গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের আশঙ্কা ,ইসরাইলি ৪৮ জিম্মির ছবি প্রকাশ করল হামাস


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : গাজা সিটির আধুনিক ও সমৃদ্ধ একটি এলাকায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে একটি ফ্ল্যাটের জন্য ধারাবাহিকভাবে অর্থ পরিশোধ করে আসছিলেন ফিলিস্তিনি ব্যাংক কর্মী শাদি সালামা আল-রাইয়েস।
৯৩ হাজার ডলারের মর্টগেজ ছিল তার ফ্ল্যাটের। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় তাদের ভবনটি ধুলোর স্তুপে পরিণত হয়েছে। মূলত গাজা শহরে এখন লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বহুতল ভবনগুলোকে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৫০টি টাওয়ার ধ্বংস করা হয়েছে।এই ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (ওএইচসিএইচআর)। সংস্থার মুখপাত্র থামিন আল-খিতান বলেন, এই ধরণের পরিকল্পিত জনসংখ্যা স্থানান্তরের চেষ্টাকে জাতিগত নিধনের পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে।
শাদি আল-রাইয়েস বলেন, আমি কখনও ভাবিনি গাজা সিটি ছেড়ে যেতে হবে। কিন্তু এখন বিস্ফোরণ থামছে না। আমি আমার সন্তানদের নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। তাই দক্ষিণে চলে যাচ্ছি। তবে তিনি অঙ্গীকার করেন, গাজা চিরতরে ছেড়ে যাবেন না।ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ এর আগেই বলেছিলেন, গাজার অধিকাংশ অংশ শিগগিরই সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে এবং জনগণকে সীমান্তবর্তী একটি সংকীর্ণ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ রাখা হবে।
ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজা সিটির বাসিন্দাদের শহর ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে এবং উত্তর গাজা সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে খাদ্য সরবরাহ আরও সীমিত হয়ে পড়েছে।
গাজা সিটি সম্পূর্ণ ফাঁকা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইসরাইলি বাহিনী। হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দিনের পর দিন। বর্বর ইসরাইল সেনা-বিমানবাহিনী অবিরাম গোলাবর্ষণ আর বোমা বিস্ফোরণে ভূমিকম্পের মতোই কাঁপতে থাকে গাজা। রাত নামলেই সেই আতঙ্কে ওঠা ‘ভূমিকম্প’-এর তীব্রতা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আলজাজিরা।
গাজা সিটির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি রাত যেন ভূমিকম্পের মতো কাঁপতে থাকে। কারণ, ইসরাইলি সেনারা দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক ব্যবহার করে একের পর এক বাড়ি ও আবাসিক ভবন উড়িয়ে দিচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেনারা তাদের সামনে কোনো বিকল্প রাখেনি। চারদিক থেকে অবিরাম কামানের গোলা আর কুয়াডকপ্টারের হামলার মুখে বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ছাড়ছেন তারা। বেশিরভাগ বাসিন্দাই হেঁটে ছুটছেন দক্ষিণের দিকে। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দেশ পর্তুগাল।
রোববার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ভিডিওর মাধ্যমে ভাষণ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এ লক্ষ্যে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত এক ভোটাভুটিতে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। এর ফলে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব নেতাদের বার্ষিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আব্বাস ভিডিওর মাধ্যমে অংশ নিতে পারবেন।
গাজা সিটিতে ইসরাইলি বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমণের মধ্যে হামাসের কাসাম ব্রিগেড ৪৮ ইসরাইলি বন্দির একটি সম্মিলিত ছবি প্রকাশ করেছে। শনিবার অনলাইনে প্রকাশিত ছবিটিতে জীবিত ও মৃত সব জিম্মির মুখ দেখানো হয়েছে। প্রতিটি ছবির নিচে লেখা ছিল ‘রন আরাদ’ (১৯৮৬ সালে লেবাননে নিখোঁজ হওয়া এক ইসরাইলি বিমান কর্মকর্তার নাম, যার ভাগ্য আজও অজানা)। হামাস এটিকে ‘বিদায়ের ছবি’ হিসাবে উল্লেখ করেছে। গোষ্ঠীটি বলেছে, গাজা শহরে ইসরাইলের চলমান সামরিক অভিযানের কারণে এই বন্দিদের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। ছবির সঙ্গে একটি বার্তাও প্রকাশ করেছে হামাস। বার্তায় বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর অস্বীকৃতি এবং গাজা শহরে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ায় এই ‘বিদায়’-এর ছবি প্রকাশ করা হলো। হামাস আগেও সতর্ক করেছিল, গাজা সিটিতে ইসরাইলের আক্রমণ বন্দিদের জীবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তারা দাবি করেছে, ইসরাইলি বন্দিদের শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।