বাংলাদেশ ঢাকা

জাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলসহ ৫ প্যানেলের বর্জন,অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ

179672 Untitled 25
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, ভোট ও ফল বর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। ৩৩ বছর পর হওয়া এই নির্বাচনে অভিযোগ উঠেছে নানা অনিয়মের। ছিল নানা বিশৃঙ্খলা। ভোটারের আঙ্গুলে কালি ব্যবহার না করা, কালি ব্যবহার করা হলেও তা উঠে যাওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। জালিয়াতির নানা অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছে ছাত্রদলসহ ৫টি প্যানেল। ভোট চলাকালে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল সমর্থিত ‘সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ পরিষদ’ প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ‘সংশপ্তক পর্ষদ’। ভোট শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট এলাকায় ফল বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল সমর্থিত সমপ্রীতির ঐক্য, সংশপ্তক পর্ষদ, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ, সজীব আহমেদ জেনিচের ফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। ভোট ও ফল বর্জনের বাইরে ছিল শিবিরের সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন।

সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কয়েকটি হলে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, পোলিং এজেন্ট না আসা এবং টেবিল, এটেনডেন্স শিট তৈরি করতে দেরি হয়ে যায়। প্রথমে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারদের সংখ্যা। ভোট দেয়া একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ বলেন, জীবনে প্রথম ভোট দিলাম। খুবই আনন্দিত। কোনো চাপ অনুভব করিনি। তবে ব্রেইল পদ্ধতি না থাকায় সমস্যায় পড়েন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। দর্শন বিভাগের জন্মান্ধ শিক্ষার্থী আইয়ুব আলী বলেন, প্রথম ভোট দিলাম- অভিজ্ঞতা ভালো। ফ্রেন্ডকে নিয়ে এসেছি। আমি বলেছি সে ভোট দিয়েছে। কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। ভালো ভাবেই দিয়েছি। আমরা প্রশাসনকে ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। তারা তা করেননি; সঙ্গে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে আনতে বলেছে। সমস্যা হয়নি- তবে ব্রেইল হলে ভালো হতো।

ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। প্রতিটি পয়েন্টে তারা সতর্ক পাহারায় ছিলেন। বহিরাগতদের প্রবেশ করতে দেননি। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ দোকানগুলো ছিল বন্ধ।
সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে প্রায় ২৫ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন ভোট দেয়া শিক্ষার্থীদের কালি ব্যবহার করা হচ্ছে না। অনার্সের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে ছবি ও প্রশাসনের কারও নাম্বার নাই। যার কারণে ভুয়া ভোট দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যা থেকে শুরু হয় উত্তেজনা। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার আশ্বাসে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। নির্বাচনের সময় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে দুপুরের দিকে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসানসহ সংগঠনের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী হঠাৎ হলে প্রবেশ করে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় হলে তীব্র হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা হল কর্তৃপক্ষকে জানালে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভোট দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া নন-রিমুভাল কালি মুছে যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা হলে কর্তৃপক্ষকে জানান। এ সময় নতুন কালি না আসা পর্যন্ত ভোট স্থগিত থাকে। ওই সময় শেখ সাদী হাসানের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রদল নেতা হলে প্রবেশ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারা নারী হলে অনুপ্রবেশের কারণ জানতে চান এবং বাইরে চলে যেতে অনুরোধ করেন। এ সময় হট্টগোলের পরিস্থিতি তৈরি হলে হলটির প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলি এসে শেখ সাদী হাসানসহ উপস্থিত অন্যদের হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
হলের প্রাধ্যক্ষ শামীমা নাসরীন জলি বলেন, ভোটারদের হাতে দেয়া নন-রিমুভাল কালি মুছে যাচ্ছিল বলে আমরা সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখি। নতুন কালি এলে ভোট আবার শুরু হবে। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কয়েকজন ভেতরে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। ভোট জালিয়াতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ ছাড়াও শহীদ রফিক জব্বার হলে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ভোট দিতে এসে দেখি ভোটার শিটে আমার নামের জায়গায় অন্য কেউ স্বাক্ষর করে ভোট দিয়ে চলে গেছে।
দুপুর ২টার দিকে পুরনো রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিবির সমর্থিত ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুল্লাহ বলেন, বুধবার থেকেই আমরা দেখছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

ব্যালট পেপার ও ওএমআর শিট জামায়াতঘেঁষা প্রতিষ্ঠানে ছাপানো হয়েছে- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এইচআরসফট বিডি নামের যে প্রতিষ্ঠানটি ছাপার কাজ করেছে, সেটি পরিচালনা করেন রকমনুর জামান রনি, যিনি বিএনপি সমর্থক। তার ফেসবুক প্রোফাইলে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও অন্যান্য বিএনপি নেতার ছবি রয়েছে। তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।
অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নিয়েও অভিযোগ তোলেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা জানতাম অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ব্যালট ছাপানো হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল এগুলো সিল করে রাখা হোক এবং ভোটার সংখ্যার সমান ব্যালটই প্রত্যেক হলে দেয়া হোক। কিন্তু আজ আমরা অনেক হলে অতিরিক্ত ব্যালট পেয়েছি। এটা কমিশনের প্রস্তুতির ঘাটতির পরিষ্কার প্রমাণ।

বেলা ৪টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ সময় প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। তানজিলা হোসাইন বৈশাখী বলেন, ‘আমাদের বিজয় ব্যাহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের রায়ের সত্যিকার প্রতিফলন ঘটছে না। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর ৯টি কারণ দেখিয়ে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল। সেগুলো হলো ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে না দেয়া, প্রার্থীদেরকে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেয়া হয়নি, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোটগ্রহণকালে শিবির সমর্থিত প্যানেল ভোটারদের হাতে লিফলেট বিতরণ করে, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে জাল ভোট দেয়া ও ভিপি প্রার্থীকে হেনস্থার শিকার করা, কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় একটি মহল ভোট কারচুপির মহোৎসবে মেতেছে, কিছু কেন্দ্রের ভোটার অনুপাতে বুথের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোটারদের ভোগান্তি হচ্ছে, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে অমোছনীয় কালি ব্যবহার না করায় একই ব্যক্তি একাধিক ভোট প্রদান করতে পারছে, ভোটার তালিকায় প্রার্থীদের ছবি না থাকায় একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দিচ্ছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদে তিনজন কার্যকরী সদস্যকে ভোট দেয়ার কথা থাকলেও ব্যালটে একজনের নাম উল্লেখ ছিল।

ছাত্রদলের ভোট বর্জনের পর শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী মাজহার ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। নানারকম অপপ্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের বিপক্ষে নানা ফাঁদ পেতেছে। এরপর যদি তারা মনে করে তাদের থাকা উচিত না এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এটা তারা করতেই পারে। শিক্ষার্থীরা যদি আমাদের মেনে না নেয় সেটাও আমরা মেনে নেবো।

জালভোট ও ভোটারের অতিরিক্ত ব্যালট কেন্দ্রে পাঠানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় সংশপ্তক পর্ষদ। নির্বাচনের দিন বিকাল ৫টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফল বর্জনের ঘোষণা দেয় সমপ্রীতির ঐক্য, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ, সজীব আহমেদ জেনিচের ফ্রন্টের আংশিক প্যানেল।
এরপরই প্রক্টর অফিসের সামনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী তিন শিক্ষক। তারা হলেন, নজরুল ইসলাম, নাহরীন ইসলাম, শামীমা সুলতানা লাকী। বাংলা বিভাগের শিক্ষক শামীমা সুলতানা লাকী বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের আশা সুন্দর নির্বাচন হবে। সেটি আমরা দেখতে পাইনি। বুধবার রাত থেকে আপনারা দেখেছেন নির্বাচন কমিশন কতোটা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যালট বাক্স পাঠানোর কথা ছিল তা পাঠানো হয় নাই। তারা জাকসুকে খুব হালকাভাবে নিয়েছে। ব্যালট বাক্স সিল মেরে ঢুকিয়ে রাখলেও প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। আমি জাহানারা হলে ছিলাম যে কলম, মার্কার ব্যবহার করা হয়েছে সেটার কালি বেশি সময় ছিল না।

তিনি বলেন, ঘটনাগুলো পরম্পরায় ঘটার কারণে এই নির্বাচন বর্জনের পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছি। মনিটরিংয়ের সময় নতুন নতুন ভোটার তৈরি করা হচ্ছে। কেন ভোটারদের আপডেট শিক্ষার্থীদের সামনে দেবে না। এখানে নানান ধরনের অনিয়ম তৈরি হচ্ছে। কেন অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো হলো এটার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য ছিল।

এদিকে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানোর ঘটনাও ঘটে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, মোট প্রার্থীর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানোর ফলে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি বা কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে বলেও দাবি জানান প্রার্থীরা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানোর ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তারা মনে করে ব্যালট পেপার নষ্ট হতে পারে সেজন্য তারা অতিরিক্ত হিসেবে ১০ শতাংশ ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.