* নেপথ্যে উপ-নিবন্ধক মোহাম্মদ মোস্তফা
মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল: সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে দীর্ঘ সময় বরিশাল বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরে কর্মরত রয়েছেন প্রভাবশালী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা।শেরে বাংলা আঞ্চলিক সমবায় ইনস্টিটিউটে দ্বায়িত্ব পালনের সময় ব্যাপক লুটপাট করেছেন।এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ।
বরিশাল সমবায় ব্যাংকের জমি কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানায় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মোহাম্মদ মোস্তফার বিরুদ্ধে।বরিশালে সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের জমিতে স্থায়ী ভবন নির্মাণ করে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। পুরো বিষয়টি অনিয়মের মাধ্যমে হয়েছে বলে দাবি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার। তদন্ত শেষে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে বলে জানান তিনি ।
ইতোমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপক্ষে তার একাধিক পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি ঐ কর্মকর্তার শাস্তির দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন সমবায় ব্যাংকের সাবেক সদস্যরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ সময় বরিশালে কর্মরত আছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধীনস্থদের বদলির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক সমবায় ব্যাংকের সম্পত্তি নাজেমস বিরিয়ানীর মালিক ফরিদুর রহমান রেজার কাছে প্রায় ৯০ লাখ টাকার বিনিময়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়।বর্তমানে সেখানে তিনতলা রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে।এ বিষয়ে সমবায় ব্যাংকের সাবেক পরিচালক হোসেন জোমাদ্দার বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা পাইনি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপনিবন্ধক মোহাম্মদ মোস্তফা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তৎকালীন বরিশাল সিটি মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহর চাপে ভবন নির্মাণের বাধ্য করেছিলেন। স্বৈরশাসক আওয়ামীলীগ এখন ক্ষমতা নেই তবে কেন সমবায় ব্যাংকের সম্পত্তি ফিরিয়ে আনছেন না? তখন তিনি ফোন কেটে দেন।এদিকে সমবায় ব্যাংকের সম্পত্তি দখল করে রাখা হয়েছে, যা ফিরিয়ে আনার দাবি জোরদার করেছেন বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ ।
দখলে সমবায় কর্মকর্তারা জড়িত:
বরিশাল সমবায় ব্যাংকের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে নাজেমস রেষ্টুরেন্ট।জমি সমবায় অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীন বরিশাল সমবায় ব্যাংকের। ৩২ শতাংশ জমির আংশিক দখল করে তিন তলা ভবন নির্মান করে নাজেমস বিরিয়ানী নামক রেস্তোঁরার মালিকের কাছে অর্ধকোটি টাকা জামানতে মাসিক ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে। সমবায় অধিদপ্তরের নাকের ডগায় দখল হলেও তারা চিঠি চালাচালীতে ব্যস্ত।উদ্ধারে নেই কোন তৎপরতা ।একসময়, উদ্যোক্তা ও কৃষক পর্যায়ে ঋণ দেয়া 'বরিশাল সমবায় ব্যাংক' ২৩ বছর ধরে বন্ধ।
ব্যাংকটির জমি ও ভবন দখলে বরিশাল বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মোহাম্মদ মোস্তফা,সমবায় অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অফিসের সাবেক উপ-নিবন্ধক (বিচার) মোঃ রবিউল ইসলাম,বরিশাল জেলা সমবায় অফিসের সাবেক জেলা সমবায় অফিসার প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী,সমবায় কর্মকর্তা মাহফুজ ও মোঃ আমিনুল ইসলামের যোগসাজসে এ জমিতে ভবন নির্মান করা হয়।সুত্র জানায় দখলে সহযোগীতা করায় সমবায় কর্মকর্তারা পেয়েছেন প্রায় ঘুষ ।
তদন্ত প্রতিবেদন, দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি সমবায় অধিদপ্তর:
সমবায় ব্যাংক বরিশালের অবস্থা সম্পর্কে বরিশাল সদর উপজেলা সমবায় অফিসার লতিফা আকতার একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।তদন্ত প্রতিবেদনটি শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিকট পাঠানো হয়।তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সমবায় অধিদপ্তর। ,বরিশাল বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মোহাম্মদ মোস্তফার অদৃশ্য ইশারায় বেদখল হওয়া সমবায় ব্যাংক বরিশালের বত্রিশ শতাংশ জমি ও ভবন উদ্ধারে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি সমবায় অধিদপ্তর,বরিশাল বিভাগীয় ,জেলা ও উপজেলা সমবায় অফিস।সমবায় ব্যাংকের জমিতে নতুন ভবন নির্মানে সমবায় অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই। এ ছাড়া সমবায় ব্যাংকের জমিতে নতুন ভবনে রেস্তোঁরা ভাড়ার বিষয় সমবায় অধিদপ্তর এর কোন অনুমোদন নেই।
রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোন কমিটি :
বরিশালে ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমবায় ব্যাংক। এই ব্যাংকটির নিজস্ব জমির পরিমাণ প্রায় ৩৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের কেউ এখন বেঁচে নেই। ২০০১ সাল থেকে সমবায় ব্যাংকের ঋণ দেয়াও বন্ধ। নেই কোনো কার্যক্রম। এতবড় একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক পদে একজন কর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। অরক্ষিত এ সম্পদে অনেকেরই লোলুপদৃষ্টি। সমবায় ব্যাংকের হিসাবরক্ষক দেলোয়ার হোসেন বাবুল বলেন, ‘খুব বিপদের মধ্যে আছি। বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্তা করছে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বগুড়া রোডে সমবায় ব্যাংকটির অবস্থান। এখানে ১১১ বছরের পুরাতন একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। কিন্তু এই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোন কমিটি ও যোগ্য কর্মকর্তা। এই সুযোগে ব্যাংকের জমিতে স্থায়ী ভবন নির্মাণ করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে একটি পক্ষ। সবকিছু অনিয়মে করা হয়েছে বলে দাবি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার। বরিশাল সদরের উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা লতিফা আক্তার বলেন, ‘সমবায় ব্যাংকের জমিতে যে ভবন করা হয়েছে তা সঠিক নিয়মে করা হয়নি। সব কিছুই অত্র কার্যালয়ের অগোচরে করা হয়েছে।
ভবন ও জমি সরকারের,আয় ভারতীয় নাগরিক টুটুলের :
বরিশাল সমবায় ব্যাংকের জমি সমবায়ের জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় ভারতীয় নাগরিক নিরব হোসেন টুটুল দখলে নিয়ে ভবন নির্মান করে ভাড়া দিয়েছেন নাজেমস বিরিয়ানী নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। জমি সমবায় অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীন বরিশাল সমবায় ব্যাংকের হলেও ভবনের ভাড়া থেকে বঞ্চিত সরকার।৩২ শতাংশ জমির আংশিক দখল করে তিন তলা ভবন নির্মান করে নাজেমস বিরিয়ানী নামক রেস্তোঁরার মালিকের কাছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা জামানতে মাসিক ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের পুরাতন ভবনকে নাজেমস প্রতিষ্ঠান রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন।সমবায় অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের যোগসাজসে দখল হওয়ায় চিঠি আর তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বেদখল হওয়া সমবায় ব্যাংকের জমি ও ভবন উদ্ধারের কাজ।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত