রাজাপুরে সাত কোটি ১৫ লাখ টাকার কাজ ভাগাভাগির পাঁয়তারা


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন ডেস্ক : ঝালকাঠির রাজাপুরে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ব্যাপক অনিয়মের কারণে এখনো ঝুলে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিউল বাশারের যোগসাজশে সাত কোটি ১৫ লাখ টাকার এই কাজ গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভাগাভাগির পাঁয়তারা চলছে।
অভিযোগ রয়েছে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। জানা যায়, চলতি বছরের ৮ মে রাজাপুরের ৩৯ জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার আবাসন নির্মাণ কাজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। সরকারের অর্থায়নে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় রাজাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। তবে কাজ বাস্তবায়ন কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এলটিএম (সীমিত দরপত্র পদ্ধতি) পদ্ধতিতে ১০টি প্যাকেজে কাজটির দরপত্র আহ্বান করা হয়।
রাজাপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে ৫৮টি শিডিউল বিক্রি হয়। কিন্তু প্রতি প্যাকেজে ৩/৪টি করে মোট ৩০টি শিডিউল জমা পড়ে। এর মধ্যে ১টি লাইসেন্সেই জমা হয় ২০/২৫টি শিডিউল। ১০টি প্যাকেজে সাত কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দের এই কাজে শিডিউল জমা দেয় মাত্র ৩/৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে বাকি যারা শিডিউল ক্রয় করেছে, সেসব ঠিকাদার শিডিউল জমা দিতে পারেনি। এই টেন্ডারে শিডিউল কিনে জমা দিতে না পারা ঠিকাদার আবুল কালাম হায়দার সিকদার বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কারসাজি হওয়ায় আমিসহ অনেক ঠিকাদার শিডিউল জমা দিতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝালকাঠি শহরের একজন ঠিকাদার বলেন, রাজাপুরে শিডিউল ড্রপিং হওয়ায় ভয়ে ওখানে যেতে পারিনি। আমরা মনে করেছিলাম ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিডিউল ড্রপিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু রাজাপুরের পিআইও কারসাজি করে শিডিউল ড্রপিং শুধু রাজাপুর ইউএনও অফিসে রাখায় আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
এই টেন্ডার বাতিল করে আমরা পুনরায় স্বচ্ছ টেন্ডার আহ্বানের দাবি জানাচ্ছি। ঠিকাদাররা জানান, পিআইও শফিউল বাশার তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য পত্রিকায় যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন, সেখানে শুধু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে শিডিউল জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একাধিক স্থান রাখা হয়নি। এ কারণে প্রভাবশালী ঠিকাদারদের ভয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে শিডিউল জমা দিতে পারেননি। অতীতের বিভিন্ন টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের পাশাপাশি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও রাজাপুর থানায় সিডিউল জমা দেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে।
প্রকল্প কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পিপিআর-এর ৯৬-এর ১১ বিধি অনুসারে ম্যানুয়াল টেন্ডারের ক্ষেত্রে একাধিক জায়গায় টেন্ডার বক্স ও সিডিউল সরবরাহ করতে হবে। যেহেতু এই টেন্ডারটি যোগসাজশের মাধ্যমে হয়েছে তাই এ দরপত্রে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করা হয়েছে। গত ৩ জুন এ প্রকল্পের টেন্ডার ওপেনিং হয়েছে।
শুধু সিডিউল ড্রপিংয়ের স্থান নির্ধারণে পক্ষপাতিত্ব নয় প্রকল্প কর্মকর্তা শফিউল বাশারের পছন্দের ঠিকাদাররা ৫ পারসেন্ট লেস না দিয়েই এসপার পদ্ধতিতে (১০০ পারসেন্ট) সিডিউল জমা দিয়েছে। যার কারণে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে এসব অনিয়মের কারণে এই প্রকল্প কমিটির অন্যতম সদস্য রাজাপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার ইভাল্যুশন সিট ও ওপেনিং সিটে স্বাক্ষর করেননি। এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার বলেন, প্রকল্পে দরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি তাই আমি ইভাল্যুশন ও ওপেনিং সিটে স্বাক্ষর করিনি।
রাজাপুরের ওএসডি হওয়া সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ এই প্রকল্প কমিটির সভাপতি ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফেসে যাবার ভয়ে তিনিও এ প্রকল্পের ইভ্যালুশন সিট ও ওপেনিং সিটে স্বাক্ষর করেননি। যে কারণে পুরো টেন্ডার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখন ঝুলে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প কমিটির বর্তমান সভাপতি রাজাপুরে সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ফাইল দেখে বিস্তারিত জানাতে পারব।
পিপিআর-এর ৯৬-এর ১১ বিধি লংঘন করে সিডিউল ড্রপিংয়ের জন্য একটি মাত্র স্থান নির্ধারণ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, রাজাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিউল বাশার বলেন, এটা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা। কর্তৃপক্ষ মনে করেছে তাই এক স্থানে ড্রপিং রেখেছে।
টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম থাকায় প্রকল্প কমিটির সভাপতি সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কমিটির অন্যতম সদস্য এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ইভাল্যুশন সিট এবং ওপেনিং সিটে স্বাক্ষর করেননি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর না দিয়ে বলেন, তারা সময় নিয়েছেন। তাছাড়া কাজ তো এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
৫% লেসের বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদাররা সব এক হয়ে লেস না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখানে আমার কিছু করণীয় নেই। অধিকাংশ সিডিউল কেন জমা পড়েনি জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ঠিকাদার সিডিউল কিনে জমা না দিলে আমার কি করার আছে। সৌজন্যে :আমার দেশ
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।