নির্বাচিত সংবাদ অনুসন্ধানী সংবাদ

গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল্লাহ ও সাত্তারের ‘প্রাইজ পোস্টিং’

79ff24e2 3037 4ca6 ae4b ccead69274a0
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা :  ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের আবারও পূনর্বাসন করা হলো গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং দিয়ে। চার বছর সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দায়িত্ব পালন করা ফ্যাসিবাদের আস্থাভাজন ইডেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তারকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা ডিভিশন-২ এ বদলি করা হয়েছে। যার দায়িত্বে থাকবে বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, গণভবনসহ ভিআইপি স্থাপনাগুলো।

শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দায়িত্ব পালন করা ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহ’কে দেয়া হয়েছে নবগঠিত শেরে বাংলানগর বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব। ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাত্তার ও সানাউল্লাহকে প্রাইজ পোস্টিং দিলেন প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার শামীম আখতার তার ব্যাচের ৭ নম্বরে থাকার পরেও প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় পাঁচ বছর ধরে।

সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বে থাকা সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের আস্থাভাজন হিসেবে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতি দায়িত্ব পালন করে গেছেন শামীম আখতার। ফ্যাসিবাদের পতনের এক বছর পরেও কোন জাদুবলে সে বহাল তবিয়তে রয়েছে তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, বিদায়ের শেষ মুহুর্তে গণপূর্তের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাত্তার ও সানাউল্লাহদের পদায়নের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পূনর্বাসন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সন্ধ্যায় আব্দুস সাত্তার ও সানাউল্লাহর বদলির আদেশে স্বাক্ষর করে প্রধান প্রকৌশলী। আব্দুস সাত্তার ইডেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকাকালে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ও থোক বরাদ্দের বেশিরভাগ টাকাই লুটপাট করেছেন। তাকে মূলত: রাখা হয়েছিল প্রধান প্রকৌশলীর দুর্নীতি সম্পর্কিত ফাইলগুলো ধামাচাপা দেয়ার কাজে। আর সানাউল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বঙ্গভবনের ক্ষমতা প্রদর্শন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার দায়িত্ব পালনকালে সম্পাদিত কাজ ও বিলের তদন্ত করলে এর ৮০ ভাগ কাজের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম সানাউল্লাহ’র কেস স্টাডি:

গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহর বিরুদ্ধে পূর্বে ও বর্তমানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এবং আছে। প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকার নির্দেশনা অমান্য করে মাত্র ছয় মাসে ৫৪ দরপত্র এলটিএম এর পরিবর্তে ওটিএম করে পছন্দের ঠিকাদার কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই ছাত্রলীগ ক্যাডার খ্যাত প্রকৌশলী বুয়েটে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল। এই সানাউল্লাহ্ পূর্বেও গণপূর্ত বিভাগ-২ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করেন গণভবন ও প্রধান মন্ত্রী কার্যালয়ের সকল পথ ঘাট তার চেনা শোনা। নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ, একাধিক ফ্ল্যাট প্লটের মালিক।

তিনি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-২ এ যোগদান করার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিকাংশ ওটিএম দরপত্র তার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আসছিলেন। এ কারণে অনেক সাধারন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জানা যায়, তিনি দপ্তরের বিভিন্ন মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন এপিপির কাজ শতকরা ৫০ ভাগ টেন্ডার এলটিএমের পরিবর্তে ওটিএম করেছেন। ব্যাপক অনিয়ম করে নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল্লাহর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছেন ১০% কমিশনের বিনিময়। দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী যতটুকো কাজ হবে ততটুকু বিল দেবে কিন্তু প্রকৌশলী সানাউল্লাহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বিল দিয়ে দিচ্ছেন তার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ওটিএমের আইডি গুলো হলো: 997828,997827, 997826,997825, 995647, 994880, 995463, 995464, 995465, 995466, 995467, 994879, 995488, 995489, 995490, 995491, 995492, 995493, 994850, 994851, 995148, 994647, 994646, 994817, 994818, 994480, 994598, 994629, 994625, 994626.

ছাত্রলীগের নামধারী এই প্রকৌশলী গুরুত্বপূর্ন এই ডিভিশনে এসে ব্যাপক দূর্নীতি করে স্বৈরাচার সরকারকে ফান্ডিং করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার সারাক্ষণ বার্তাকে জানান, সানাউল্লাহ এই ডিভিশনে আসার পরে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে ব্যাপক কমিশন হাতিয়ে নিয়ে বাহিরে অর্থ পাচার করেছে।

এছাড়াও রাজধানীর জিগাতলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৩১২ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। নথিপত্রে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনে সমাপ্ত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন (পিসিআর) প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় অর্থাৎ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখনো তা হয়নি।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জিগাতলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মাণ করা আবাসন প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।সে অনুযায়ী প্রকল্প সমাপ্তও করা হয়েছে। পরিশোধ করা হয়েছে প্রকল্পের সব অর্থ। এ প্রকল্পের কাজ পায় গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাগজপত্রে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সমাপ্ত দেখানো হলেও বাস্তবে কাজ শেষ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে গণপূর্তের কর্মকর্তাদের সখ্যের অভিযোগও রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কাজ সম্পন্ন না হলেও সমাপ্ত ঘোষণার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তৎপর হয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এ সকল সিন্ডিকেটের মূল নেপথ্যে ভূমিকা ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলি এ এস এম সানাউল্লাহ।

এছাড়াও নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার সচিবালয়ের পোড়া ভবন ব্যয় ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে তার ব্যক্তিগত লুটের চাঞ্চল্যকর তথ্য পরবর্তীতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.