ঠিকাদার মহিউদ্দিন মহারাজ পলাতক,দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ বন্ধ


অনলাইন ডেস্ক :পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন মহিউদ্দিন মহারাজ। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছিলেন ব্যবসায়ীও, ঠিকাদারি করতেন। তার দুই ভাইও এ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। ‘দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ পেয়েছিলেন মাহারাজ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে তারা গা ঢাকা দেন। ফলে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় ওই প্রকল্পের কাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ৫ আগস্টের পর কতজন ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেছেন তা জানার জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইএমইডি সূত্র জানায়, দেশের উন্নয়নকাজের জন্য প্রতিবছরই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার বিভাগে। গত অর্থবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ৩৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে সাবেক মন্ত্রী, এমপিরা পালিয়ে বা আত্মগোপনে চলে যান।
সূত্র জানায়, তারা আওয়ামী রাজনীতি করলেও এর মধ্যে অনেকেই ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। পিরোজপুর-২ আসনের (ভান্ডারিয়া উপজেলা) প্রতিনিধিত্বকারী সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মহারাজ তাদেরই একজন। আওয়ামী লীগের আমলে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় নদী ও খালের ওপর লোহার সেতু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২ হাজার ৪৯টি লোহার সেতু পুনর্নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। সেতুগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। ৫ আগস্টের পর সব ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেলে উল্লিখিত প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার খুবই কম হওয়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। তখন ঠিকাদারের পালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি উঠে আসে। আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন জানান, এলজিইডির ১০ প্রকল্পে ৩২৯ কোটি টাকার কাজ ফেলে ঠিকাদার পালিয়েছেন। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৩৩০ কোটি টাকা, সড়ক বিভাগের ২৭১ কোটি টাকা এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদাররা ১৬৩ কোটি টাকার কাজ ফেলে পালিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে কত প্রকল্পের কতজন ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন, তার তালিকা করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে নির্দেশ পালন করছি। এর অংশ হিসেবে পলাতক ঠিকাদারদের তালিকা ও কয়টি প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়েছে তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।যারা আওয়ামী লীগ ঘরানার ঠিকাদার ছিলেন তারা সবাই ভয়ে-আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ জন্য অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ সূত্র জানায়, সব মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের কাজ মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে গেছে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে অনেক অপেশাদার ব্যক্তির হাতে প্রকল্প চলে গেছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ঠিকাদার এ কাজ করেছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উন্নয়নকাজে।
এ প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চলমান বাফার ১৩ গুদাম প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিউল আলম বলেন, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তন হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কাজ মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সামগ্রিকভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের হার ব্যাপক কমে যায়।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।