৬০ বছর পর বন্ধ হচ্ছে মুম্বাইয়ের প্রাচীনতম ও অন্যতম সুপরিচিত পারসি ম্যাগাজিন পারসিয়ানা


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় ফোর্টে অবস্থিত একটি পুরোনো,মধ্যযুগীয় একটি ভবনের জরাজীর্ণ অফিস থেকে প্রকাশিত হয় দেশের প্রাচীনতম ও অন্যতম সুপরিচিত পারসি ম্যাগাজিন পারসিয়ানা। আগামী অক্টোবর মাসে বন্ধ হয়ে যাবে এই ম্যাগাজিনটি। প্রকাশিত হওয়ার ৬০ বছর পর ম্যাগাজিনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এর পাঠক কমছে, অর্থের ঘাটতি আছে এবং ম্যাগাজিনটি চালাবে এমন লোকও নেই।
পারসি সম্প্রদায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভাবনা লিপিবদ্ধ করতে ১৯৬৪ সালে চিকিৎসক পেস্তোজি ওয়ার্ডেন ম্যাগাজিনটির প্রকাশ শুরু করেন। পোস্তোজি চন্দন কাঠের ব্যবসাতেও জড়িত ছিলেন।
তখন থেকে একটা সময় পর্যন্ত ক্রমাগত ম্যাগাজিনটির পাঠক ও প্রভাব বেড়েছে। বহু পারসির কাছে এটি ছিল তাদের সম্প্রদায়ের কার্যকলাপের জানালা। যখন পারসি সম্প্রদায়ের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছিল এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন ম্যাগাজিনটি হয়ে উঠেছিল তাদেরকে সংযুক্ত, সহযোগিতা ও একাত্মতাবোধের অন্যতম একটি মাধ্যম।
পারসিয়ানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে কেবল এর সাবস্ক্রাইবার বা ক্রেতারাই মর্মাহত হয়েছেন এমন নয়, কষ্ট পাচ্ছেন তারাও যারা এর ঐতিহ্য সম্বন্ধে জানেন।
১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সুশান্ত সিং বলেছেন, ‘যেন একটি যুগের অবসান হচ্ছে। আমরা প্রায়ই মজা করে বলতাম, যদি তুমি পারসিয়ানা সম্বন্ধে না জানো বা এটি নিয়ে উৎসাহের সঙ্গে কথা বলতে না পারে তাহলে তুমি আসল পারসি নও।’
আগস্টে ম্যাগাজিনটি এক সম্পাদকীয়তে বন্ধ হওয়ার ঘোষণা দেয়; এরপর থেকেই সহমর্মিতার বার্তা যেন উপচে পড়ছে।
সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় মুম্বাইয়ের এক পাঠক লিখেছেন, ‘আমাদের এই ছোট সম্প্রদায়কে আগ্রহ ও যত্নের সঙ্গে তুলে ধরা যে সম্ভব, তা ভাবাই তো কঠিন। অথচ, পারসিয়ানা মুন্সিয়ানার সঙ্গে সেই দায়িত্ব সামলেছে।’
ম্যাগাজিনটি এখন চালাচ্ছেন ৮০ বছর বয়সী জেহাঙ্গীর পাটেল। ১৯৭৩ সালে মাত্র এক রুপিতে কিনে নেওয়ার সময় থেকেই তিনি চাইতেন পারসিয়ানায় যেন ‘সাংবাদিকতাসুলভ প্রচেষ্টা’ থাকে।
ওয়ার্ডেনের হাত ধরে যখন চালু হয়েছিল, তখন পারসিয়ানা ছিল মাসিক। এতে পারসিদের লেখা নানান নিবন্ধ আর ওয়ার্ডেনের চিকিৎসা সংক্রান্ত লেখা থাকতো।
ভার নেওয়ার পর জেহাঙ্গীর পাটেল একে পরিণত করেন পাক্ষিক ম্যাগাজিনে, ছাপা শুরু হয় প্রতিবেদনধর্মী নিবন্ধ, তীক্ষ্ণ কলাম ও অলঙ্করণ, যেখানে নানান সংবেদনশীল পারসি ইস্যুগুলোকে সততা ও হাস্যরসের সঙ্গে তুলে ধরা হত।
তিনি অনেক সাংবাদিক নিয়োগ দেন, অনেককে প্রশিক্ষিত করেও গড়ে তোলেন। সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক বিক্রির পদ্ধতি গড়ে তোলেন এবং সাদা-কালো ম্যাগাজিনটিকে করেন রঙিন।
১৯৮৭ সালে ম্যাগাজিনটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে আন্তঃধর্মীয় বিবাহ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এটি ছিল এক সাহসী পদক্ষেপ। কারণ সম্প্রদায়টি কড়া অন্তঃবিবাহের জন্য পরিচিত।
প্যাটেল বলেন, এই বিজ্ঞপ্তিগুলো সম্প্রদায়ে এক প্রকার আলোড়ন তোলে। অনেক পাঠক আমাদের লিখেছিলেন, এটি বন্ধ করতে। কিন্তু আমরা তা করিনি।
তিনি বলেন, পারসিয়ানা কখনো বিতর্কের ভয়ে পিছু হটেনি, উল্টো যে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে নানামুখী দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করার চেষ্টা করেছে।বছরের পর বছর ধরে পারসিদের সংখ্যা কমে আসা এবং তারা যেখানে মৃতদেহ সমাহিত করে সেই টাওয়ার অব সাইলেন্স ব্যবহার কমে আসাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে আসছে।
১৫ সদস্যের যে দলটি পারসিয়ানা চালায়, তারা এখন ম্যাগাজিন এবং তাদের সাংবাদিক জীবনের ইতি টানার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদের অনেকের বয়স এখন ৬০ কিংবা ৭০-এর ঘরে, জেহাঙ্গীরের অধীনে তারা ম্যাগাজিনটিতে যুক্ত হয়েছিলেন।
প্যাটেল জানিয়েছেন, অফিসে শেষদিন এলাহি কোনও আয়োজনের পরিকল্পনা নেই তাদের। তবে আসন্ন সংখ্যাগুলোতে তারা পারসিয়ানার দীর্ঘ যাত্রা ও ঐতিহ্যকে তুলে আনতে চান।
দল হিসেবে শেষদিন হয়তো তারা অফিসে দুপুরের খাবার খাবেন। থাকবে না কেক, বা কোনও উদযাপন। মুহূর্তটা দুঃখের। উদযাপনের মতো অনুভূতি থাকবে বলে আমার মনে হয় না, বলেছেন প্যাটেল।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।