ইত্তেহাদ স্পেশাল

আবারও দুর্নীতিবাজদের হাতে রেড ক্রিসেন্ট

red
print news

শীর্ষনিউজ: অবশেষে লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে হাতেনাতে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও তিনি একই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা কমিটিকে রেড ক্রিসেন্টের ম্যানেজিং বোর্ডের এডহক কমিটিতে পুনঃনিয়োগ দিতে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। অবশেষে তিনি সক্ষম হলেন। গত বেশ কিছুদিন ধরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে দেনদরবার চলছিল। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো ম্যানেজিং বোর্ডের এডহক কমিটিকে পুনঃনিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ নেই। তাছাড়া গত মে মাসে রেড ক্রিসেন্টে দুদকের অভিযানে হাতেনাতে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত ১৮ মে রেড ক্রিসেন্টের মগবাজারস্থ প্রধান কার্যালয়ে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়ন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে অভিযানটি চালানো হয়। ওই সময় ম্যানেজিং বোর্ডের এডহক কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বহুল আলোচিত মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীও। তুহিন ফারাবীর বিরুদ্ধে বদলি, পদায়ন ও তদবির বাণিজ্যসহ ৩২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রেড ক্রিসেন্টের ম্যানেজিং বোর্ডে বহাল থেকে এখানে বসেই নানা অনিয়ম-অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দুদকের অভিযানের পর থেকে ফারাবীকে ম্যানেজিং বোর্ডের সদস্য পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে তুহিন ফারাবীকে সরিয়ে দেয়া হলেও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বর্তমান ট্রেজারার আমিনুল ইসলাম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ম্যানেজিং বোর্ড সদস্য ডা. মাহমুদা আলম মিতু, পরিচালক ইমাম জাফর সিকদার এবং দুর্নীতির হোতা যিনি, চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বহাল থেকে যান। এই চেয়ারম্যানই মূলতঃ অন্যদের দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়ে মাঝ থেকে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণেই মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন এই কমিটিকে নতুন করে দায়িত্ব না দেয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে মন্ত্রণালয়কে বলা হচ্ছিল। কিন্তু দুর্নীতিবাজ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এই কমিটিকে পুনঃনিয়োগ দেয়ার জন্য শুরু থেকেই মরিয়া হয়ে উঠেন। অবশেষে তিনি সফল হয়েছেন। রেড ক্রিসেন্টের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে গত ১১ সেপ্টেম্বর আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আগের এডহক কমিটিকে পুনঃনিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছেন, যদিও মন্ত্রণালয়ের অন্যরা এ নিয়োগের পক্ষে ছিলেন না। গত ৪ সেপ্টেম্বর এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এর বেশ আগে থেকেই ম্যানেজিং বোর্ডের নতুন কমিটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেন-দরবার চলে আসছিল। মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির পুনঃনিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ছাড়া অন্যরা সবাই।
এর আগে গত ৫ মার্চ এই কমিটিকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। নিয়োগ পাওয়ার পরই চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামসহ অন্যরা আখের গোছানোর কাজে নেমে পড়েন। ছয় মাসের এই কমিটিতে চেয়ারম্যান পদে থেকে মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুল ইসলাম লাগামহীনভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অফিসের গাড়ি ব্যবহার করে প্রতিদিন তিনি আর্মি গলফ ক্লাব, মিরপুর-১৪-এর প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে যাচ্ছেন। এর তেল খরচ রেড ক্রিসেন্টকে বহন করতে হচ্ছে। নিজের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত ট্যুরের জন্য অফিসের গাড়ি ব্যবহার করে শ্রীপুর (গাজীপুর), ময়মনসিংহসহ অন্যান্য এলাকায় যাওয়া-আসা করছেন। এর তেল খরচও রেড ক্রিসেন্টকে বহন করতে হচ্ছে। গত রমজানে চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দকৃত অসহায় দুঃস্থদের প্রতি জনের ২০০০ টাকার ইফতারের প্যাকেজ কতজন গরিব দুঃস্থদের দিয়েছেন এর হিসাব-নিকাশেও গরমিল রয়েছে। পরিবারসহ কক্সবাজারে ভ্রমণ, প্লেন ভাড়া, বিলাসবহুল হোটেলে থাকা এবং খাওয়ার সব খরচের টাকা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে নিয়েছেন তিনি। জেনেভা সফরের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু এটি আদতে সংস্থাটির কোনো কাজে আসেনি। অসহায় ও দুঃস্থ সহায়তার নামে চেয়ারম্যানের হাতে থাকা ১৫ লক্ষ টাকার ফান্ড খরচ করা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যেখানে গঠনতন্ত্রে (চঙ-২৬) বলা আছে সোসাইটির বোর্ড মিটিং তিন মাসে একবার করতে হবে সেখানে চেয়ারম্যান প্রতি মাসে দু’বার মিটিং করেছেন। প্রত্যেক মিটিংয়ে নিজের ও বোর্ড সদস্যদের প্রত্যেকের সম্মানী ২০ হাজার টাকাসহ রাজকীয় খাওয়া-দাওয়ার খরচ বাবদ উল্লেখযোগ্য অর্থ ব্যয় করেছেন অবৈধভাবে। প্রতিদিন ট্রেনিং ডিপার্টমেন্টের কিচেন থেকে নিজের পোষ্যসহ লাঞ্চ ও খানাপিনা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ট্রেনিং ও সেমিনারে অংশগ্রহণের পকেট মানি ১০ হাজার টাকা, ফিল্ড ভিজিটের নামে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী ভাতা নিচ্ছেন, যেগুলো নিয়মের মধ্যে পড়ে না।
চেয়ারম্যানের এসব অনিয়মের সুযোগ নিচ্ছেন অন্যরাও। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থাকাকালে তুহিন ফারাবী রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ম্যানেজিং বোর্ড সদস্য হিসেবে প্রথম পর্যায়ে তিন মাস এবং পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ৬ মাসের জন্য নিয়োগ পান। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতেও দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বদলি, চুক্তিভিত্তিক চাকরি থেকে নিয়মিতকরণ, পদোন্নতি, পদায়ন, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য করেছেন। অন্যদিকে, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বর্তমান ট্রেজারার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বর্তমান ম্যানেজিং বোর্ড সদস্য ডা. মাহমুদা আলম মিতু এবং পরিচালক ইমাম জাফর শিকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়ন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিও পদে পদায়ন পাওয়ার পর রেড ক্রিসেন্টের ম্যানেজিং বোর্ডের সদস্য হয়েই তুহিন ফারাবী সোসাইটির পরিচালক ইমাম জাফর শিকদারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সোসাইটির মহাসচিব ড. কবীর মোহম্মদ আশরাফ, এইচআর বিভাগের কো-অর্ডিনেটর মো. নিজাম উদ্দিন, চেয়ারম্যানের বর্তমান পিএস আসিফ আলমাজ এবং লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্সের আইনজীবী খোরশেদ আলম সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তুহিন ফারাবী তার নিজের প্রভাব খাটিয়ে বন্ধু এবং ব্যবসায়িক অংশীদার মুনতাসীর মামুনকে নিয়মনীতি না মেনেই সরাসরি উপপরিচালক পদে যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগে নিয়োগ দেন। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে সোসাইটির ট্রেজারার নিয়োগ দেন। তুহিন ফারাবী ছাড়া অভিযুক্ত বাকিরা এখনো সোসাইটিতে রয়েছেন বহাল-তবিয়তে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.