বাংলাদেশ ঢাকা নির্বাচিত সংবাদ

জোট হলেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে কেউ খুশি, কেউ ক্ষুব্ধ

নির্বাচন কমিশন ভবন
print news

বিবিসি : বাংলাদেশের নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজের দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে বলে আইনের যে খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় এই বিধান আনা হয়েছে।

বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য কমিশনকে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছে। একটি দলের দাবি, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে টার্গেট করেই এমন নিয়ম করা হয়েছে’।

আবার বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বলছে- আরপিওতে প্রতীক সংক্রান্ত নতুন নিয়ম তারা সমর্থন করছেন, কারণ তারা মনে করছে এর মাধ্যমে জোটবদ্ধ হলেও দলগুলো স্বতন্ত্র পরিচয় নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।

তবে একজন নির্বাচন কমিশনার বিবিসিকে বলেছেন যে, যেহেতু সরকারও তাদের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, সেহেতু আপাতত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো চিন্তা তাদের নেই।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় প্রতীকের বিষয়টি না এলেও সরকার কর্তৃক গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকেই নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে।

ওই কমিশনের একজন সদস্য আব্দুল আলিম  বলেছেন, ছোট দলগুলোকে নিয়ে একতরফা নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা কিংবা বড় দলগুলোকে ব্যবহার করে ছোট দলের সুবিধা নেওয়ার যে চর্চা, গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে নতুন ব্যবস্থা তার অবসান ঘটাতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীক। যদিও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক এখন ইসির তালিকায় স্থগিত
ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীক। যদিও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক এখন ইসির তালিকায় স্থগিত
কী পরিবর্তন আনা হয়েছে?

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুমোদিত হয়েছে।

ওই বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরপিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, নতুন নির্বাচনী জোট হলে জোটের অংশ হলেও দলের যে প্রতীক, তা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে।

এর আগে জোটবদ্ধ হয়ে দলগুলো জোটের প্রতীক এবং নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পেতো। কিন্তু নতুন খসড়া অধ্যাদেশ আকারে জারি হওয়ার পর জোটভুক্ত হলেও দলগুলোকে নিজেদের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থেকেও জাতীয় পার্টি তাদের লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করেছিলো। আবার ওই নির্বাচনসহ ২০২৪ পর্যন্ত পরের সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি ও হাসানুল হক ইনুর জাসদের প্রার্থীরা।

আবার ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটে থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলো। তবে জামায়াত ইসলামী সেই নির্বাচনে তাদের দলীয় দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো।

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

এতোদিন জোটবদ্ধ দলগুলো নিজেরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানাতো যে তারা জোটের প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। আবার জোট থেকেও প্রতীক নিয়ে একটি চিঠি কমিশনকে দেয়া হতো।

ফলে জোটের প্রতীক নিয়ে যেমন নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেতো, তেমনি জোটবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলো।

কিন্তু বৃহস্পতিবার আরপিও সংশোধনীসহ যে খসড়া অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে – জোটবদ্ধ হলেও নিজেদের দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে।

বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ  বলেছেন, এটি সংশোধনের জন্য শিগগিরই নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবেন তারা।

“জোট ও ভোট করতে রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে তো আলোচনা হয়নি। আশা করি নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের ব্যবস্থা করবেন,” বলছিলেন তিনি।

বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে যারা পলাতক রয়েছেন, তারাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, এমন বিধানও যুক্ত করা হয়েছে এই সংশোধনীতে।

নতুন বিধানের কারণ কী

নির্বাচন কমিশনার আব্দুল রহমানেল মাছউদ  বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে।

“এটি সরকারও গ্রহণ করেছে। তাই এখন আর ভিন্ন কোনো চিন্তা আমরা করছি না,” বলছিলেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করেছিলো। সেই কমিশন তাদের রিপোর্টে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিধান করার সুপারিশ করেছে।

সুপারিশটির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে কমিশনের একজন সদস্য আব্দুল আলীম বলেছেন, ছোটো দলগুলো অনেক ক্ষেত্রে বড় দলগুলোকে ব্যবহার করে, আবার ছোটো দল সাথে নিয়ে অনেক সময় একতরফা নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

“তাছাড়া একটা দলের নিজস্ব আদর্শ, গঠনতন্ত্র, প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছ যাবে বলেই তারা কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন ও প্রতীক নেয়। কিন্তু বড় দলের প্রতীকে করলে সেটা হয় না,” বলছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সময়ে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের পোস্টারে আওয়ামী লীগ নেতার ছবি ব্যবহার এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ছোটো কিছু দলকে নির্বাচনে এনে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।

এসব প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মি. আলীম বলেছেন, “নিজেদের প্রতীক দিয়ে ছোটো দলকে নির্বাচনে এনে সার্টিফিকেট নেয়ার চেষ্টা করে ক্ষমতাসীনরা, যা বন্ধ হওয়া দরকার”।

এছাড়া অনেকেই মনে করেন, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সময় কোনো একটি দলের প্রতীক নিলে তাতে দলগুলোর ভোটের চিত্র লিপিবদ্ধ করা যায় না। তারা মনে করেন, যার যার প্রতীকে নির্বাচন করলে দলগুলোর ভোটের সংখ্যা যথাযথভাবে উঠে আসে।

দলগুলো কী বলছে

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী ববি হাজ্জাজের এনডিএম। তার দলীয় প্রতীক সিংহ হলেও তারা চান বিএনপির প্রতীকে অংশ নিতে।

দলটির মহাসচিব মোমেনুল আমিন বলছেন, “নির্বাচন কমিশন দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে। বিএনপির নেতৃত্বে বড় জোট হচ্ছে। এই জোটকে ঠেকানোর জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা দলের প্রেসক্রিপশনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন”।

তিনি জানান, বিএনপির মতো তারাও রবিবার নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে তাদের আপত্তি জানাবেন।

অন্যদিকে বিএনপি জোটে থেকেই নির্বাচন করবেন বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি বা বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। তার পক্ষে গুলশানে গরুর গাড়ি প্রতীক ছাপিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।

আবার নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, পরিবর্তনটা কেন আনা হয়েছে সেই ব্যাখ্যা তারা পাননি।

“জোটের প্রতীকে ভোট করলে সুবিধা হয়। আবার নিজের আইডেন্টিটি তৈরি করতে অসুবিধা। দুটো দিকই আছে। আমরা আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবো,” বলছিলেন তিনি।তিনিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে নির্বাচন করবেন বলে জনশ্রুতি আছে।

বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলছেন, তারা নিজস্ব মার্কা নিয়ে নির্বাচনের পক্ষপাতী।

“তবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এদেশে এখন একটা সংস্কৃতি হলো বড় দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করা। সেজন্য এবারের নির্বাচনে দুটোই (জোট ও দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়ার সুযোগ) থাকা উচিত। তবে বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করলে তার পাওয়া ভোট সেই দলের পক্ষে যোগ হয়। তিনি কাগজে কলমে সেই দলের এমপি হন বলে ফলে স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করা যায় না,” বলছিলেন তিনি।খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরও মনে করেন যে দলের প্রতীকেই নির্বাচন হওয়া উচিত।”দল নির্বাচন করবে দলের মার্কা নিয়ে। জোট হতে পারে কিন্তু অন্য দলের প্রতীক নিয়ে একটি দল নির্বাচন করবে কেন,” বলছিলেন তিনি।খেলাফত মজলিসসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতারা জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কিছু ধর্মভিত্তিক দল জোটবদ্ধ হওয়ার তৎপরতা চললেও নির্বাচনে তারা যার যার প্রতীক নিয়েই অংশ নিবেন।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.