ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

সাংবাদিক তুহিন হত্যা:গ্রেফতার-৭,জেল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি প্রধান আসামির

BeFunky collage 16 2508091313
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,গাজীপুর : গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধান আসামি ও তার স্ত্রীসহ ‘কিলিং মিশনের’ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আরমান নামের পলাতক অপর একজনকে খুঁজছে পুলিশ। খুনের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুক্রবার রাতে ওই ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি চাপাতি, একটি রামদা ও র‌্যাব স্টিক উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করার সময় পুলিশের সামনেই গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি কেটু মিজান জেল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার কড়া হুমকি দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অর্ধশতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিকেলে কিশোরগঞ্জ থেকে অপর একজনকে একই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে প্রধান আসামি মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৪), তার স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি (২৮), খুলনা সোনাডাঙ্গা থানার ময়লাপোতা এলাকার মো. হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), পাবনার ফরিদপুর থানার সোনাহারা এলাকার মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে স্বাধীন (২৮), একই জেলার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিন হাসানের ছেলে ফয়সাল হাসান (২৩), কুমিল্লার হোমনা থানার অনন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহ জালাল (৩২) এবং শেরপুর জেলার নকলা থানার চিতলিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে সুমন ওরফে সাব্বির (২৬)। তারা সবাই গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ঘটনার শুরুতে ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে যাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা, তিনি হলেন প্রধান আসামির স্ত্রী গোলাপি। এছাড়া ফুটেজে চাপাতি হাতে (দাড়িওয়ালা এবং মাথায় ক্যাপ পরা) কোপানোর জন্য যাকে দৌড়াতে দেখা যায় সে ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান। সাদা শার্ট ও জিনসের প্যান্ট পরা চাপাতি হাতে দাঁড়ানো স্বাধীন। অপর আসামির নাম আল আমিন। আসামি সুমনের কাছে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি এবং সুইস গিয়ার পাওয়া গেছে।

জিএমপির কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের পরপরই স্থানীয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ পর্যালোচনা করে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আটজনকে সনাক্ত করা হয়। পরে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক দল ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জিএমপির গোয়েন্দা (দক্ষিণ) গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে প্রধান আসামি মিজান ওরফে কেটু মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপিকে গ্রেফতার করে। হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া আল আমিনকে মহানগরীর বাসন থানা পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি জানান, স্বাধীনকে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। তার ঘাড়ে ডেঞ্জার (danger) লেখা ট্যাটু রয়েছে। র‌্যাব গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কমান্ডার পুলিশ সুপার কে. এম. এ. মামুন খান চিশতী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা সবাই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে রিমান্ডে আনা হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত কিনা এ বিষয়টি গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে।

জিএমপি কমিশনার আরো জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মিজান ওরফে কেটু মিজানের বিরুদ্ধে পূর্বের ১৫টি মামলা, শাহ জালালের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা, আল আমিন ও স্বাধীন এবং সুমনের বিরুদ্ধে ২টি করে মামলা রয়েছে।

জিএমপির বাসন থানার ওসি মো. শাহীন খান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই সেলিম এ মামলাটি করেছেন। ঘটনার পর শুক্রবার রাতে রাজধানীর তুরাগ থানা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের প্রত্যেককে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। গ্রেফতারকৃতরা সবাই ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করার সময় পুলিশের সামনেই গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি কেটু মিজান জেল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার কড়া হুমকি দিয়েছে। এতে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে জিএমপির উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রবিউল হাসান জানান, গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় জড়িত অপর একজনকে শনিবার কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতের নাম শহিদুল ইসলাম। তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। গ্রেফতারকৃত শহিদুলকে আনার জন্য বিকেলে পুলিশের একটি টিম কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এ নিয়ে সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত স্বাধীনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়।

জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া সম্ভব হবে। এ ঘটনায় আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীসহ উপযুক্ত সকল তথ্য প্রমাণ রয়েছে। আদালতে আসামিরা যদি নিজেদের অপরাধ স্বীকার নাও করে, তাহলেও এভিডেন্সই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে।

তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না। আমাদের জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। এই স্বল্প জনবল নিয়ে পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ৫ আগস্টের পর পুলিশ এখনো তাদের মনোবল ফিরে পায়নি। তাই এখানে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হয়। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ সময় তিনি, যথার্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারার কারণে তুহিন হত্যায় ব্যর্থতা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং নিহত আসাদুজ্জামান তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গতঃ গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের ঈদগাহ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। নিহত তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তুহিন গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একটি ইউনানী ওষুধ কোম্পানির গাজীপুরের ডিলার ছিলেন।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় নিহতের বড় ভাই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে শুক্রবার অজ্ঞাতদের আসামি করে বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন। হানিট্র্যাপের শিকার বাদশা মিয়ার উপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক তুহিনকে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেমে এসেছিল শোক ও ক্ষোভের ছায়া। দ্রুত বিচার ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবি উঠেছে সর্বস্তর থেকে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.