রাজনীতি

দেশের জনগণের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে বলে শিগগিরই:তারেক রহমান

রহমান
print news

অনলাইন ডেস্ক : অতি শিগগিরই দেশের জনগণের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রবিবার (১০ আগস্ট) বিকালে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন ঈদগাহ রোডে আয়োজিত এই সম্মেলনে বক্তব্যের শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, অতি শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে।

রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান সংলগ্ন মাঠে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। বক্তব্য দেন আরেক উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা। সম্মেলন পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ মামুন।

তারেক রহমান আরও বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ জনগণের সমর্থন ধানের শীষ তথা বিএনপি পাবে। তবে এরপরে দেশ গড়তে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। আগামী নির্বাচনে আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমাদের দেশকে গড়তে হবে। স্বৈরাচার শিক্ষা, বিচার, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের নিজেদের স্বার্থে। আগামী নির্বাচনে আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।

দেশ গড়তে বিএনপিই প্রথম সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আড়াই বছর আগে স্বৈরাচার সরকারের আমলেই আমরা বাংলাদেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিলাম। সেই ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এখন সংস্কারের জন্য যেসব আলোচনায় আসছে, অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি আড়াই বছর আগেই জাতির সামনে ঘোষণা করেছিল। কারণ আমরা বিশ্বাস করি এই দেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয় তাহলে কতগুলো ব্যাপারে রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। সেজন্য অন্য কেউ চিন্তা করার আগে আমরা বিএনপি আড়াই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলাম।

তিনি বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের সময় এমনভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সাজিয়েছিল, যাতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গিয়ে মানুষ সেবা নিতে বাধ্য হয়। এই দেশে হাসপাতাল ধ্বংস করে ইচ্ছে করে রোগীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়ে দিতো। তারা চিকিৎসার নামে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দিতো। আমাদের এখন নিজস্ব চিকিৎসক ও নার্স গড়ে তুলতে হবে, যাতে দেশের মানুষ দেশের হাসপাতালেই উন্নত চিকিৎসাসেবা পায়।

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতা দখল করে ছিল। কীভাবে তারা গুম, খুন, হত্যা শুরু করেছিল আমরা দেখেছি। তারা বিরোধী মতের মানুষের বিরুদ্ধে কীভাবে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল দেখেছি। এই সম্মেলনে যারা উপস্থিত তাদের অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। শুধু বিএনপি নয়, বিএনপির বাইরেও বহু রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে ছিল, ছোট-বড় যেমন দল হোক না কেন, যারা মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার ছিল, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। গুম-খুন করেছে। আমরা রাজনীতি করেছি, কিন্তু পরিবারের যে সদস্য রাজনীতি করেনি—তাকেও হয়রানি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক দল নয়, রাজনীতির বাইরেও বহু সাধারণ মানুষ যারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা দেখেছি কীভাবে অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, সেই সময় কীভাবে নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেটি যেকোনও নির্বাচনই হোক, প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে দেওয়া হয়েছিল। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি করা হয়েছিল। কীভাবে অর্থ-সম্পদ লুট করে পাচার করা হয়েছে, তা আমরা দেখেছি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করা। আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। এখন আমাদের জনগণের শাসন, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর মূল উপায় হলো জনগণের সরাসরি ভোট প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। সেই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ নির্ধারণ করবেন কে আগামী দিনে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবে।

অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথে এগোচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরকার সেই পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে আগামী রমজানের আগে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে। এখন ভোট হলেই হবে না, ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই হবে না। জনগণ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চায়, দেশের ভবিষ্যৎ কী? বিএনপি আগামীতে কী করবে? কেন মানুষ জানতে চায়, কারণ বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির ওপরে আস্থা রাখতে চায়।

তারেক রহমান বলেন, ‘যুবক-বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সব স্তরে ভালো শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ।

‘বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আজ ফারাক্কার কারণে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। সুজলা-সুফলা এলাকা পদ্মা নদীর পানির অভাবে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো। জাতিসংঘে যাবো প্রয়োজন হলে। আমাদের পানির ব্যবস্থা করতে হবে। খালগুলো সংস্কার করতে হবে যেন তারা পানি নিয়ে আবার ঝামেলা করলেও এখানে পানি থাকে।

তিনি বলেন, ‘সামনে অনেক কাজ। অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতে হবে। ছোট ছোট কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদিত দ্রব্য দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করতে হবে। বিচারব্যবস্থার কাছে বহু মানুষকে যেতে হয়। কিন্তু আমরা দেখছি বিচারব্যবস্থার জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতার কারণে বছরের পর বছর মানুষকে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। আমাদের এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, যাতে মানুষ দ্রুত বিচার পায়। কৃষির চ্যালেঞ্জ আছে। সঠিক সময়ে সার পৌঁছাতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে পণ্য পায় সেটা দেখতে হবে, একইসঙ্গে কৃষকরা যেন সঠিক মূল্য পায়।

বিএনপির পক্ষেই এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব এবং তা দেশের মানুষ বিশ্বাস করেন জানিয়ে দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘মানুষ এখন বিশ্বাস করেন একমাত্র বিএনপির পক্ষেই সম্ভব ধীরে ধীরে এই দেশকে গড়ে তোলা। আজ দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো যদি মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে আমাদের প্রথমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, তাহলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারবো না। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দুই হাত তুলে প্রতিজ্ঞা করিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের সামনে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা। বেকারদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, নদী খনন, খাল খনন—এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। তার জন্য দরকার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমাদের ডিসিপ্লিনড হওয়া দরকার। রাজশাহী মহানগরে আমার প্রত্যাশা থাকবে, আমরা সবাই শপথ গ্রহণ করবো যে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবো এবং দেশকে পুনর্গঠনের কাজে হাত দেবো।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.