এনআইডি থেকে পাসপোর্ট, সবখানেই টিউলিপ এখনো বাংলাদেশি:দ্য টাইমস ও প্রথম আলো যৌথ অনুসন্ধান


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির প্রভাবশালী এমপি ও শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক দাবি করে আসছেন, তিনি কেবলই ব্রিটিশ নাগরিক। তবে অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে, তাঁর নামে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছিল। এ নিয়ে ২৪০ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস ও প্রথম আলো যৌথভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
নথি অনুযায়ী, টিউলিপের নামে প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু হয় ২০০১ সালে, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯। পরে ২০১১ সালে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে দ্বিতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যায়, সেই সময় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। একই বছরে টিউলিপের এনআইডিও তৈরি হয়, যেখানে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয় ধানমন্ডির শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদন। এনআইডির তথ্যভান্ডারে তাঁর ভোটার তালিকার পাশাপাশি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বরও সংরক্ষিত রয়েছে। তবে জন্মস্থান নিয়ে অসঙ্গতি দেখা যায়—এনআইডিতে ঢাকা লেখা হলেও পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ আছে লন্ডন।
টিউলিপ সবসময়ই নিজেকে একমাত্র ব্রিটিশ নাগরিক বলে দাবি করে এসেছেন। ২০১৭ সালে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি সরাসরি বলেন, তিনি ব্রিটিশ এমপি এবং বাংলাদেশি নন। ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁর আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও জানায়, তিনি কখনো বাংলাদেশি এনআইডি বা পাসপোর্ট পাননি। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকারি নথি বলছে, টিউলিপ নাগরিকত্ব ত্যাগের কোনো আবেদন করেননি। আইন অনুযায়ী যাঁদের এনআইডি ও পাসপোর্ট আছে, তাঁরা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হন। যেহেতু বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশেই দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত, তাই তাঁর দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুযোগ ছিল। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিকের মতে, দ্বৈত নাগরিকত্বে আইনি জটিলতা নেই, তবে সমস্যা হচ্ছে টিউলিপ নিজেই বিষয়টি অস্বীকার করছেন, যা অসত্য প্রমাণিত হচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের দাবি, তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এরই মধ্যে চারটি মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে এবং আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে। নথিতে দেখা যায়, ২০১১ সালে তিনি ঢাকায় সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেন, একই বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে শেখ হাসিনার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যান এবং ২০১৩ সালে মস্কো সফরে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া লন্ডনে আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্ত এক ব্যবসায়ীর সহায়তায় ফ্ল্যাটে থাকার বিষয়েও তাঁর নাম বিতর্কে আসে।
এর আগে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ফলে দ্বৈত নাগরিকত্বের এই জটিলতা বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনেও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।