বাংলাদেশ ঢাকা

আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করায় তিন সাক্ষীর অভিযোগ

178582 os
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : নির্যাতনের মাধ্যমে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন তিন সাক্ষী। বুধবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন তারা। তিন সাক্ষী হলেন- মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন ও আলতাফ হাওলাদার। তাদের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হোসেন।

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিরা হলো- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি একেএম আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমানসহ ৪০ জন।
অভিযোগে পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ২০০৯ সালে ৩০শে আগস্ট স্থানীয় এমপি একেএম আব্দুল আওয়ালের ফোনে পরদিন তার বাসভবনে যাই। সেখানে অস্ত্র মামলার আসামি আক্তারুজ্জামান কুলু, জিয়াউল আহসান গাজীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে এমপি সাহেব আমাকে বলেন, তার সঙ্গে উকিলের চেম্বারে যেতে। আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে তোমাকে একটা মামলা করতে হবে। আমি বললাম, কেন তার বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে যাবো। তখন আউয়াল উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। আমি তাতেও রাজি না হওয়ায়, এমপি আউয়াল চেয়ার থেকে উঠে এসে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি চিৎকার করলে রুমের বাহিরে থাকা আসামি তানভীর মুজিব অভি, হাসান আম্মান লিটনসহ বাকি আসামিরা রুমের ভেতর দলবেঁধে ঢুকে পড়ে। তারা আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে চরম শারীরিক নির্যাতন করে ও বলে, তোকে মামলা করতেই হবে, না হলে মেরেই ফেলবো।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে, এমপি তার গাড়িতে করে আমাকে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি এডভোকেট আলাউদ্দিনের চেম্বারে নিয়ে যায়। আলাউদ্দীন আগে থেকেই মামলার কাগজ প্রস্তুত করে রেখেছিল। সেই কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন, আমি স্বাক্ষরের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে একটা মামলা করতে হবে, এইটা সেই মামলার কাগজ, তুমি সই করো, বাকিটা আমি দেখবো। আমি স্বাক্ষর না করলে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। তখন তানভীর মুজিব অভি, হাসান আম্মান লিটন, এডভোকেট শহিদুল হক পান্নাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিল। আমি মিথ্যা মামলায় স্বাক্ষর করবো না শুনেই আসামি খাইরুল ইসলাম মিঠু ও অনিরুজ্জামান অনিকের নেতৃত্বে অন্যরা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাতের কাছে যে যা কিছু পেয়েছে তাই দিয়েই আমাকে মারতে থাকে।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে পিরোজপুর সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আবু জাহিদের কাছে থাকা অস্ত্র আসামি তানভীর মুজিবের হাতে তুলে দেয়। তখন আলাউদ্দিন আমার গলা চেপে ধরে আর অভি আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকায়। এ সময় আলাউদ্দিন বলতে থাকে, এখনি মামলার কাগজে স্বাক্ষর না করলে গুলি করে হত্যা করবো। আমি ভয় পেয়ে যাই এবং কাগজে স্বাক্ষর করি। কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আলাউদ্দীন, দেলোয়ার হোসেন, দিলিপ কুমার, শহিদুল হক পান্না, তরুণ ভট্টাচার্যের শেখানো মতে জবানবন্দি দিই এবং মামলা করার পর তারাই আমাকে মামলার বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিতে বাধ্য করে।

তিনি বলেন, ২২শে জুলাই আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। আমাকে ধানমণ্ডির একটি বাসায় নিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। পরে জানতে পেরেছি, ওই বাসাটি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অফিস আর উক্ত কাগজটি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলার কাগজ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন পিরোজপুরের জিয়ানগর থানার পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলের মাঠে যায়। তারা ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের সব ঘটনা জানতে চায়। আমি ওই সময়কার যত সত্য ঘটনা জানি তা খুলে বলি। রাজাকারদের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ সকল অপকর্মের সত্য ঘটনাগুলো সব তাকে বলি। কিন্তু আমরা কেউই সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে কিছুই বলিনি। তাকে আমাদের মধ্যের অনেকেই তখন চিনতাম। তিনি রাজাকার ছিলেন না, আর মহান মুক্তিযুদ্ধের কোনো ঘটনায় আমরা তার নামও বলিনি। কিন্তু পরবর্তীতে আসামি তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাদের বলে, তোমরা পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানীর যেসব ঘটনা আমাকে বলেছো সেইসব ঘটনায় অন্য সকল রাজাকারের নামের সঙ্গে সাঈদীর নামও বলতে হবে। তাইলে তোমাদের আর বেশি শেখানো লাগবে না। ঘটনা তো ঠিকই ঘটছে, খালি ওই ঘটনায় সাঈদীর নামটা ঢুকায় দিবা।

তিনি বলেন, তখন আমরা একসঙ্গে সবাই বলে উঠি এটা আমরা পারবো না। এই কথা বলতে না বলতেই আমাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের ঝড়।তিনি বলেন, ৭১ সালে পাকসেনারা সুখরঞ্জন বালির ভাই বিশেশ্বর বালিকে (বিশাবালি) হত্যা করে। আসামি হেলালউদ্দিন সুখরঞ্জন বালিকে তার ভাই বিশাবালি হত্যার জন্য সাঈদীকে দায়ী করে জবানবন্দি দিতে বলে। কিন্তু সুখরঞ্জন বালি রাজি না হওয়ায় তাকে হেলালউদ্দিন ও উপস্থিত অন্যরা চরম অত্যাচার শুরু করে। তারপরও সে রাজি না হওয়ায় তাকে পাশের রুমে নিয়ে যায়। আমরা এই রুমে বসে সুখরঞ্জন বালির চিৎকার শুনতে পাই। আমাদের ওপর চলতে থাকা নির্যাতনের একপর্যায়ে পাশে থাকা ইন্দুরকানীর ওসি তার পিস্তল আসামি হেলালউদ্দিনের হাতে দিলে ওই পিস্তল দিয়ে হেলালউদ্দিন আমাকেসহ আলতাফ ও মাহতাবের মাথায় আঘাত করে। এরপর ওই পিস্তল পর্যায়ক্রমে আমাদের মাথায় ঠেকিয়ে আসামি হেলাল বলেন, আমার শেখানো মতে জবানবন্দি না দিলে এখনি গুলি করে হত্যা করবো।

তিনি বলেন, তাদের করা নির্যাতন আর সইতে না পেরে এবং মেরে ফেলার হুমকিতে ভয় পেয়ে তাদের শেখানো মতে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের করা সব অপকর্মের ঘটনায় সাঈদী সাহেবের নাম বলতে রাজি হই এবং হেলালউদ্দিন যে জবানবন্দি লিখে দেয় তাতে আমরা স্বাক্ষর করি। এরপর ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য নেয়া শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন তারিখে আমাকে, আলতাফ হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার ও অন্যান্য সাক্ষীদের পিরোজপুর থেকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাক্ষীদের ধরে নিয়ে এসে ঢাকার গোলাপবাগে অবস্থিত একটি সেফ হাউজে আটকে রাখা হয়। সেখানে আটকে রেখে হত্যার হুমকি দিয়ে আমাদের সাজানো মিথ্যা জবানবন্দি মুখস্থ করানো হয়। পরে ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, সৈয়দ হায়দার আলী, রানা দাসগুপ্ত, জোয়াদ আল মালুম, আসামি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাত আরও অনেকে আমাদের জীবননাশের হুমকি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো এবং বাঁচতে চাইলে তাদের কথামতো মিথ্যা ও বানোয়াট জবানবন্দি মুখস্থ করতে বলতো।

তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে সেফ হাউজে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম রাতের বেলা আসতো। তারা আমাদের শেখানো জবানবন্দি না দিলে মেরে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিতো। তিনি আরও বলেন, সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে ৭১ সালে তার স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে সাঈদী হুজুর ধর্ষণ করেছেন মর্মে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। সে সেফ হাউজ থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে ধরে নিয়ে আসে। তার নাতি সুমনকে পিরোজপুর থেকে অপহরণ করে নিয়ে আসে। পরে মধুসূদন মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে যেয়ে সাক্ষীরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করেন।

তিনি বলেন, প্রয়াত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা যুদ্ধাপরাধ/মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি ছিল মূলত সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাকে সহ অন্যান্য সাক্ষীদের হত্যার হুমকি দিয়ে, স্ত্রী-সন্তান এমনকি নাতিদের অপহরণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক আমাদের দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২১শে আগস্ট সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুমসহ নির্যাতনের দায়ে শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি। অভিযোগের পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.