সহযোগী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস তালুকদার, বানারীপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক এবং গৌরনদী পৌরসভার সাবেক মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ।নেতারা জানান, কেউ হাসানাতের বিরুদ্ধাচরণ করলেই বহিষ্কার করা হতো। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদ-বাণিজ্যও চলত একই পন্থায়।

২০২১ সালের নির্বাচনে বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হন নুরে আলম ব্যাপারী।  নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মাসুম মৃধা। তিনি বলেন, ‘দলের কাছে দুবার মনোনয়ন চাইলেও পাননি। অথচ অলৌকিক যোগ্যতার কারণে নুরে আলম ব্যাপারী মনোনয়ন পান। আসলে শতভাগ সত্য যে এখানে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এটাই বাস্তবতা। এটা যদি না হতো, তাহলে চাঁদপাশার বিএনপি-সমর্থিত দেলোয়ার রাঢ়ীও মনোনয়ন পেতেন না।’

ছাত্রলীগের একসময়ের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, ‘ছয় দফা আন্দোলনে জেল খেটেছি, ১৯৭৫ সালে বরিশালে মিছিল করেছি। আশির দশকে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু দুঃখ হলো হাসানাত সাহেব ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যেও আমাকে থাকতে দেননি।আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, ‘কৃষক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি থাকাকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন পেলেও আমার মনোনয়ন কেড়ে নিয়ে জাতীয় পার্টির মইদুলকে দেন হাসানাত।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনসুর আহমেদ  বলেন, বরিশালে কর্মীরা দুরবস্থায় আছেন। এখন তাঁদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পদ-বাণিজ্য এবং মনোনয়ন-বাণিজ্য হয়েছে—এমন কী প্রমাণ আছে? সভাপতি-সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া এসব বিষয় মন্তব্য করব না।’বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ছয়জন ‘খলিফা’ দিয়ে গোটা নগরী পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরের সব হাটবাজার, লঞ্চঘাট, খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন সাদিকের অন্যতম খলিফা নগর আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তিনি ক্যাশিয়ার হিসেবে সাদিকের চাঁদাবাজির টাকা তুলতেন। টুটুল বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি, ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত সিটি করপোরেশনের প্ল্যান পাস করানোর বিনিময়ে ঘুষ, কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে দলের কর্মীরাই বলছেন। সাদিকের এই খলিফারা এখন ভারতে পালিয়ে আছেন বলে জানা যায়।
নগরের নথুল্লাবাদের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না সেখানকার “বাঙলা হোটেল” দখল করে বাণিজ্য করেছেন। বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করতেন। চাঁদা না দিলে কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হতো।’২০০২ সালে বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মঈন তুষার। এরপর আর দলে ঠাঁই হয়নি। তিনি বলেন, দুই যুগ ধরে যুবলীগের নেতৃত্ব নেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগও দুই যুগ ধরে অচল। মহানগর আওয়ামী লীগ একতরফা গঠিত হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক নিজস্ব বলয় দিয়ে একতরফা দল চালাতেন। এই বরিশালে নেতারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাননি, ব্যক্তিকে শক্তিশালী করে টাকা কামিয়েছেন।’

বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক হারুন বলেন, এখানে ব্যক্তি রাজনীতি হয়েছে। এটাকে শো করে ব্যবসা করেছে হাসানাত পরিবার।এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নেতারা দল করেনি, ক্যাডার দিয়ে লুটপাট করছে। আসলে বেসরকারি নাইট কলেজের নেতা দিয়ে কি দল চালানো যায়?’ আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিন বছর হয়েছে ওয়ার্কিং কমিটির সভা হয়নি। কমিটিতে পদ পেয়ে কয়েকজন লুটপাট করছে। ভারতে আরামে থেকে মাঝে মাঝে ছবিও দেয় ফেসবুকে। অথচ এই নেতাদের জন্যই কর্মীরা আজ নির্যাতিত হচ্ছে।’

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.