আমতলীতে মাদরাসার সকল খাবার খেয়ে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের শোকজ বিএনপির


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : দেশব্যাপী আলোচিত বিএনপির নেতাকর্মী-কর্মীদের দাওয়াত না দেওয়ায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের আয়োজন করা সকল খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আমতলী উপজেলার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি ও সদস্য সচিব তুহিন মৃধা স্বাক্ষরিত এক পত্রে গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও ওয়ার্ডের সভাপতি মাহবুব কাজীকে এ নোটিশ দেওয়া হয়।
ওই নোটিশে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে মাহবুব কাজীকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিয়া মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গত ৪ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়। আমতলী সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. ফজলুল হককে কমিটির সভাপতি করা হয়। ওই কমিটির প্রথম সভা গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সভা উপলক্ষ্যে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য ওইদিন দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আলী হোসেনের অভিযোগ কমিটি গঠনের আগে ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন তাকে কমিটির সভাপতি করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তাকে সভাপতি না করায় ক্ষুব্ধ হন তিনি।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই তিনি তার সহযোগী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মাহবুব কাজী ও ইউনিয়ন শ্রমিক দল সভাপতি রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ নেতাকর্মী পাঠিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের আয়োজিত খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলেছেন। পরে তারা শিক্ষক, কর্মচারী ও সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের হুমকি দিয়ে চলে যান এমন অভিযোগ শিক্ষকদের। তাদের ভয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত গুলিশাখালী ইউনিয়ন শ্রমিক দল সভাপতি রিপন কাজী তার ফেইসবুক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ ছবি দিয়ে পোস্ট করেন ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদ্রাসায় পিকনিকের কিছু স্মৃতি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ঘটনার চার দিন পর বিভিন্ন পত্রিকায় খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে গেলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা এমন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে।
এ ঘটনার ধামাচাপা দিতে বুধবার বিকেলে ঘটনার অন্তরালে কলকাঠি নারা গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন ও বিএনপি নেতা ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফারুক আকন মাদ্রাসায় সালিশ বৈঠকে বসেন।
ওই বৈঠকে তারা মাদরাসার অধ্যক্ষকে মিলে মিশে থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু মাদরাসার অধ্যক্ষ তাদের সিধান্ত না মেনে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মো. জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি ও সদস্য সচিব তুহিন মৃধা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাহবুব কাজীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মিজানুর মাদবর বলেন, গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের দাওয়াত না দেয়ায় কারন রিপন হাজী ফোনে জানতে চান। পরে মাহবুব কাজী, রিপন কাজী, মিজানুর, নাশির মৃধা, সুমন কাজী, সাইদুল মাদবর, সফিক মৃধা ও জলিল ঘরামীসহ ৩০-৩৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী এসে খাবার খেয়ে এবং নষ্ট করে যান।
তিনি আরও বলেন, অবশিষ্ট খাবার অতিথিরা যাতে খেতে না পারে তার জন্য খাবারের পাতিলে টিস্যু, উচ্ছিষ্ট খাবার ও নোংড়া পানি ফেলে রাখেন তারা।গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মাহবুব কাজী বলেন, আমি কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ পাইনি। তবে মৌখিকখভাবে নোটিশের কথা শুনেছি।
ন.ম.ম আমজাদিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আলী হোসেন বলেন, কমিটি গঠনের আগে ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন তাকে কমিটির সভাপতি করতে নির্দেশ দেয়।
কিন্তু নানাবিধ কারণে তাকে সভাপতি করা হয়নি। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হন।এর প্রতিশোধ নিতেই তিনি তার সহযোগী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মাহবুব কাজী ও ইউনিয়ন শ্রমিক দল সভাপতি ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ নেতাকর্মী পাঠিয়ে অতিথির জন্য আয়োজিত খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলেন।
তিনি আরও বলেন, গত বুধবার অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক আকন মাদরাসায় এসে সালিশ বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে তিনি (জসিম) আমাকে কিছুই ঘটেনি মর্মে ভিডিওতে বক্তব্য দিতে বলেন কিন্তু আমি তা না দিয়ে আসরের নামাজ পড়তে চলে যাই।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি মো. ফজলুল হক আমাকে মাদরাসার ঝামেলার নিরসনে যেতে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে মাদরাসায় গিয়েছি।আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা বলেন, মাহবুব কাজী একটি মাদরাসায় বিশৃঙ্খলা করে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, গুলিশাখালী ইউনিয়নে লিখিত কোন কমিটি দেওয়া হয়নি। তবে বর্ধিত সভায় মাহবুব কাজী সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।
ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়কের সালিশ বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ উপেক্ষা করে তার এমন কাজ করা ঠিক হয়নি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।