পটুয়াখালী ইপিজেডে কর্মচঞ্চলতা: বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য


ইত্তেহাদ নিউজ,পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর শান্ত গ্রামীণ জনপদে এখন জমজমাট কর্মচাঞ্চল্য। একসময় ধানক্ষেত আর নদীর ঘাটে ভরপুর ছিল যে এলাকা, সেখানে আজ ভরাট হচ্ছে বালু, কাটা হচ্ছে মাটি, উঠছে বহুতল ভবন আর নির্মিত হচ্ছে প্রশস্ত সড়ক। চারদিকে ব্যস্ত শ্রমিকদের কোলাহল। মনে হচ্ছে, যেন একটি প্রাচীন গ্রামকে নতুন রূপে গড়ে তোলার মহাযজ্ঞ চলছে। গ্রামবাসীর চোখে এখন শুধু চাকরির আশ্বাস, তরুণদের মনে নতুন স্বপ্ন। ব্যবসায়ীরা তাকিয়ে আছেন অজানা বাজারের দিকে। সরকারের ভাষায় ‘পটুয়াখালী ইপিজেড বদলে দেবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য‘’বলছি দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল পটুয়াখালী ইপিজেড’র কথা।
এক লাখ চাকরির প্রতিশ্রুতি, হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ
সরকারি হিসাব বলছে, আগামী বছরের শুরুতেই বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে শিল্প প্লট। প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে অন্তত এক লাখ মানুষ সরাসরি চাকরি পাবেন, আর দুই লাখ মানুষ যুক্ত হবেন পরোক্ষ কর্মসংস্থানে। এর পাশাপাশি, আসবে বিপুল বিনিয়োগ প্রায় ১৫৩ কোটি ডলার বা ১৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার বেশি। উৎপাদন শুরু হলে এখান থেকে বছরে রপ্তানি হবে প্রায় ১৮৩ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য, যা দাঁড়াবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর ও বিদ্যুতের শক্ত ভিত
দক্ষিণাঞ্চলে প্রথমবারের মতো ইপিজেড গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে বিশাল অবকাঠামোগত অগ্রগতি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে পটুয়াখালীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হয়েছে। পাশে পায়রা সমুদ্রবন্দর। আবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দরে রেল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও তৈরি।
শুধু তাই নয়, বিদ্যুতের শক্ত ভিতও প্রস্তুত। কলাপাড়ায় ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, আরেকটি নির্মাণাধীন। বরগুনার তালতলীতে সচল রয়েছে ৩০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও যুক্ত হয়েছে শক্তির ভারে।
সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে আধুনিক শিল্পনগরী
পটুয়াখালী ইপিজেড নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১,৪৪২ কোটি টাকা, এর পুরোটা আসছে দেশীয় অর্থায়ন থেকে। এর মধ্যে সরকার দেবে ১,১০৫ কোটি টাকা, বাকি অংশ বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে।
প্রকল্প এলাকায় থাকছে ৩০৬টি শিল্প প্লট। সঙ্গে চারটি ৬ তলা কারখানা ভবন, তিনটি ১০ তলা ও চারটি ৬ তলা আবাসিক ভবন, অফিস কমপ্লেক্স, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, হেলিপ্যাড, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি), এমনকি বৃষ্টির জলাধার পর্যন্ত। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কুয়াকাটায় সোয়া দুই একর জমির উপর আধুনিক ক্লাব নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
শিল্পের পরিধিও বৈচিত্র্যময় হালকা প্রকৌশল, আসবাবপত্র, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পোশাক, ইলেকট্রিক্যাল-ইলেকট্রনিকস থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি খাত।
মানুষের স্বপ্ন, বিনিয়োগকারীর আস্থা
পটুয়াখালী ইপিজেডের প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, গ্যাস সংযোগ থাকলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। তবে গ্যাস ছাড়াও শিল্প স্থাপন সম্ভবÑ যেমন উত্তরা ও মোংলা ইপিজেডে হয়েছে। ইতোমধ্যেই জমি ভরাট, সীমানা প্রাচীর, রাস্তা নির্মাণের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। অধিগ্রহণকৃত জমির মালিক ১৫৪ জনের জন্য পুনর্বাসনের কাজ চলছে। তিনি আশাবাদী আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কয়েকজন বিনিয়োগকারীর হাতে শিল্প প্লট তুলে দেওয়া হবে। যাতে দ্রুত উৎপাদন শুরু করা যায়।
দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প বিপ্লবের সূচনা
পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর আর বিদ্যুতের শক্ত ভিত এই তিন স্তম্ভকে ঘিরে পটুয়াখালী ইপিজেড হয়ে উঠছে দক্ষিণাঞ্চলের নতুন শিল্প হৃদয়। এখানে কর্মসংস্থান, বিদেশি বিনিয়োগ আর রপ্তানির যে সুবিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা শুধু পটুয়াখালী নয় পুরো দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে যোগ করবে নতুন গতি। অপেক্ষা শুধু স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।