বাংলাদেশ বরিশাল

বরিশালে স্বাস্থ্যের ডিজির আশ্বাস,আন্দোলনরত ছাত্রজনতার না

image 213146 1755097900
print news

বরিশাল অফিস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) আশ্বাসের পরেও  বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রজনতার। বরং বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) থেকে মহাসড়ক অবরোধের পাশাপাশি গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।

আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছে। যেখানে আন্দোলনকারীদের রাখা হয়নি।  স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বরিশালে না আসা পর্যন্ত বরিশাল ব্লকেড (মহাসড়ক অবরোধ) কর্মসূচির পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি গণঅনশন চালিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতা মহিউদ্দিন রনি। তবে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।

বুধবার (১৩ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে স্বাস্থ্যের ডিজি ডা. আবু জাফরের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বরিশালে যায়। এর আগে গত ১৭ দিন ধরে স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমে বরিশাল সার্কিট হাউসে স্বাস্থ্য বিভাগসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মহাপরিচালক আবু জাফর। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে যান তিনি। সেখানে হাসপাতালের সামনে অনশনরত পাঁচ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক।

পরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে মতবিনিময় করেন অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। এতে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, ছাত্র-প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক নেতারা অংশ নেন।

এ সময় মহাপরিচালক বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছে সেটা যৌক্তিক। এটা যেমন তাদের দাবি, তেমনি আমারও দাবি। স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের জন্য পৃথক দুটি সংস্কার কমিশন হয়েছে। তারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তাছাড়া কিছু দাবি আছে যেগুলো চাইলেই সমাধান করা যায় না। আধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে ক্রয় করতে হয়। এগুলো দ্রুত সরবরাহ করতে হলেও ন্যূনতম ছয় মাস সময় লেগে যায়। তাছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টিও সময়ের ব্যাপার। তবে খুব শিগগিরই সারা দেশে চিকিৎসক এবং নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এ থেকে বড় একটি অংশ বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় পাবে। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে এরই মধ্যে নানামুখি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালে ট্রলি নিয়ে যে অনিয়ম ছিল তা সমাধান হয়েছে। জনবল বাড়াতে এরই মধ্যে কিছু লোকও কন্ট্রাক্ট সার্ভিসের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। সব দাবিই পর্যায়ক্রমে মানা হবে।

এ সময় তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে বা যারা আন্দোলনের ইন্ধন দিচ্ছে তারা কি আসলে উন্নয়ন চায়, নাকি একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া বর্তমান সরকারকে চাপে ফেলতে চায় সে বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়টি প্রশাসন দেখবে। এখানে কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে সেটার বিষয়ে প্রশাসন তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার বক্তৃতা শেষে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সভায় অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মতামত গ্রহণ করেন। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা সব শ্রেণির মানুষদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা এবং উন্নয়নের বিষয়ে তদারকির প্রস্তাব দেন।

সভাশেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা পুনরায় হাসপাতালের সামনে আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় মহাপরিচালকের সামনেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বরিশালে আসার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে ব্যর্থ হয়ে বিকেলেই ঢাকার উদ্দেশে ফিরে যায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল।

এ বিষয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দিন রনি বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তো ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি। তাহলে ছাত্র-জনতার কাছে তার আসতে ভয় কীসের। তিনি আসলে ২০২৪-এর চেতনার সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তিনি বরিশালবাসীর প্রতি অবহেলা এবং বৈষম্যের সৃষ্টি করেছেন।

রনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসেছেন, সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অথচ সেখানে আমাদের কোনো প্রতিনিধি ছিল না। আমরা মহাপরিচালকের কাথায় আশ্বস্ত হতে পারছি না। আমরা চাই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজে বরিশালে এসে হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন এবং আমাদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন করবেন। তা না হলে আমাদের এই আন্দোলন চলবে।

মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমাদের ছোট ছোট ভাইয়েরা  তিন দিন ধরে আমরণ অনশন করছে। তাদের প্রতিও উপদেষ্টার মায়া নেই। আজ ওদের কিছু হয়ে গেলে সেই দায়-দায়িত্ব স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বরিশাল ব্লকেড কর্মসূচি চলবে। এর সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালের সামনে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু হবে।

এদিকে, চলমান আন্দোলন কর্মসূচির সপ্তম দিনেও নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে তাদের এ কর্মসূচি। সপ্তম দিনে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। তারা নগরীর রূপাতলীতে বরিশাল-ঝালকাঠি-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে।

উল্লেখ্য, শেবাচিম হাসপাতালের সিন্ডিকেট ভেঙে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ, চিকিৎসাসেবার উন্নয়নসহ দেশের স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে তিন দফা দাবিতে গত ১৭ দিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা অবস্থান কর্মসূচি, হাসপাতালের গায়েবানা জানাজা, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলন শুরুর তিন দিনের মাথায় বরিশাল ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.